ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জামিন ইস্যু পুরোটাই আদালতের বিষয় ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 খালেদা জিয়ার জামিন ইস্যু পুরোটাই আদালতের  বিষয় ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ইস্যুটি পুরোটাই আদালতের বিষয়। আদালত যেটা সিদ্ধান্ত নেয়ার নেবেন। এটা আওয়ামী লীগের বা সরকারের কিংবা শেখ হাসিনার হাতে নেই। আমাদের কারও কাছে নেই, আমাদের এখতিয়ারেও নেই। কাজেই একই প্রশ্ন বারবার করে বিব্রত না করাই উচিত। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের অধীনস্থ সব সাংগঠনিক জেলা/মহানগর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আয়োজিত বিশেষ যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, খালেদা জিয়া জামিনের বিষয়ে আদালতে আবেদন করেছেন। আদালতই বিষয়টি ঠিক করবে। এটা কোন রাজনৈতিক মামলা নয়, এটা দুর্নীতির মামলা। দুর্নীতির মামলায় যেটা হওয়ার সেটাই হবে। খালেদা জিয়াকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, এই প্রশ্নটি করবেন না। আমাদের অনেক কর্মসূচী রয়েছে। অনেক কাজ রয়েছে। দেশের কাজ, দলের কাজ। তাই খালেদা জিয়াকে নিয়ে বারবার প্রশ্নের জবাব দেব, সেই সময় আমাদের নেই। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজের দল ভারি করার জন্য বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে টানবেন না। তাহলে দল শক্তিশালী হবে না, দুর্বল হয়ে যাবে। দল ক্ষমতায় আছে বলে সাংগঠনিক দুর্বলতা উপলদ্ধি করতে পারছেন না। দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলে সরকার কখনই শক্তিশালী হবে না। শক্তিশালী সরকার তখনই হবে যখন আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, আমাদের সব চাহিদা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই পূরণ করছেন। দল যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে যে কোন পরিস্থিত মোকাবেলা করতে পারব। যার যার জায়গা থেকে অবস্থান নিতে পারব। যে সব সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হয়নি সেগুলো আগামী এপ্রিল মাস থেকে কাউন্সিল করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, কেউ ঘরে বসে কমিটি করবেন না। কমিটি করতে হলে অবশ্যই সম্মেলন করতে হবে। আর কোন কমিটি ভাঙতে হলে অবশ্যই কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি লাগবে। কমিটি ভাঙার ক্ষমতা আপনাদের নেই। আপনারা সুপারিশ করতে পারেন। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হবে আপনার সুপারিশ যথাযথ কিনা। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন কারচুপি মুক্ত হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। বিশেষ করে ইভিএমকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রতিপক্ষরা নানাভাবে নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি ও বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তা ব্যর্থ হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে কারচুপিমুক্ত নির্বাচন হয়েছে। তাই বিরোধী দলের বুঝতে হবে কারচুপি মুক্ত ভোটের জন্য ইভিএমের প্রয়োজন ছিল। ইভিএমে কারচুপি বা জালিয়াতির কোন সুযোগ ছিল না। যদি এ রকম সুযোগ থাকত তাহলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার বেশি থাকত। তিনি বলেন, এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও পাঁচ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি। প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মকভাবে অংশ নিতে হবে। সকলের উদ্দেশ্য থাকবে যাতে ভোটার উপস্থিতিটা বেশি হয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মারণঘাতী ভাইরাস করোনার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভাইরাসটির প্রকোপে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হতে পারে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। তবে করোনাভাইরাস আমাদের অর্থনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে সেই অবস্থা এখনও আসেনি। এটি যদি বেশিদিন কন্টিনিউ করে তাহলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ আজ বিশেষ মর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের অনেক কর্মসূচী রয়েছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পেঁয়াজের দাম তো কমেছে। তবে দাম একেবারে আগের জায়গায় এসেছে এমন কথা আমি বলব না। মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীনের ২৫০ কর্মী তাদের ছুটিতে গেছেন (নববর্ষে)। আমাদের এখন যে অবস্থা এক হাজার কর্মীর মধ্যে ২৫০ জন ছুটিতে আছেন। বাকিরা এখানে অবস্থান করছেন। করোনাভাইরাসের যে প্রভাব, এরপরেও তিনটি স্প্যান আমাদের বসে গেছে এবং আজ বৃহস্পতিবার আরেকটা স্প্যান বসার কথা রয়েছে। আগামী আড়াই মাসের মধ্যে যারা ছুটির কারণে চীনে আছে, তারা ফিরে না এলে একটু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আগামী দুই মাসে আমাদের কাজের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। অন্তত কমিউনিকেশন সেক্টরের অবস্থা আমি বলতে পারি। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলনকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এপ্রিল থেকে পুরোদমে এই পরিক্রমা শুরু হবে। আমরা মোট ২৯টি সম্মেলন করেছি। এর মধ্যে দুটি ঢাকা সিটির। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত কোন সম্মেলন হয়নি। শেখ হাসিনার বড় নির্দেশনা হচ্ছে দলকে সাজাতে হবে। সাংগঠনিকভাবে সুশৃঙ্খল এবং সময়ের চাহিদা মেটানো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দল ক্ষমতায় থাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা টের পাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় দেখা যায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে আছে, ৮-১০ বছর হয়ে গেছে আর কেউ নাই, পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়নি। আবার অনেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিচ্ছে, অনুমোদন পেতে পেতে ছয় মাস। সম্মেলন করতে বললে বলেন আমাদের তো মেয়াদ শেষ হয়নি। সম্মেলন যেদিন থেকে হবে ক্ষণগণনা সেদিন থেকেই হবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলন থেকে শিক্ষা নিন। বিভাগীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন সুসময়, কিন্তু দুঃসময় যে আসবে না, এটা কখনও ভাববেন না। কেউ কারও থাকবে না। আজকে নিজের মনে করে একজনকে নেতা বানাচ্ছেন, আপনার যখন খারাপ সময় আসবে, তখন আপনাকে সালামও দেবে না। কাজেই এসব নেতা বানিয়ে লাভ নেই। যৌথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ইকবাল হোসেন অপু, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচিসহ ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।
×