ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অশনি সঙ্কেত!

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অশনি সঙ্কেত!

এ এক এলাহী কাণ্ড! এক হুলস্থূল কারবার! এ শব্দগুলোর সঙ্গে এখন, ‘এক সেলফি কা-’, শব্দগুলো ব্যবহার করা যেতেই পারে। বলছিলাম সেলফির কথা। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলোর একটি হলো সেলফি। বিশ্লেষণে যাওয়ার পূর্বে এর আভিধানিক অর্থ জানা প্রয়োজন। সেলফি মানে হলো আত্মআলোকচিত্র। সুতরাং, যখন কেউ মুঠোফোনে নিজের অথবা নিজেদের আলোকচিত্র অন্য কারও সহায়তা ব্যতিরেকে একই ফ্রেমে ধারণ করে তার নামই সেলফি। এখন প্রশ্ন হলো সেলফি প্রত্যয়টি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক! এর উত্তর মেলা ঢের কঠিন কাজ। কেননা দুটি দিকে যথাক্রমে সমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা যাবে। এমত অবস্থায় বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। সেই আদিমকাল থেকে মানুষ বিনোদনপিপাসু। তবে যুগ পরম্পরায়, এ বিনোদনের স্বাদ আদিযুগ, মধ্যযুগের ধারাবাহিকতায় আধুনিক যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। আর সেলফিই হলো আধুনিক যুগের এক নবসংযোজন। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে গায়ে হলুদ, জন্মদিন, সুন্নাতে খাৎনা, বিবাহবার্ষিকী, স্কুল, কলেজ, স্টেডিয়াম, অফিস, আদালত, ব্যাংক, রাজনীতির ময়দান, ঈদ, পুজো, বড়দিন, ইত্যাদি উৎসবগুলোতে সেলফি একটি কমন ব্যাপার। আর কোন নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান ছাড়া প্রতিদিন রাস্তাঘাট মাঠে ময়দানে সেলফিবাজি। কোথায় হচ্ছে না সেলফি তা-ব। যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমনÑ ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটকসহ ইত্যাদি মাধ্যমে অবলীলায় ভাইরাল হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফিকে কেন্দ্র করে এক তুমুল প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কার সেলফি কত ভাল হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে তো সীমাহীন সেলফি গ্রুপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেখানে সেরা সেলফি বাছাই করা হয় এবং অসংখ্য লাইক ও শেয়ার লক্ষ্য করা যায় সীমাহীনভাবে। আর এই উন্মাদনায় মত্ত হয়ে কোমলমতি কিশোর কিশোরীদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। একটি সেলফির জন্য সন্তানহারা হচ্ছে অনেক বাবা-মা। সেলফির আগ্রাসন এতটাই ভয়াবহ যে, দৃশ্যমান চলন্ত ট্রেনের সামনে মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সেলফি তোলা যেন একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, ঝরে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। গত সপ্তাহে ঢাকাতে এমন এক ট্র্যাজেডি ঘটেছে। উইকিপিডিয়ার এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর ২০১১ সাল থেকে নবেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেলফি তুলতে গিয়ে সমগ্র বিশ্বে ২৫৯ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে ভারত, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের নাম রয়েছে। অধিকন্তু এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা আর এই বৈশ্বিক প্রভাব আমাদের সমাজে এসে উপচে পড়েছে। কিন্তু আমাদের একটু সচেতনতাই পারে এ সমস্যার সমাধান দিতে। প্রতিটি বাবা-মাকে অবশ্যই তাদের সন্তানদের কাউন্সেলিং করতে হবে, সন্তানদের ভেতরের নেতিবাচক বিষয়গুলো বেশি বেশি শেয়ার করতে হবে যেন সন্তানদের ভেতর আত্মোপলব্ধি ঘটে। মাওয়া থেকে
×