ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্বাচলে আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ পরিদর্শন করলেন প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 পূর্বাচলে আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ পরিদর্শন করলেন প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী পূর্বাচল নতুন শহরে বঙ্গবন্ধু চত্বরের প্রস্তাবিত স্থান ও সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে (সিবিডি) নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু আইকনিক ট্রাইটাওয়ার নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। বুধবার দুপুরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সেক্টর ৪ ও ৫ এর সংযোগস্থলে প্রস্তাবিত এ স্থান পরিদর্শন করেন তিনি। চত্বরটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। অপরদিকে ১১১, ৭১ ও ৫২ তলা আইকনিক ট্রাইটাওয়ারটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে শিকদার গ্রুপ ও কজিমা কর্পোরেশন জাপান। সিবিডি এলাকায় নির্মিতব্য আইকনিক টাওয়ারে প্রতিফলিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিতে ৫২ তলা ভবন, মহান মুক্তিযুদ্ধেও স্মৃতিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ৭১ তলা ভবন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিগ্যাসি স্মরণে ৯৬ তলায় মিউজিয়ামসহ দেশের সর্ববৃহৎ ১১১ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আইকনিক এ তিন ভবনের পাশপাশি সিবিডিতে গড়ে উঠবে ৪০ তলার আরও ৪৯ ভবন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের ইতোমধ্যেই প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সংস্থান করা হয়েছে। বাকি কাজ চলছে। প্রথম দুই বছরের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার নির্মাণ সামগ্রী কেনা হবে, যা দেশের অর্থনীতি ও নির্মাণ শিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর চত্বর নির্মাণের সর্বশেষ অগ্রগতির খোঁজ-খবর নেন এবং এটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশের অধিক সংখ্যক মানুষ যেন এই চত্বরে এসে বসতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষেও মুজিববর্ষ পালনের প্রস্তুতি হিসেবে সরজমিনে এসে কাজের অগ্রগতি দেখলাম। মন্ত্রী এরপর পূর্বাচলের ১৯নং সেক্টরে ১১নং রোডের পাশে বঙ্গবন্ধু ট্রাইটাওয়ারের কার্যক্রমের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। অস্থায়ীভাবে নির্মিত প্রকল্পের একটি শেডে প্রতিমন্ত্রী দেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ তিনটি ভবনের সমন্বয়ে নির্মিতব্য আইকনিক ট্রাইটাওয়ার নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ও এর উপর তৈরি করা একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীকে বলা হয়, পূর্বাচল বিজনেস ডিস্ট্রিক নামে রাজউকের আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের কাজটি দরপত্রের মাধ্যমে যৌথভাবে নির্মাণ করছে শিকদার গ্রুপ ও কজিমা কর্পোরেশন জাপান। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মাটি পরীক্ষা, যানবাহন ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সমীক্ষা, প্রকল্পের খসড়া মাস্টারপ্ল্যান, ডিজাইন রাজউকে জমা দিয়েছে প্রকল্প পরিচালক। একইসঙ্গে স্মার্ট ও অত্যাধুনিক নির্মাণ শৈলীর আইকনিক টাওয়ারের ডিজাইনের জন্য রাজউক একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। পরিবশেবান্ধব এ ভবনটির সারা ওয়ালে সর্বাধুনিক সোলার গ্লাস লাগানো হবে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত গ্যাস পানিসহ বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটির জন্য ব্যবহার করা হবে মাটির নিচের লাইনের ডাক্ট ব্যবস্থা। গ্রীন ভবনসমূহের ওয়ালে চীনের গ্রেটওয়ালের আদলে নির্মাণ করা হবে ওয়াকেওয়ে। আভ্যন্তরীণ যাতায়াতের জন্য পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাস ও আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াকওয়ে থাকবে। ভবনের আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বিশ্ব খ্যাত কোরিয়ার হেরিম আর্কিটেক্ট। অনুষ্ঠানে পাওয়ার প্যাক হোল্ডিং ও শিকদার গ্রুপ ছাড়াও এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হেরিম, পিডব্লিউসি, আর্কেটাইপ, নর, চায়না পাওয়ার, চায়না এনার্জির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রতিমন্ত্রীকে কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি বর্ণনা করেন। পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা সত্যিই গর্বের বিষয় যে, এ আইকনিক টাওয়ারে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিতে ৫২ তলা ভবন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ৭১ তলা ভবন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিগ্যাসি স্মরণে ৯৬ তলায় মিউজিয়ামসহ দেশের সর্ববৃহৎ ১১১ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও ধন্যবাদ দিতে চাই এ জন্য যে, শিকদার গ্রুপ ও কাজিমা কর্পোরেশন জাপান অত্যন্ত গুরুত্বে সঙ্গে প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যেই এ কাজটি এগিয়ে নিচ্ছে। আশা করব ২০২০ এর মূল কাজ শুরু করে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যেই যেন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয় সেভাবে কাজ করেন তারা। অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার ও রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর তাদের বক্তব্যে সময়মতো সুন্দরভাবে বিশাল এ আইকনিক ভবনসহ সকল কাজ মানসম্মত করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান। পরে প্রতিমন্ত্রী পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। এরপর রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন নিকুঞ্জ-১ লেকের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী। পরিদর্শনরকালে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি আ স ম আমিনুর রহমান, রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) আজহারুল ইসলাম খান, সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) আব্দুল লতিফ হেলালী, প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস এবং পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক উপস্থিত ছিলেন।
×