ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা হলেও আটকে গেলেন দশ হাজার যাত্রী

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সৌদিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা হলেও আটকে গেলেন দশ হাজার যাত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভিসা হওয়ার পরও প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী যাত্রী আটকে গেলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে ‘বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ-২০২০’ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে হজ এজেন্সি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আজকে ২৭ তারিখে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিস জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সব দেশের ওমরাহ ভিসা ইস্যু স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিট ভিসাও। ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে।’ হাব সভাপতি বলেন, ‘আমি সকাল বেলা সৌদি দূতবাসের সঙ্গেও কথা বলেছি। যাদের ভিসা আছে তারা যেতে পারবেন কিনা বিষয়টি অস্পষ্ট। আজকে সকালে বিমানবন্দরে আমাদের যে যাত্রীরা গিয়েছেন সকলেই অপেক্ষামান আছেন, কাউকেই বোর্ডিং পাস দেয়া হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আমরা পরবর্তী ফ্লাইটের যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে রেখেছি, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা মেইলের অপেক্ষায় আছি। এটা না আসা পর্যন্ত ওনারা কাউকে যেতে দেবেন না।’ তসলিম বলেন, ‘আপাতত মনে হচ্ছে, ভিসা তো নতুন করে ইস্যু হবেই না। আর যাদের ভিসা করা আছে, তারাও যেতে পারবেন না, বলেই মনে হচ্ছে। তারা যেতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘এটা যদি হয়, আমাদের কাছে একটা হিসাব আছে। এখন প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ ভিসা করা আছে। এই ১০ হাজার ভিসার বিপরীতের প্রায় পাঁচ হাজার টিকেট কাটা আছে। পাঁচ হাজার টিকেটের মধ্যে দুই হাজার টিকেট লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের, যেগুলো নন-রিফান্ডেবল। সেখানে ৯ কোটি টাকার মতো টিকেট কাটা আছে।’ ‘ভিসাগুলোর জন্য সৌদি সরকারকে (আইবিএনের মাধ্যমে) পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। সাধারণ ক্যারিয়ারে যে তিন হাজার টিকেট কাটা আছে সেগুলোর জন্যও আর্থিক ক্ষতি হবে। আর সেখানে যে হোটেল ভাড়া করা আছে, এজন্য মূল্য আগেই পরিশোধ করতে হয়। ভিসা ফি আর হোটেল ভাড়া আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’ হাব সভাপতি বলেন, ‘সব মিলে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ইনস্ট্যান্ট ব্যয় হয়েছে, যে টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এটা এখন এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীদের ক্ষতি হবে।’ সকাল বেলা যে বিমানগুলো সৌদি আরব গেছে, সেগুলো ওমরাহ যাত্রীদের নেয়নি বলেও জানান শাহাদাত হোসাইন তসলিম। ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা ॥ করোনাভাইরাস প্রবেশ ঠেকাতে সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। সৌদি সরকারের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীরা। ভিসা ফি, হোটেল ও বিমান ভাড়া বাবদ এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা। তারা বলেন, ওমরাহর জন্য ভিসা ফি পুরোটাই চলে যায় সৌদি সরকারের তহবিলে, এ অর্থ ফেরত আনার কোন সুযোগ নেই। হোটেল ভাড়াও ফেরত পাওয়া যাবে না। বিমান ভাড়াও বড় একটি অংশ ফেরত পাওয়া যাবে না। হজ এজেন্সির এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এটা আজকে আর্লি মর্নিং করা হয়েছে। আমাদের ৫০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে।’ হাব সভাপতি বলেন, ‘সব মিলে ৪০-৫০ কোটি টাকা ইনস্ট্যান্ট ব্যয় হয়েছে, যে টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এটা এখন এজেন্সি ও ওমরাহ যাত্রীদের ক্ষতি হবে।’ সকালে যে বিমানগুলো সৌদি আরব গেছে, সেগুলো ওমরাহ যাত্রীদের নেয়নি বলেও জানান শাহাদাত হোসাইন তসলিম। তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের টিকেট নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, যাতে এই টাকাটা ফেরত দেয়া হয়। কূটনৈতিক চ্যানেলেও আমরা চেষ্টা করব।’ গালফ ট্রাভেলের মালিক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘প্রায় ৫০০ ওমরাহ ভিসা করা আছে। আজসহ (বৃহস্পতিবার) আগামী দিনগুলোতে তাদের ফ্লাইট ছিল। কিন্তু কেউই যেতে পারছে না। আমি ক্ষতির মুখে পড়ে গেলাম।’ তিনি বলেন, ওমরাহ ভিসার মেয়াদ এক মাস। এক মাসের মধ্যে খুলে দেয়া হলে হয়ত এ ভিসায় ওমরাহ করা যাবে। আবার সৌদি সরকার চাইলে পরবর্তী সময়ে এ ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েও দিতে পারবে, সবই তাদের ওপর নির্ভর করছে।’ মারওয়া ট্রাভেলের মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার কিছু ভিসা করা আছে, টিকেটও কাটা আছে। আজই আমরা আরও এক শ’ ভিসার আবেদন করার কথা। খবর শোনার পর তড়িঘড়ি করে আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’ আহসান ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘ভিসা ফি ও হোটেল ভাড়া আর হয়ত পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিমান ভাড়াটা ফেরত পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে।’
×