ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল অঞ্চলে হবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বরিশাল অঞ্চলে হবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র

রশিদ মামুন ॥ বরিশাল অঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন শুরুর পর দ্বিতীয় কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে চায় সরকার। উৎপাদন খরচ কম হওয়াতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনায় পরমাণু থেকে বিদ্যুত উৎপাদনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ প্রকাশের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়। এজন্য তিন বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। যার মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হবে। সেই হিসেবে বাকি আর চার মাস। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দক্ষিণাঞ্চলের ১৫ জেলা প্রশাসককে তারা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি খুঁজে বের করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এসব জেলার জেলা প্রশাসক যেসব জমিতে কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছিলেন সেগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। জমির প্রাপ্যতার সঙ্গে সেই জমির মাটির গঠন, সেই এলাকার ১০০ বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারী খাস জমিকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি জনবসতি এবং জমির ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এর বাইরেও প্রস্তাবিত এসব স্থানের পাশে পানির প্রাপ্যতা বিবেচনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন একটি বড় বিষয়। জমির ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বেশি হলে শুরুতেই অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয়। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য পানির প্রাপ্যতা একটি বড় বিষয়। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে পানির সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল দিয়েই প্রবাহিত নদীগুলো বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। সঙ্গত কারণে বিদ্যুত উৎপাদনে পানির সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের পানির সংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বরিশালের হিজলার চর মেঘা, বরগুনার কুমিরমারা, তালতলীর নিশানবাড়ি, পাথরঘাটার লালদিয়ার চর এছাড়া পটুয়াখালীর চর মোনাজাত, সোনারচর, মৌডুবিতে কেন্দ্র নির্মাণের উপযুক্ত স্থান খুঁজছে মন্ত্রণালয়। এর বাইরেও দক্ষিণের ১৫ জেলার অন্য জায়গাগুলোও পরিদর্শন করেছে মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, আমরা বরিশালের যে জায়গাগুলো দেখেছি সেখানেই কেন্দ্র নির্মাণের উপযুক্ত বলে মনে করছি। তবে এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের হাতে আরও চার মাস সময় রয়েছে জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করছি এর মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারব। তিনি বলেন, এখন শুধু জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা হবে। এরপর কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করার কথা। দেশের ইতিহাসে এটিই হচ্ছে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে দক্ষ জনবল প্রয়োজন একই সঙ্গে তাও তৈরি করছে সরকার। ফলে দ্বিতীয় কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে আগে থেকেই দক্ষ জনবল থাকবে। এটিকে একটি বড় সুবিধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় লোকবলও তারাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রের ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ কয়লার তুলনায় অনেক কম। এছাড়া এ ধরনের কেন্দ্রের পরিবেশ দূষণের হার নেই বললেই চলে। এছাড়া অন্য বিদ্যুত কেন্দ্রর মেয়াদ ২০ বছর হলেও একটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ৫০ বছর পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে। সেই হিসেবে একবার স্থাপন করলে অন্য বিদ্যুত কেন্দ্রের চেয়ে ৩০ বছর অতিরিক্ত সময় বিদ্যুত দিতে পারে। সঙ্গত কারণে স্থাপন ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা হিসেব করলে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র লাভজনক। স্বাধীনতার আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর সরকারের প্রচেষ্টায় এক লাখ কোটি টাকার এই প্রকল্পে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা দিতে সম্মত হয় রাশিয়া।
×