ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও সমান তালেই লড়ছে দুই দল

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এখনও সমান তালেই লড়ছে দুই দল

মিথুন আশরাফ ॥ ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া করার বৃত্ত থেকে যেন বেরই হতে পারছেন না বাংলাদেশ ফিল্ডাররা। আর স্টাম্পিং করার সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে। হাফ সেঞ্চুরিয়ান প্রিন্স মাসভাউরের দুইবার ক্যাচ ফেলা এবং সেঞ্চুরিয়ান আরভিনের স্টাম্পিং করতে না পারার বড় খেসারতই দিতে হতো। নাঈম হাসান বল হাতে স্পিন জাদু দেখানোয় রক্ষা মিলেছে। নাঈম যদি মাঝপথে ও শেষবেলায় বোলিং ভেল্কি না দেখাতেন, তাহলে আরভিন যেভাবে ভোগাতে থাকেন, তাতে দিনটি জিম্বাবুইয়েরই হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত আরভিনের (১০৭) ভোগান্তির পর নাঈমের বোলিং (৪/৬৮) ঝলকে স্বস্তি মিলেছে। জিম্বাবুইয়ে প্রথমদিনে ২২৮ রান করেছে। তবে ৬ উইকেট হারিয়ে বসেছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার একমাত্র টেস্টটি হচ্ছে। দুই দলের মধ্যকার সব ফরমেটের ম্যাচ মিলিয়ে ১০০তম ম্যাচ খেলা হচ্ছে। জিম্বাবুইয়ে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছে। প্রথমদিন গেছে। দিনটিতে শুরুতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যেভাবে সাবলীলভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন ওপেনার মাসভাউরে ও অধিনায়ক আরভিন, দ্বিতীয় উইকেটে দুইজন মিলে ১১১ রানের জুটি গড়েন। দলের ১১৮ রান হতেই ৫৮ ও ৫৯ রানে দুইবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া মাসভাউরেকে (৬৪) যখন আউট করে দেন নাঈম, তখন থেকেই জিম্বাবুইয়েকে চেপে রাখার ভিত মজবুত হতে থাকে। শেষবেলায় খেলার এক ওভার বাকি থাকতে যখন আরভিনকেও আউট করে দেন নাঈম, তখন স্বস্তি ফিরে। এই স্বস্তি আরও আগেই ফিরতে পারত। যদি ৫৫ রানে থাকা আরভিনকে স্টাম্পিং করার সুযোগ কাজে লাগানো যেত। এখন রাগিস চাকাভার (৯*) সঙ্গে ডোনাল্ড তিরিপানো, ভিক্টর নিয়াউচি, এ্যান্সলি এনডিলোভু ও চার্লটন টিসুমা ব্যাটিংয়ে আছেন। দিনের শুরুটা অনেক কঠিন। বোলারদের এ সময়টা নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন। যদি কোন অঘটন না ঘটে, বিশেষ নৈপুণ্য জিম্বাবুইয়ের বাকি থাকা বোলারদের মধ্যে ব্যাট হাতে কেউ দাঁড়িয়ে না যান তাহলে দ্রুতই জিম্বাবুইয়েকে অলআউট করা যাবে। আর তা করা গেলে বাংলাদেশের হাতেই থাকবে ম্যাচ। নতুন শুরুর দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। টানা ছয় টেস্ট হার থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। তবে টস হেরে যায়। টেস্টে টস জেতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ বছরের প্রথম দেশের মাটিতে শুরু হওয়া টেস্টে টস হার হয়। জিম্বাবুইয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা বলেছিলেন, তারা মানসিকভাবে বাংলাদেশের চেয়েও শক্তিশালী। তা শুরু থেকে বোঝাই গেছে। দুই ওপেনার প্রিন্স মারভাউরে ও কেভিন কাসুজা মিলে রানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকার চেষ্টাই করেন। যদিও দলের ৭ রানের সময় রানের খাতা খোলার পরই কাসুজা (২) আউট হয়ে যান। রাহী ভালই ভোগান কাসুজাকে। শেষ পর্যন্ত রাহীর সুইংয়ে কাত হন কাসুজা। উইকেটে ঘাস থাকায় প্রথম ঘণ্টায় রান তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয় জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের। তবে এরপর থেকে মাসভাউরে ও অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন মিলে নিজেদের সামলে নেন। যেখানে প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভারে ২৬ রান করে জিম্বাবুইয়ে। সেখানে দ্বিতীয় ঘণ্টাতেই রান চলে যায় ৮০ রানে। মাসভাউরে ও আরভিন মিলে আগে উইকেটে থিতু হন। এরপর রান তুলতে থাকেন। তুখোড় রোদে আগে ব্যাটিং করায় সুবিধা হওয়ারই কথা। সেই সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করতে থাকেন মাসভাউরে ও আরভিন। ২০ ওভার পর্যন্ত স্পিনারের সঙ্গে পেসার চালিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে প্রথম সেশন পর্যন্ত শুধু দুই স্পিনার নাঈম ও তাইজুলকেই কাজে লাগানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দিনটি বাংলাদেশের কঠিন হয়ে উঠতে পারে, তা মনে হয়। মাসভাউরে ও আরভিন মিলে দলকে ১০০ রানে অনায়াসেই নিয়ে যান। দুইজন মিলে শতরানের জুটিও গড়েন। অথচ দলের শতরান কিংবা শতরানের জুটিও হতো না। যদি দুইবার মাসভাউরেকে আউট করার সুযোগ কাজে লাগানো যেত। একবার দলের ৯৯ ও নিজের ৫৮ রানে নাঈমের কাছে, আরেকবার দলের ১০০ ও নিজের ৫৯ রানে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান মাসভাউরে। তবে দুইবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার পরও ৬৪ রানের বেশি করতে পারেননি। নাঈমের বলেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন মাসভাউরে। দলের ১১৮ রানে মাসভাউরে আউট হতেই ১১১ রানের জুটি ভাঙ্গে। ছয় ঘণ্টার খেলায় প্রথম তিন ঘণ্টায় মাত্র ১ উইকেট হারায় জিম্বাবুইয়ে। চতুর্থ ঘণ্টার শুরুতেই, দ্বিতীয় সেশনের শেষ ঘণ্টায় নাঈমের ঘূর্ণিতে টপাটপ ২ উইকেট পড়ে যায়। মাসভাউরে আউটের পর কিছুক্ষণের মধ্যে নাঈমের করা বল সুইপ করতে যান ব্রেন্ডন টেইলর। পেড-ব্যাটে লেগে স্টাম্পে লেগে বোল্ড আউট হয়ে যান। ১০ রানের বেশি করতে পারেননি টেইলর। দলের ১৩৪ রানেই আউট হয়ে যান। প্রথম সেশনে যেমন দাপট দেখায় জিম্বাবুইয়ে, দ্বিতীয় সেশনেও তাই। প্রথম সেশনে যেমন ৮০ রান করে। দ্বিতীয় সেশনে ৭০ রান করে। প্রথম সেশনে ১ উইকেট হারায়। দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেট হারায়। আরভিন উইকেট আঁকড়ে থেকে এগিয়ে যেতে থাকেন। হাফ সেঞ্চুরি করার পর আরও বড় ইনিংস খেলার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। যদিও ৫৫ রানে থাকার সময় স্টাম্পিং হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান। নাঈমের বলে সুইপ করতে যান। বল ব্যাটে লাগেনি। তবে স্টাম্পের একেবারে কাছ দিয়ে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের প্যাডে লাগে বল। বলটি লিটন ধরে স্টাম্পিং করতে পারলে আউট হতেন আরভিন। অনেকটা দূরে ছিলেন। কিন্তু পারা গেল না। আরভিন সুযোগটি পেয়ে অনেকদূর এগিয়ে যান। তবে সিকান্দার রাজা তা পারেননি। নাঈম আউট করে দেন সিকান্দারকে। দলের ১৭৪ রানে গিয়ে সিকান্দার (১৮) আউট হতেই জিম্বাবুইয়েও চাপে পড়ে। যেভাবে এগিয়ে চলতে থাকে জিম্বাবুইয়ে, মনে হয় প্রথমদিনই ৩৫০ রান না হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ বোলাররাও চাপ তৈরি করতে থাকেন। তাতে কাজও হয়। আরভিন-সিকান্দার জুটি ৪০ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি। নাঈম টানা ৩২ ওভার বোলিং করেন। দলের ১৯০ রানের সময় মারুমা একবার রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন। তবে যখন দলের ১৯৯ রান হয় তখন রাহীর বলে রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউ হওয়া থেকে বাঁচতে পারেননি মারুমা (৭)। রাহী নিজের ১৪তম ওভার করতে এসে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করে নেন। জিম্বাবুইয়ের ৫ উইকেটের পতন ঘটানো যায়। আরভিনকেই শুধু আটকানো যাচ্ছিল না। জিম্বাবুইয়ের নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলিয়ামস না থাকায় আরভিনের কাঁধে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়। আরভিন সেই দায়িত্ব খুব ভালভাবেই প্রথমদিন পালন করেন। ২১৩ বলে গিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। তার এই সেঞ্চুরিতে দিনটি জিম্বাবুইয়ের পুরোপুরি হয়েও যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে আরভিনকে (১০৭) আউট করে দেন নাঈম। শেষ সেশনে গিয়ে জিম্বাবুইয়ে ৭৮ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি। আবার ৩ উইকেটও হারায়। সিকান্দারের পর বাংলাদেশকে ভোগাতে থাকা আরভিনকেও আউট করে দিয়ে দলকে স্বস্তি এনে দেন নাঈম। তিন টেস্ট পর আবার একাদশে ফিরে দ্যুতি ছড়ান। আর নাঈমের এ দ্যুতিতেই স্বস্তিতে মাঠ ছাড়তে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। এখন জিম্বাবুইয়েকে দ্রুত অলআউট করে দেয়াই হবে আসল কাজ। এরপর সবকিছুই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের হাতে থাকছে। প্রথম ইনিংসে যদি বড় স্কোর গড়া যায় তাহলে ম্যাচ থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া যাবে। তা না হলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। দিনভর ভোগান্তির পর শেষ বিকেলে যে স্বস্তি মিলেছে তা এখন তামিম, সাইফ, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, মিঠুন, লিটনদেরই বজায় রাখতে হবে।
×