বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইমুল আবরার হত্যা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা’র বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এর সঙ্গে কোনভাবেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সম্পর্ক নেই। কারণ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য মামলা হয়নি, মামলা হয়েছে ফৌজদারি অপরাধের কারণে। আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। কোথায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে কি করবে না, সেটি স্বাধীন আদালতের এখতিয়ার। চারদিনের ভারত সফর থেকে ফিরে রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সমসাময়িক বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
প্রথম আলোর বিষয়ে ৪৭ বিশিষ্টজনের বিবৃতির বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, যে কেউ বিবৃতি দিতে পারে। আমাদের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। যে কেউ তার মত প্রকাশ করতেই পারে। কাগজে দেখেছি ৪৭ বিশিষ্টজন এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশে এই ৪৭জন ছাড়াও হাজার হাজার বিশিষ্টজন, বুদ্ধিজীবী আছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, কোন অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য এবং মৃত্যুর পর সেটি লুকানোর অপচেষ্টা, একই সঙ্গে পোস্টমর্টেম ছাড়া দাফনের প্ররোচনা, এগুলো নিশ্চয়ই অপরাধ। এসব অভিযোগের সত্য-মিথ্যা তদন্তে বেরিয়ে আসবে, আদালত তা দেখবে। আর যে বিশিষ্টজনরা বিবৃতি দিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনার যাতে সঠিক বিচার হয়, তাতে যারাই দায়ী, তাদের যাতে সঠিক বিচার হয়, সেজন্যও তারা একদিন বিবৃতি দেবেন বলে আমি আশা করব।
এ প্রসঙ্গে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দিয়েছিল। যখন ফিলিস্তিনে পাখি শিকার করার মতো করে মানুষকে হত্যা করা হয় তখন কিন্তু এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দেয় না। তাহলে সেই সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা আগে কোথায় ছিল সেটি আমি বলতে চাই না, এখন কোথায় গেছে সে নিয়ে তো অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বর্ণযুগ অতিক্রম করছে- ভারত সফর শেষে ড. হাছান
রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বর্ণযুগ অতিক্রম করছে। ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক দু’দেশের জনগণ ও অর্থনীতি জন্য সবসময় সহায়ক হয়।
মন্ত্রী বলেন, এবরেরর ভারত সফর ছিল মূলত ভারতে বাংলাদেশ বেতার সম্প্রচার উদ্বোধনের জন্য। নয়াদিল্লীতে গত ১৪ তারিখ ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকার এবং আমি যৌথভাবে ভারতে চারঘণ্টা সকালে, দু’ঘণ্টা বিকেলে দু’ঘণ্টা বাংলাদেশ বেতারের সম্প্রচার কার্যক্রম এবং আকাশবাণীর দু’ঘণ্টা দু’ঘণ্টা চার ঘণ্টা বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার উদ্বোধন করি। একই সঙ্গে করছি। আপনারা জানেন গত সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার কার্যক্রম সমগ্র ভারতে দূরদর্শনের ডিটিএইচ ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে মুজিববর্ষকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। সেই চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই বহুদূর অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু মূল চুক্তির আলোকে এটি ‘ওয়ার্কিং এ্যাগ্রিমেন্ট’র প্রয়োজনীয়তা ছিল। বাংলাদেশের এফডিসি এবং ভারতের এনএফডিসি’র মধ্যে সেটিও ১৪ তারিখ স্বাক্ষর হয়েছে, জানান ড. হাছান।
তিনি বলেন, এর পর ১৫ তারিখ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সঙ্গে সৌজন্য বেঠক হয়। সেখানে বাংলাদেশ-ভারতের যে সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে যে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, তার নানাদিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক স্বর্ণযুগ অতিক্রম করছে, এটিও সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ড. হাছান জানান, একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়। ভারতে রাইসিনা ডায়ালগে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে ভারতে অবস্থানরত মন্ত্রীদের ডাকা হয়েছিল। যদিও আমি রাইসিনা ডায়ালগে যাইনি, এর পরও আমাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার সঙ্গে আমার সৌজন্য সাক্ষাত হয়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়ার জন্য বলেন।
‘ভারত-বাংলাদেশ চমৎকার সম্পর্কের বিষয়টিও আমরা আলোচনা করি’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে তার সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর ভারতে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুত সেবা পৌঁছে দেয়া, প্রত্যেক মানুষের জন্যে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা এবং স্যানিটেশন কাভারেজ যেটি খুব কম ছিল, সেটি ব্যাপকতর করাসহ তার সরকারের আমলে যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেন এবং একই সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন অগ্রগতি হচ্ছে সে বিষয়েও প্রশংসা করেন।