ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরূপে ভিপি নূর-জিয়া তার কাছে শহীদ

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২১ জানুয়ারি ২০২০

 স্বরূপে ভিপি নূর-জিয়া তার কাছে শহীদ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এবার আর নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করেননি নানাকান্ডে আলোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নূর। ঢাবির প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা নূর ও তাদের সঙ্গীদের বিএনপি ও জামায়াত শিবির পন্থী বলে অভিযোগ করলেও নূর সব সময় নিজেকে কখনও নিরপেক্ষ, কখনও প্রগতিশীল বলে দাবি করেছেন। তবে ঢাবিতে মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তার সখ্যের পর এবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে তিনি সম্বোধন তিনি বিএনপির ভাষায়ই সম্বোধন করলেন। এর আগে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন নূর। তার দাবি, খালেদা জিয়া অপরাধী নন, যে মামলায় তিনি কারাভোগ করছেন সেটি সঠিক নয়। বিরোধী দলীয় প্রধানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া মানে সেই দলকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়া। একটি দলের প্রধানকে কারাগারে পাঠিয়ে ক্ষমতাসীনরা অন্য সব বিরোধীর সতর্কও করেছেন। তখন তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান। আর রাখঢাক নয়, সরাসরি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ‘শহীদ’ ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ বলে শ্রদ্ধা জানান ডাকসু ভিপি নূর। এবার জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নূরের দেয়া বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় বইছে ঢাবিতে। বহুবার নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের মানুষ দাবি করা নূর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন রবিবার। দিনটি ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতির ৮৪তম জন্মদিন। নূর তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘৮৪তম জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি রণাঙ্গনের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে (বীরউত্তম)। দলকানারা যতই বিতর্ক সৃষ্টি করুক মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান এদেশের মানুষের কাছে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে’। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ডাকসু ভিপির এই স্ট্যাটাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। নূরের ওই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট দিয়ে অনেকেই তাকে ছদ্মবেশী বিএনপি বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ তাকে ছাত্রদলের কর্মী বলেও উল্লেখ করেন। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেছেন, ‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না’ চরিত্র লুকানো যায়না! স্বরূপে ফিরেছেন পাকিপ্রেমী, সাধারণ ছাত্রদের আবেগ নিয়ে প্রতারণা করা, অভিনয়ে যিনি ইতোমধ্যেই সবার মন কেড়েছেন, সাম্প্রদায়িক সব গোষ্ঠী ও জঙ্গীদের মদদদাতা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতের পুতুল ডাকসুর ইতিহাসে সবচেয়ে হাস্যকার চরিত্রের অধিকারী ভিপি নূর! তিনি আরও বলেন, সরাসরি বলুন যে আপনি পাকি মদদের রাজনীতি করবেন। ডাকসু ভিপি হিসেবে এতটুকু নৈতিক সাহস থাকা উচিত। জীবনে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আপনার এমন আবেগঘন স্ট্যাটাস দেখিনি। জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিকে যিনি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাকে নূর বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। ভিপি সাব আপনি যে জামায়াত শিবিরের রাজনীতিকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে ঢাবিসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করার কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন সে আশায় গুড়েবালি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আপনার ছলচাতুরী বুঝে গেছেন।’ ইমন হাসান বলেছেন, যিনি নিজের অবৈধ মসনদ টিকিয়ে রাখতে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন নূর তাকেই ‘শহীদ’ ও ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ বলেছেন। ঢাবির এক শিক্ষার্থীর ওপর পাকি প্রেতাত্মা ভর করা সত্যিই হতাশাজনক। রায়হান নামে এক ছাত্র নূরের উদ্দেশে বলেছেন, এতদিন ধরে অভিনয় করার কোন দরকার ছিলনা। সরাসরি বললেই হতো এতদিন কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছ, নূর। তোমার মতো দলকানারা বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়টিও অস্বীকার করে। আবার অনেকেই তার সঙ্গে ঢাবিতে সক্রিয় উগ্রবাদী সংগঠনের সখ্যের ছবি দিয়ে বলেছেন, নূর তার সঙ্গী রাশেদ হচ্ছে শিবিরের এজেন্ট। এ কারণেই এবার ঢাবির প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীরা স্বরস্বতি পূজা নিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করলেও নূর ও তার সঙ্গীরা ছিল প্রায় নীরব। অথচ সরকারবিরোধী ইস্যু পেলেই সবসময় ক্যাম্পাসে দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। আস্তে আস্তে এরা নিজের চেহারা প্রকাশ করছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতপন্থীরা জিয়াকে ‘শহীদ’ ও ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ বলায় নূরের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন অনেকে।
×