ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট উৎসবের নগরী ॥ সরগরম রাজধানী ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

ভোট উৎসবের নগরী ॥ সরগরম রাজধানী ঢাকা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সাইকেলের ওপর কাপড় ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নৌকা। আছে বৈঠাও। পুরো নৌকাটি সাজানো হয়েছে গাঁদা ফুল আর কালো রঙিন কাপড় দিয়ে। আছে নানান কারুকাজও। সাঁটানো আছে নির্বাচনী পোস্টার। লাগানো আছে মাইক। নৌকার ভেতর থেকে গানে গানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রচার চলছে। শুক্রবার পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকায় এ রকম একটি নৌকায় নির্বাচনী প্রচার চালাতে দেখা যায়। নৌকাটি নির্মাণে অর্থায়ন করেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ ওমর ফারুক সায়মনসহ আরও এক ব্যক্তি। সড়কে ব্যতিক্রমী প্রচার দেখে উৎসুক মানুষ ভিড় করেন। তখন সবার কাছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া হয়। অনেকে মোবাইল ক্যামেরায় নৌকাটির ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নৌকার ভেতরে রাজকীয় লাল পোশাক, টুপি আর গলায় মালা পরা এক ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়। তার নাম মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগের দিনে রাজা-বাদশারা এমন পোশাক পরে নৌভ্রমণে বের হতেন। আমার সাজ ও নৌকা সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করেই বানানো। এ ধরনের নৌকা বানিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানোর পেছনে কী চিন্তা কাজ করেছে জানতে চাইলে মিনারুল বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার কাছ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা শুনে আসছি। জাতির পিতা দেশের জন্য যে অবদান রেখেছেন সেসব শুনে বঙ্গবন্ধু ও তার নৌকার প্রতি আমার ভালবাসা তৈরি হয়। সেই ভালবাসা থেকেই আমি তাপস ভাইয়ের পক্ষে এমন প্রচার চালাচ্ছি। গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই এ নৌকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফজলে নূর তাপসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। প্রচারের শেষদিন পর্যন্ত নৌকা নিয়ে মাঠে থাকতে চান মিনারুল। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আসন্ন দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মহানগরী এখন উৎসবের নগরীতে রূপ নিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড, মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত রাতদিন জমজমাট প্রচার চলছে। আছে ব্যতিক্রমী নানা উদ্যোগও। ভক্ত অনুরাগী, সমর্থকদের পাশাপাশি অনেক সময় মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেরাই ভিন্ন রকম প্রচারে ভোটরদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও বাজছে বাউল গান, দেশের গান। কোথাও প্রার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা- ও মহত কাজগুলো নিয়ে কথা আর শব্দে বসছে গানের আসর। তুলে ধরা হচ্ছে ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের গুণগান। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি তো আছেই। যে যার সাধ্যমতো প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মেয়র প্রার্থীরা নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশিষ্টজনদের নিয়েও মাঠে নামছেন প্রতিদিন। আবার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথক টিম গঠনে চলছে প্রচার। সঙ্গীত শিল্পী, চলচ্চিত্র নায়ক, নায়িকা, নাট্যাভিনেতা, অভিনেত্রী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আইনজীবী থেকে শুরু করে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মেয়রদের পক্ষে মাঠে নামানো হচ্ছে। ব্যান্ড পার্টি কিংবা স্পীকারে বাদ্য বাজনার তালে তালে চলে গান। খোলা ট্রাকে মঞ্চ করে প্রচারের দৃশ্য এখন সবখানেই। পথসভা, ছোট্ট পরিসরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যানারে জনসভাও চলছে সমানতালে। সেখানে বিভিন্ন দল ও জোটের শরিক নেতারা বক্তব্য রাখছেন। ভোটারদের কাছে দল ও জোটের পক্ষ থেকে ভোট প্রার্থনা করছেন। রাত দিন পাড়া-মহল্লায় চলছে খন্ড খন্ড মিছিল। শয়ে শয়ে মানুষের ভিড়। সরগরম পাড়া-মহল্লা। স্টলগুলোতে কাপ আর চামিচের টুং টাং শব্দ যেন থামছেই না। চা খাওয়ার জন্য পাড়া-মহল্লায় রীতিমতো সিরিয়াল দিতে হচ্ছে। স্টল মালিকদের যেন কথা বলা বা বিশ্রামের ফুরসত নেই। দক্ষিণে মিছিলরত নেতাকর্মীরা ‘নৌকা, নৌকা ও তাপস ভাই’, আর উত্তরে ‘আতিক ভাই’ স্লোগানে গণসংযোগে এলাকা মুখরিত করছেন। বেশ কয়েক স্থানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরেন। দক্ষিণে ‘ঢাকার ছেলে ইশরাক ভাই ধানের শীষে ভোট চাই’; উত্তরে তাবিথ ভাই এগিয়ে চলো, ‘মাগো তোমার একটি ভোটে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে’; ‘আসছে দেশে শুভ দিন ধানের শীষে ভোট দিন’ ইত্যাদি স্লোগানে সব এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগের সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ হাত তুলে, অনেককে উঁচু দালানের ছাদে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাদের পক্ষে সমর্থন দিতে দেখা যায়। পাড়া-মহল্লায় ক্যাম্প অফিসগুলোতে রাত দিন শত মানুষের ভিড়। নানা পরিকল্পনা করে ভোটের সন্ধানে টিম যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন, বাংলামোটর, শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় বাজছিল ‘খালা ও খালু যান এক ফেব্রুয়ারি সবাই মিলে ভোট কেন্দ্রে যান। আপনাদের বলে যাই, তাপস ভাইয়ের পক্ষে নৌকায় ভোট চাই।’ ‘তাপস ভাই ভাল লোক-জয়ের মালা তারই হোক। আমার-তোমার মার্কা/উন্নয়নের মার্কা/সবার মার্কাÑ নৌকা নৌকা’ এরকম স্লোগানে মাইকিং ও গান বাজানো হচ্ছিল। কোথায় পোস্টার নেই বলুন। এমন একটি অলিগলি কিংবা দেয়াল বা সড়ক নেই যেখানে পোস্টারের মহোৎসব চোখে পড়ে না। ছাদ থেকে উড়াল সড়ক পর্যন্ত সবখানেই পোস্টার আর পোস্টার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পোস্টারের নগরী। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড। ২০১৭ সালে এই এলাকাটি ছিল ইউনিয়ন। তখন নতুন ওয়ার্ডে এই এলাকাটি যুক্ত করা হয়েছে। নন্দিপাড়া ও ত্রিমোহিনী এলাকায় রয়েছে বাঁশের সাকো। অন্যপাশে আছে সেতুও। কিন্তু সাঁকোর ওপর দিয়ে বিশাল রশি দিয়ে টানানো আছে শয়ে শয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার। শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই নদী ও খালের পানি শুকিয়ে পচা গন্ধ বের হচ্ছে। পানি কমে বেরিয়ে এসেছে মাটি। নাকে রুমাল গুঁজে পথ চলতে হচ্ছে পথচারীদের। খালের চিত্র বলছে সময়ের দাবি তার প্রাণ ফেরানো। জলাধার রক্ষার। যদিও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে খুব একটা প্রতিশ্রুতি নেই। তবে নির্বাচনী ডামাডোল খাল ও নদী ছাপিয়ে সিটি কর্পোরেশনের শেষ সীমানা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিন জনের ছবিতে এক পোস্টার গত কয়েকদিন রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে কমপক্ষে ২০টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এবারের প্রার্থীদের প্রচারের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। যেমন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী, সমর্থিত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী প্রার্থীর ছবি দিয়ে একটি লিফলেট করা হয়েছে। বিএনপির ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় এমন পাওয়া গেলেও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায়নি। আবার মাইকিং করার ক্ষেত্রে আছে ভিন্ন তা। ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত-সমর্থিত প্রার্থীদের একসঙ্গে মাইকিং করা হচ্ছে। পাঁচ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী চিত্ত রঞ্জন দাস বলেন, আমরা সবাই দলের লোক। তাই একসঙ্গে পোস্টার ও লিফলেট করা হয়েছে। মানুষের কাছে আমরা ঐক্য আর উন্নয়নের প্রতীক এই সংবাদটুকু পৌঁছে দিতে চাই। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে এখন মাইক ভাড়া নেয়ার মতো কোন ব্যবস্থা নেই। রাজধানীর নীলক্ষেত ও কমলাপুর এলাকা থেকে বেশি মাইক ভাড়া দেয়া হয়। সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা নন্দন রায় জানান, তিনি একটি ডিসকাউন্ট পণ্যের প্রচারের জন্য কমলাপুর এলাকায় মাইক ভাড়া করতে যান। তিনদিন ঘুরেও দুই ঘণ্টার জন্য একটি মাইক ভাড়া পাননি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অন্তত এক সপ্তাহ পর মিলবে মাইক। কমলাপুর বাছির মাইক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আলামিন জানালেন, ১০ জানুয়ারির পর থেকে আমাদের কাছে আর কোন মাইক নেই। নির্বাচন পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক সব ভাড়া দেয়া হয়েছে। অনেকে আসছেন নতুন ভাড়া নেয়ার জন্য। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। মোট প্রার্থী ৭৫৮ ইসি সূত্র বলছে, মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৭৫৮ জন। মেয়র পদে লড়ছেন ১৩ জন। দুই সিটির ৫৯ ওয়ার্ডে পাঁচ থেকে ১০ জন পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। প্রার্থী যতই থাক শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যেই। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিলেও মেয়র পদে শুধু দক্ষিণে প্রার্থী আছেন। সব মিলিয়ে ৪০ জন কাউন্সিলরও এখন মাঠে নেই দলটির। উত্তরে ৫৪ পদে ২৫১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। ১৮ সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী ৭৭ জন। দক্ষিণে ৭৫ পদে প্রার্থী সংখ্যা ৩৩৫। ২৫ নারী সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী সংখ্যা ৮২ জন। উত্তর সিটিতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার, ৬২১ জন। এই সিটিতে ভোটগ্রহণের জন্য ১ হাজার ৩৪৯টি কেন্দ্র ও ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটগ্রহণের জন্য বুথ থাকবে। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১২৪টি। বুথের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৯৮টি। সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। নতুন ৩৬ ওয়ার্ড ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নে ৩৬ ওয়ার্ড গঠন করে সরকার। ’১৭ সালের জুনে নতুন ওয়ার্ড গঠন হলেও বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। এমন অনেক ওয়ার্ড আছে যা স্রেফ গ্রাম। এ নিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনে মোট ওয়ার্ড হলো ১২৯। দুই সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তারা কাউন্সিলর নির্বাচনের উদ্দেশে এসব ওয়ার্ড গঠনের সুপারিশ করলে স্থানীয় সরকার বিভাগ নতুন ওয়ার্ড গঠনের গেজেট জারি করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পুরনো ছত্রিশের সঙ্গে নতুন করে ১৮ ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪। আর দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭ থেক বেড়ে হয়েছে ৭৫। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটির আয়তন বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জুন ঢাকা সিটির আয়তন বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাঈদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ৫৮ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করেছে সরকার। নতুন সব ওয়ার্ড এখন মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিশেষ নজরে আছে। এসব ওয়ার্ডেও বেশিরভাগ এলাকায় নাগরিক সুবিধা নেই। কোথাও নামেমাত্র। রাস্তা ঘাট একেবারেই বেহাল। খানাখন্দে পথ চলা দায়। পাশাপাশি সরু গলি। অনেক এলাকায় আছে বিদ্যুত ও পানির সঙ্কট। আবার অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ নিয়ে সমস্যা আছে। পার্ক, খেলার মাঠ জলাশয় নেই বললেই চলে। তাই মেয়র ও কাউন্সিলররা নতুন ওয়ার্ডগুলোতে বেশি যাচ্ছেন। মানুষের কাছে বাস্তবায়ন করার মতো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আতিকুল যখন খেলোয়াড় মেয়র আতিকুল ইসলাম। ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত মুখ। উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর আকস্মিতভাবেই তার রাজনীতিতে আসা। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নয় মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিত। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে শ্রমিকদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। কারণ সহজ সরল জীবন যাপন তার। ব্যবসায়ী হিসেবে কর্মীদের সঙ্গে একেবারেই নিবিড় সম্পর্ক। নিজ হাতে খাবার পরিবেশন, সবার সঙ্গে বসে খাওয়া, কারো মুখে খাবার তুলে দেয়া এসব পুরনো ও ঘরোয়া হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনের মাঠে ঘরোয়া জীবন যাপনের বেশ প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। ভোটারদের চা বানিয়ে খাওয়ানো, রিক্সা চালানোসহ বিচিত্র কিছু কাজ করে আলোচনায় তিনি। এবার ক্রিকেট খেলেছেন আতিক। মাঠে নামার আগে খানিকটা অনুশীলন, খেললেন দশটির মতো বল; তিনবার বল পাঠালেন সীমানার বাইরে। ভোটের প্রচারে চাওয়ালার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কয়েকদিন আগে আলোচনায় আসা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে এবার দেখা গেল ক্রিকেটারের ভূমিকায়। শুক্রবার সকালে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে আয়োজিত দ্বিতীয় বিভাগের একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যান উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল। সেখানে তিনি খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হন। দুটি দল মাঠে নেমে খেলা শুরু করার কিছুক্ষণ পর গ্লাভস, প্যাড, হেলমেট পরে মাঠে নেমে যান আতিকুল ইসলাম। ব্যাট হাতে চলে যান স্ট্রাইকিং প্রান্তে। একজন স্পিনার আতিককে বল করতে এলে কয়েকটি বল খেলে তিনটি বাউন্ডারিতে পাঠান নৌকার প্রার্থী। পরে ওই বোলারের বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে আসেন মাঠের বাইরে। পরে আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যুব সমাজকে মাদকমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত করতে গেলে খেলাধুলার বিকল্প নেই। এজন্য নির্বাচিত হলে ঢাকা উত্তরে খেলার মাঠ তৈরির দিকে তিনি মনোযোগ দেবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি এখন পর্যন্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশে বিঘ্ন ঘটেনি। উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশ বজায় আছে। এই পরিবেশ শেষ পর্যন্ত বজায় রাখতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আবু আলম শহীদ খান বলেন, নির্বাচন মানেই ভোট উৎসব। নির্বাচনকে উৎসবে রূপ দিতে না পারলে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে না। আমরা আশাকরি আগামী দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় এক ফেব্রুয়ারি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে পাব।
×