ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবির অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসির সংহতি

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 ঢাবির অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিসির সংহতি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সরস্বতী পূজার দিন আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। টানা অনশনে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে তিন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের অনশনস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। এদিকে শুক্রবার বিকেল চারটায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ, দিনক্ষণ নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের গভীরভাবে ভাবা উচিত ছিল, এই তারিখটি কোন মূল্যবোধ ও চেতনার পরিপন্থী হয় কিনা। অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই তারিখ নিয়ে সময় নষ্ট করা উচিত হবে না। যেহেতু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনেরই সেহেতু তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। তিনি আরও বলেন, সরস্বতী পূজার একটি ধর্মীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ আছে, যার একটি অসাম্প্রদায়িক আবেদন রয়েছে। আবহমান কাল থেকেই বাঙালী সংস্কৃতির শক্তিশালী ধর্মীয় মূল্যবোধ আছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষই সরস্বতী পূজায় অংশ নেয়। বিশেষ করে এর আবেদন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়। ফলে উৎসবটিকে নির্বাচন কমিশনের পুনর্বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল। অসুস্থ হয়ে পড়া অনশনকারীরা হলেন জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস, জিএস কাজল দাস, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের অপূর্ব চক্রবর্তী, সয়েল সাইয়্যেন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অর্ক সাহা, ভবতোষ চন্দ্র রায় ও জয়ন্ত বণিক, ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সবুজ কুমার, পালি এ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের সুকেশ দেবনাথ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রবিউল আওয়াল রবি। দুপুর ১২টার দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় এদের মধ্যে অপূর্ব চক্রবর্তী, অর্ক সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় কিছুটা সুস্থ বোধ করায় তারা আবারও অনশনে যোগ দেন। এছাড়া সুকেশ দেবনাথকে বিকেল পাঁচটায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও অনশনে সংহতি জানিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। তারা হলেন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক অসীম সরকার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারপার্সন নমীতা মন্ডল, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রতন চন্দ্র ঘোষ। এছাড়াও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন, এজিএস সাদ্দাম হোসেন, সদস্য রাইসা নাসের, মাহমুদুল হাসানসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতা অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সরস্বতী পূজার দিন সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে গত ১৪ জানুয়ারি থেকেই আন্দোলন করে আসছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ১৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী গত বুধবার নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করতে গেলে শাহবাগেই পুলিশী বাধার সম্মুখীন হন শিক্ষার্থীরা। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশন শুরু করেন। সরস্বতী পূজার দিন নির্বাচন মানবে না হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ স্টাফ রিপোর্টার জানান, সরস্বতী পূজার দিন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মেনে নেয়নি, মানবে না বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন সরিয়ে নিতে ঢাকাসহ সারাদেশে ৩০ জানুয়ারির পূর্বপর্যন্ত মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান ধর্মঘট, প্রতীকী অনশন, অবরোধ কর্মসূচীসহ নানা কর্মসূচী ঘোষণা করে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পন্থায় সংবিধান সমুন্নত রাখার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। শুক্রবার সকালে ঢাকার ৮৭ পুরানা পল্টন লাইনস্থ পল্টন টাওয়ারের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টাম-লীর যৌথ বর্ধিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুপর্বে অনুষ্ঠিত এ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত কর্তৃক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর ৭৪টি সাংগঠনিক কমিটি ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিরাও ছাড়াও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, নির্মল রোজারিও, মনীন্দ্র কুমার নাথ, নির্মল চ্যাটার্জী, এ্যাডভোকেট তাপস পাল, এ্যাডভোকেট শ্যামল রায়, এ্যাডভোকেট কিশোর মন্ডল প্রমুখ। সভায় নির্বাচন কমিশনের সচিব কর্তৃক ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ একই ভোট কেন্দ্রের এক কক্ষে নির্বাচন, আরেক কক্ষে পূজা অনুষ্ঠান এবং সর্বশেষ পূজার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভক্তকরণের প্রস্তাবনাকে পূজার্থী জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে মনে করে এ প্রস্তাবনাকে ‘বাস্তবতাবিবর্জিত ও অবান্তর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা’ প্রত্যাখ্যান করা হয়। এহেন ধর্মীয় অনুভূতি ক্ষুণ্ণকারী বক্তব্য প্রদানের জন্যে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন সচিবকে তার পদ থেকে অপসারণের জোর দাবি জানিয়ে সুস্পষ্টভাবে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আপামর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইতোমধ্যে মেনে নেয়নি এবং মানবে না। সভায় ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিরোধিতায় দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয় এবং এ আন্দোলনের সূচনায় ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন মানি না, মানব না’ এ দাবিতে দেশব্যাপী আগামী ২০ জানুয়ারি, ২০২০ সোমবার সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চাভুক্ত সকল সংগঠনকে নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্তে বলা হয়, একই দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে ৩০ জানুয়ারির পূর্বপর্যন্ত মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান ধর্মঘট, প্রতীকী অনশন, অবরোধসহ নানান কর্মসূচী ঘোষণা করে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পন্থায় সংবিধান সমুন্নত রাখার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ ও সাধারণ ছাত্র সমাজের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের প্রতি সভায় আন্তরিক সংহতি প্রকাশ করে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বাস্তবায়নে এ আন্দোলন একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। সভায় গৃহীত আরেক সিদ্ধান্তের নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের জন্য ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার মেয়র প্রার্থী সর্বজনাব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও তাবিথ আউয়াল এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তাদ্বয়ের নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি উত্থাপন করায় তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হয়।
×