ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বড়লেখায় চা বাগানে এক ঘণ্টায় ৪ খুন, ঘাতকের আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২০ জানুয়ারি ২০২০

   বড়লেখায় চা বাগানে  এক ঘণ্টায় ৪ খুন, ঘাতকের আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার, ১৯ জানুয়ারি ॥ বড়লেখার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাল্লারতল চা বাগানের এক শ্রমিক রবিবার ভোরে মাত্র এক ঘণ্টায় অন্তত চার জনকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে হত্যাকারী নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। নিহতরা হত্যাকারীর স্ত্রী ও শাশুড়ি। অন্য দুজন প্রতিবেশী। নিহত প্রতিবেশী ও তার মেয়ে ঘাতককে ঠেকানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা আরেকজন চিকিৎসাধীন। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে বিজিপি, পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। সীমান্তবর্তী পাহাড়ী নির্জন এলাকায় এই প্রথম নির্মম লোমহর্ষক এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শোকে মুহ্যমান পাল্লারতল চা বাগানের শ্রমিক, কর্মচারী ও এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাল্লারতল বাজার লাগোয়া নির্জন ওই বাড়িতে বসবাস ছিল বিষ্ণু ব্যানার্জী ও বসন্ত ভক্ত পরিবারের। ওই বাড়িতেই কাছাকাছি আলাদা দু’টি ঘরে বসবাস ছিল দুই পরিবারের। ব্যানার্জী পরিবারের সদস্য ৪ জন, আর ভক্ত পরিবারের সদস্য ৩ জন। বিষ্ণু দীর্ঘদিন নিজ বাড়িতে না থেকে তার আরেক মেয়ের বাড়িতে থাকেন। তার দুই মেয়ের মধ্যে জলি ব্যানার্জী তার স্বামী নির্মল কর্মকার, মা লক্ষ্মী ব্যানার্জী ও চন্দনাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। নির্মল ও জলি দু’জনরেই এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। প্রায় বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের নিজেদের কোন সন্তান ছিল না। চন্দনা ছিল জলির আগের স্বামীর সন্তান। এলাকাবাসী জানায়, নির্মল গেল ৭-৮ মাস থেকে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছে। সে সব সময় চুপচাপ থাকত। এলাকার লোকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলত কম। নির্মল অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত ও মাদকাসক্ত ছিল। প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রবিবার ভোরের দিকে তারা ওই বাড়ি থেকে হল্লা-চিৎকার শুনে এসে এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে পান। বসন্তের ঘরে নির্মলের ঝুলন্ত লাশ ও তার স্ত্রী জলির রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পাশের ঘরে বসন্ত, তার মেয়ে শিউলি ও নির্মলের শাশুড়ি লক্ষ্মীর লাশ পড়ে থাকে। আর মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন আহত বসন্তের স্ত্রী কানন। প্রাণে বেঁচে যায় জলির মেয়ে চন্দনা (১০)। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মল ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায়ে তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর ঠেকাতে আসলে প্রথমে শাশুড়িকে এবং পরে দুই প্রতিবেশীকে কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলে চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে খুনী নিজের ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মল নামে ওই যুবক চার জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। নির্মল ছাড়া তিনজনই চা বাগানের শ্রমিক ও একজন শিক্ষার্থী। রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার) বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে আরও অধিকতর তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলার প্রস্তুতি চলছে। হত্যার শিকার চারজন হলেন, নির্মল কর্মকার (৩৮), তার স্ত্রী জলি ব্যানার্জী (৩৪), তার শাশুড়ি লক্ষ্মী ব্যানার্জী (৪৮) পাশের ঘরের বসন্ত ভক্ত (৫২), বসন্তের মেয়ে শিউলি ভক্ত (১১) ও বসন্তের স্ত্রী সিলেট এমজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিসাধীন আহত কানন ভক্ত (৪৬)।
×