ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে গেলে সহায়তা ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:১১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  কেউ বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে গেলে সহায়তা ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সব বন্দর, স্টেশনসহ যেসব স্থান দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হয় ও স্ক্যানার মেশিনের প্রয়োজন সেসব স্থানে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে শহুরের পরিবেশ রক্ষায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগও নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশনা ও সহযোগিতার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্বে মোট ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি এক লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৮ হাজার ৮৮৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সব বন্দর ও স্টেশনে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে পণ্য খালাস হয় সেখানেই স্ক্যানার মেশিন বসাতে হবে। পরিবেশ উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরামর্শ দিয়েছেন সড়ক মহাসড়কের দু’পাশে গাছ লাগানোর। নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শহরে আধুনিক কসাইখানা চাই। এখানে-সেখানে গরু জবাইয়ের স্বাভাবিক প্রবণতা আছে আমাদের। সেটা কমে আসা উচিত। শহরের জন্য আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করা উচিত। কিছু কিছু কসাইখানা নির্মিত হয়েছে। কোথাও কোথাও আন্ডার ইউটিলাইজ (ব্যবহারাধীন) আছে। সেগুলো যেন যথাযথভাবে ব্যবহার হয়, সেগুলোর জন্যও বলেছেন তিনি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই চিন্তিত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিক করতে বলেছেন। (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে) নানা ধরনের প্রস্তাব আসছে। বিদেশী কোন কোন কোম্পানি আসতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আসুক। আমরা সহযোগিতা করব। বিদেশীরা এদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করতে চাইলে সহযোগিতা করা হবে। তবে এর সঙ্গে পরিবেশ ও আমাদের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় ঘটলে আমরা বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে সহায়তা করব। এম এ মান্নান আরও বলেন, জলাশয় পরিষ্কার রাখতে বলেছেন। ব্রিজ নির্মাণ করলেও বিকল্প ব্যবস্থা রাখার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে, সেখানে যেন আপদকালীন সময় দ্রুত নৌ চলাচল ব্যবস্থা থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ব্রিজ যতই বানাই না কেন, ইমার্জেন্সি ঘাট যেন থাকে। কোন কারণে ব্রিজের যদি ক্ষতি হয়, যাতে ইমার্জেন্সি ফেরি ব্যবহার করতে পারি। কথা হলো ওই জায়গা যেন ব্লক না হয়। রাতারাতি নৌকা এনে আমরা যেন পারাপারের ব্যবস্থা করতে পারি সে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নোয়াখালী জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কামাল উদ্দীন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৮২ কোটি ১১ লাখ টাকা। আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪০৭ কোটি টাকা। শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। পাটুরিয়া এবং দৌলতদিয়ায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বন্দর উন্নয়ন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বন্দরটি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মালামাল পরিবহনের প্রস্তাব রয়েছে সরকারের কাছে। ইতোমধ্যে নেপাল ও ভারতের প্রতিনিধিরা এই বন্দর পরিদর্শনও করে গেছেন। এর মধ্যেই বন্দরটির সক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে এই বন্দরের আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়াও রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বিলুপ্ত ছিটমহল ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। হাওরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কচুরিপানা নিয়ে গবেষণা করতে বলেছি একনেক ব্রিফিংয়ের সময়ই ‘কচুরিপানা খাওয়ার’ প্রসঙ্গও আসে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কচুরিপানা খেতে বলা’ নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কচুরিপানার বিষয়ে আমার কৃষি গবেষকদের বলেছি গবেষণা করতে, কাউকে কচুরিপানা খাওয়ার জন্য আমি কখনও বলি নাই।
×