ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেলফি ভয়ঙ্কর

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সেলফি ভয়ঙ্কর

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় স্কুলছাত্রের অপমৃত্যু সমাজের সামনে আবারও সেই পুরনো প্রশ্নকে সামনে তুলে এনেছে। এভাবে আর কত মৃত্যু? প্রযুক্তির নব নব উদ্ভাবন মানুষের প্রয়োজন মিটিয়েছে, সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আবার একই প্রযুক্তির অপব্যবহার মানুষের জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট ছাড়া একদিনও অতিবাহিত করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন ইন্টারনেট সেক্টরেই হাজার হাজার কর্মহীন মানুষ তাদের কর্মসংস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় তথ্যপ্রাপ্তি ও জ্ঞান আহরণ সহজ ও গতি এসেছে। আবার এটি অনেকের জন্যেই সর্বনাশা আসক্তির কারণ হয়েছে। যেমন ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক। এটি অনেকের অফুরন্ত অবসর সময় কাটানোর বিরাট এক পন্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অথচ বহু শিক্ষার্থী ও কর্মপ্রাণ মানুষের মূল্যবান সময় অহেতুক বিনষ্ট করছে এই ফেসবুক। বলা বাহুল্য, এখানে ফেসবুক মাধ্যমটির কোন অপরাধ নেই। সব দোষ মানুষের ক্ষতিকর আসক্তির। আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবেই এটা হচ্ছে। একইভাবে মোবাইল ফোন এদেশে চালু হয়েছে কুড়ি বছর হবে। এখন এটি অধিকাংশ মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অল্প খরচে দূর-দূরান্তে অবস্থানকারী নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মোবাইল যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। মোবাইলে ইন্টারনেট বা ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ভীষণভাবে বেড়েছে। বেশ ক’বছর হলো দেশে মোবাইল ফোনে নিজেই নিজের ছবি তোলার চল গড়ে উঠেছে। এর নাম হয়েছে সেলফি। শুধু অল্পবয়সীরাই নয়, বয়স্ক মানুষও এখন সেলফি-সংস্কৃতির শিকার। মানুষ আত্মপ্রেমের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে সেলফি তুলে। এই আদিখ্যেতা মানুষকে ভুলিয়ে দিচ্ছে স্থানকালপাত্র জ্ঞান। তাই ক’দিন পরপরই সেলফি তুলতে গিয়ে জীবননাশের খবর সংবাদপত্রে জায়গা করে নিচ্ছে। সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় স্কুলছাত্রের মৃত্যুর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করব, পাশাপাশি দুঃখ করে একথাও বলতে হবে যে, কতখানি কান্ডজ্ঞানবর্জিত হলে একজন শিক্ষার্থী এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তোলার পরিকল্পনা করতে পারে! এটি কি বাহাদুরি প্রদর্শনের বাতিক? নাকি সেলফি সংস্কৃতিতে অভিনবত্ব আনার ভয়ঙ্কর প্রয়াস! এভাবে আর কত মানুষ সেলফির বলি হবে? এমন ভয়ঙ্কর শখের অবশ্যই লাগাম টানতে হবে। কানে হেডফোন নিয়ে পথ চলা এখন যেন ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে। যিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন তার মনোযোগ কি থাকে সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন গতির যানের দিকে? এতে তার ঝুঁকিই বাড়ে। রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে যে তরুণের দুঃখজনক মৃত্যু হলো, তাকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী চিৎকার করে সাবধান করে দিচ্ছিলেন এই বলে যে, বিপরীত দিক থেকেও আরেকটি ট্রেন আসছে। কিন্তু কানে হেডফোন লাগানো থাকলে কী করে তার কানে পৌঁছুবে সেই সাবধানবাণী! এমন অপমৃত্যু, তথা জীবনের মর্মান্তিক পরিণতি থেকে মানুষ যদি শিক্ষা না নেয় তাহলে কিভাবে তাদের বাঁচানো সম্ভব? আমরা আশা করব, পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ব্যাপারে সচেতন করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে সতর্ক ও সচেতন করার।
×