ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস নাশকতার ছক কষছে তৃতীয় পক্ষ

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

  সিটি নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস নাশকতার ছক কষছে তৃতীয় পক্ষ

শংকর কুমার দে ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস-নাশকতার ছক কষছে তৃতীয় পক্ষ। নির্র্বাচন বিতর্কিত করাই এর উদ্দেশ্য। এই নির্বাচনে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচন ঘিরে বেড়ে গেছে ভাড়া করা সন্ত্রাসী, জঙ্গীদের আনাগোনা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন জমে ওঠায় বিতর্কিত নির্দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার তাপ বাড়ছে। নির্দলীয় বিতর্কিত প্রার্থীদের পক্ষে সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের ভাড়া করে এনে সহিংসতার জন্ম দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পায়নি এমন নির্দলীয় বিতর্কিত প্রার্থীদের পক্ষে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। দুই দলের বাইরের নির্দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই কালো টাকা ছড়াচ্ছেন। অর্ধ শতাধিক বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘিরে নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসী ও নাশকতা কর্মকা-ের আশঙ্কা করা হচ্ছে বেশি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মাদক, চাঁদাবাজি ও দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে এমন অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারও কারও সঙ্গে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরও যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে দুই সিটির মেয়র নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। নির্দলীয় বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সামনে রেখে সন্ত্রাস, নাশকতার সুযোগ নিতে পারে তৃতীয় পক্ষ। সন্ত্রাসী, জঙ্গী, ওয়ারেন্টের আসামি ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গতিবিধির ওপর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী প্রচারাভিযান জমে ওঠায় উত্তেজনাও বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই কারও না কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এই ধরনের অভিযোগ থেকেই সন্ত্রাস, নাশকতার আশঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নির্বাচন বিতর্কিত করার জন্য তৃতীয় পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই নানা ধরনের কর্মকান্ডের ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। নির্বাচনী প্রচার ঘিরে যাতে আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সে জন্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আগুন সন্ত্রাস, বোমাবাজি, সন্ত্রাসী হামলা মামলার আসামিদের অনেকেই এবারের দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও কোন কোন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বিষয়ে তথ্য নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। পলাতক জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরাও প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ও বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ দলীয় জোটের নেতৃত্বে আছে বিএনপি। এই জোটে আছে জামায়াত শিবির, জঙ্গী ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সংগঠনের তৎপরতা শুরু হওয়ার খবর পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এই জোটের মধ্যে যারা মামলার আসামি তাদের কর্মকান্ডের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর খবর পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে দেশে আগামীতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছক কষা হচ্ছে। এ জন্যই দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন হলেও দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে কলকাঠি নাড়া শুরু করেছে তৃতীয় পক্ষ। নির্বাচনে নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নির্বাচন বানচাল, বিতর্কিত নানা ধরনের কর্মকান্ডের ছক কষছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এই ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের প্রতি নজর দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে রাজধানী ঢাকা নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
×