ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আনসার ভিডিপির জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

অশুভ শক্তি পরাজিত করতে সাহসের সঙ্গে কাজ করুন

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অশুভ শক্তি পরাজিত করতে সাহসের সঙ্গে কাজ করুন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা সেবা প্রদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারিগর- এ দুইয়ের সমম্বিত শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী আনসার-ভিডিপির সদস্য হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। জননিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখবেন, জনগণ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং শান্তির পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ। আপনারা এ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ অচিরেই বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারব- এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে সফিপুর আনসার একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছেন। প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ তাকে স্বাগত জানান। এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ তিন বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী খোলা জীপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের কুচকাওয়াজ ও সালাম গ্রহণ করেন এবং ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ও জনস¤পৃক্ত একটি বৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী। এ বাহিনীর কার্যক্রম তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। এ বাহিনীর সদস্য ৬১ লাখ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে বা মহল্লায় এ বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সরকারের যেকোন সচেতনতামূলক কার্যক্রম আনসার- ভিডিপির সদস্যদের মাধ্যমে খুব সহজেই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত। বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্যরা ‘এভসেক (এভিয়েশন সিকিউরিটি)’ এর অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জনপদকে নিরাপদ রাখতে দুটি মহিলা ব্যাটালিয়নসহ এ বাহিনীতে ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া নবগঠিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গঠনের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, জাতি সে স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আমরা প্রবেশ করেছি। সম্প্রতি বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এসবই গত এগারো বছরে আমাদের সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে শান্তি, উন্নয়ন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত। মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্রের হার আগের তুলনায় অনেক নেমে এসেছে। বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল স্থাপন এসবই আমাদের উন্নয়নের প্রতি অগ্রযাত্রার বহির্প্রকাশ। এছাড়া নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের যে কোন সমস্যা সমাধানে আমাদের সরকার সব সময় আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। এই বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত আছে। আনসার বাহিনীকে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান, ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক প্রদান, একটি গার্ড ব্যাটালিয়নসহ চারটি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃৃতি কমপ্লেক্স ও আ¤্রকাননের নিরাপত্তার জন্য দুটি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ব্যাটালিয়নের সাংগঠনিক কাঠামা পুনর্গঠন করে জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়ন করার কার্যক্রম অব্যাহত। উপ-মহাপরিচালক থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত র‌্যাঙ্ক ব্যাজ সমন্বয় করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ছয়টি উপ-মহাপরিচালক এবং ১৭টি পরিচালকের পদ সৃজন করা হয়েছে। বিগত বছরে বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদবির ৯৬৬ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আপনাদের সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণের বিষয়টি সর্বদাই আমাদের সুদৃষ্টিতে রয়েছে। আপনাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর সেবা ও সাহসিকতা পদক আমাদের সরকারই প্রবর্তন করেছে। আজ যারা সেবা ও সাহসিকতা পদক অর্জন করেছেন তাদের আমি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যগণ খেলাধুলা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশের গ-ি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমসে বাংলাদেশের অর্জিত ১৪২টি পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জন করেছে এ বাহিনীর খেলোয়াড়গণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং ইংরেজী নববর্ষ বরণের সময়ে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা ঠেকাতে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আপনাদের বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা দেশবাসী দেখেছে। বিভিন্ন সময়ে দেশের জননিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বপালনকালে যেসব অকুতোভয় আনসার সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, আমি শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০-২০২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘মুজিববর্ষের উদ্দীপন, আনসার ভিডিপি আছে সারাক্ষণ’ স্লোগানটিকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। এজন্য আমি এ বাহিনীর মহাপরিচালকসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সদস্যবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
×