ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রার্থীদের মিছিল স্লোগানে মুখর ঢাকা মহানগরী

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

 প্রার্থীদের মিছিল স্লোগানে মুখর ঢাকা মহানগরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিন যত যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। প্রার্থীদের পাশাপাশি সব দল সমর্থক কর্মীরা সরব। পাড়ামহল্লা এখন মিছিলের নগরী। শুক্রবার সকাল থেকে প্রার্থীদের পক্ষে মিছিল স্লোগানে মুখরিত নগরী। মেয়র ছাড়া কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্যও চলে ভোটপ্রার্থনা। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই পথচলা থামবে না। প্রচারে নেমে সব প্রার্থীই ভোট, দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। যাকে পাচ্ছেন বুকের টেনে নিচ্ছেন, যদি মনটা গলানো যায়। ভোটাররা অনেক ভেবেচিন্তে হিসাব কষছেন। দুই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৩ প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে ছয় প্রার্থীরই সরব উপস্থিতি। ১৩ প্রার্থীর মধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল ফজলে নূর তাপস ও ইশরাক হোসেন প্রতিদিনই ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। সিপিবির প্রার্থী আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেলও বসে নেই। তিনি প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ছুটছেন। তিনি ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। দেরিতে হলেও দক্ষিণের জাপা প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন মিলনও এখন গণসংযোগে বেশ ব্যস্ত। ভোটারদের কাছে ভোটপ্রার্থনা করছেন। নির্বাচিত হলে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অপরদিকে দুই সিটিতে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়েছে ঢাকা শহর। প্রার্থীর খবর পাওয়া না গেলেও সমর্থকদের সবর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পাড়ামহল্লায় দল বেঁধে সমর্থকদের লিফলেট বিতরণ চোখে পড়ে। এছাড়া ঢাকা উত্তরের এনপিপি প্রার্থী আনিসুর রহমান দেয়ানের পোস্টার দেখা গেলেও তাকে মাঠে সক্রিয় দেখা যায়নি। উত্তরে পিডিপির শাহীন খান মেয়র প্রার্থী অথচ মাঠে তাকে দেখা যায়নি। দক্ষিণে এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ মেয়রপ্রার্থী হলেও নেই ভোটের মাঠে। পোস্টারের পাশাপাশি পথসভা ঘরোয়া সভায় এখন শুধুই ভোটের আলাপ। প্রার্থীর ক্যাম্প এখন কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে মাইকিংয়ের মাধ্যমে ভোটপ্রার্থনা। তবে কোথাও কোথাও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে উত্তর সিটির কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে বড় বড় ব্যানারে চলছে ভোটের প্রচার। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ হলেও জুমার নামাজে কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোটপ্রার্থনা করতে দেখা গেছে। দুপুরের পর মাইকিংয়ে বিধান থাকলেও বেশিরভাগ প্রার্থীরা এই বিধান মেনে চলছেন না। সকাল ১০টার পরই মাইকিং শুরু হচ্ছে। তিন ভোটের প্রার্থনা ভোটাররা একসঙ্গে তিনটি ভোট দিতে পারবেন। একটি মেয়র পদে অন্য দুটি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের। কাউন্সিলরদের দলীয় প্রতীক না থাকায় পরিচয় নিশ্চিত করতে একসঙ্গে তিনটি পদে প্রার্থীদের জন্য ভোট প্রার্থনা চলছে। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের কাছে ভোট ও দোয়া চেয়েছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটিছেন। সরস্বতী পূজার কারণে নির্বাচন পেছাবে কিনা তা নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচন পেছাতে তাদের আপত্তি নেই। তবে এ বিষয়ে হাইকোর্ট রিট খারিজ করে দিলেও আপীল বিভাগে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে। এখন শুনানির জন্য অপেক্ষা। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন পেছানোর পক্ষেই মত দিয়েছেন। তবে নির্বাচন পেছাবে কিনা সেটা নির্বাচন কমিশন ও আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়। তাপসের প্রচার শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী তাপস পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়া, বংশাল, আরমানিটোলা প্রচার চালিয়েছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমিই একমাত্র প্রার্থী যে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা নিয়ে চিন্তা করে সুনির্দিষ্ট উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি। পাঁচ ভাগে উন্নয়নের রূপরেখা ভাগ করেছি। ঢাকাকে ভালবাসি। ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে চাই। ঐতিহাসিক ঢাকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা পুনরুজ্জীবিত করে উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব। তিনি বলেন উন্নয়নের রূপরেখা ঢাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছেন। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্বাচিত করে জনগণ তাঁদের সেবক হিসেবে দায়িত্ব দেবে, এটা আমরা আশা করছি। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। দুপুরে আরমানিটোলার তারা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন তাপস। এরপর চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে তাপস নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। তাপসের আগমন উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। ইশরাকের প্রচার এদিকে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন শুক্রবার রাজধানীর কদমতলী থানার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এর আগে দেয়া এক পথ সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, নির্বাচিত হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া হবে। বিএনপি সমর্থিত সকল কাউন্সিলরকে ভোট দেবেন। তারা আমাদের সঙ্গে সংগ্রামে যুক্ত। বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ৩০ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে আসবেন। রাজপথে দেখা হবে। আপনাদের জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত। নির্বাচিত হলে প্রথমেই এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ঢাকা ওয়াসাকে সঙ্গে নিয়ে এলাকা আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিশুদ্ধ পানির সঞ্চালনের জন্য ওয়াসার সঙ্গে বসে আমরা সেই সঞ্চালন লাইন প্রতিস্থাপন করব। ডেঙ্গুর বিষয়ে পুরো ঢাকার ওপর আমাদের একটা কার্যক্রম রয়েছে। যথা সময়ে, যথা পরিমাণে, যথাযোগ্য মানের ওষুধ প্রয়োগ করে এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ সময় ইশরাকের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিনসহ স্থানীয় পর্যায়ের কয়েক শ’ নেতাকর্মী। মিলন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে তিনি গণসংযোগ শুরু করেন। সেখান থেকে মতিঝিল, গোপীবাগ, ধলপুর, টিকাটুলী, রাজধানী মার্কেট, ওয়ারী, জজকোর্ট প্রাঙ্গণ, শ্যামবাজার, সদরঘাট, মিটফোর্ড ও লালবাগে লাঙল মার্কায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নেন। গণসংযোগকালে তিনি সাতটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন। পথসভায় বক্তব্যকালে তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ যেমনভাবে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে ঢাকা মহানগরকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, আমিও ঢাকাবাসীর সেবক হতে চাই। আমি নির্বাচিত হতে পারলে ড্রেনেজ সমস্যা, যানজট নিরসন এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকা উপহার দেব। উত্তরের আতিকের প্রচার এদিন ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মিরপুরের বাউনিয়াবাধ থেকে প্রচারণা শুরু করেন। প্রচার শুরু আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি বলেন, মেয়র পদে নির্বাচিত হলে যা কিছু আছে তা দিয়েই জনগণের সেবা করব। মেয়র ও কাউন্সিলরদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। নিজের ও কাউন্সিলরদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ করাসহ প্রতিমাসে এলাকাবাসীর সঙ্গে কাউন্সিলরদের নিয়ে সিটি হল মিটিং করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, ছয় মাসের মধ্যে বাউনিয়া এলাকা প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, যেখানে ২০ ফিট রাস্তা আছে সেটিকে অন্তত ৬০ ফিট করতে হবে। আপনারা এ এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইনসহ প্রশস্ত রাস্তা চেয়েছেন। দায়িত্ব নিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে এখানে স্যুয়ারেজ লাইন হবে। বাতি থাকবে। কীভাবে হবে? কারণ বিগত নয় মাস ধরে এ কাজ শুরু করেছি। সেই কাজ অব্যাহত রাখতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। কারণ নৌকার কোন ব্যাক গিয়ার নেই। ফ্রন্ট গিয়ার শুধু। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাবিথ আউয়াল শুক্রবার সারাদিন মোহাম্মদপুরে প্রচার চালান উত্তরের বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ। নুরজাহান রোডে নির্বাচনী প্রচারে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রতিদিন ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই নির্বাচনী প্রচার শুরু করছি। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। যেখানেই যাই জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখানেও জনগণ সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিল। সাধারণ নাগরিকরা অনেক উৎফুল্ল মনে এগিয়ে আসছে। যে রকম সাড়া পাচ্ছি, এতে বিশ্বাস করি যদি আগামী ৩০ জানুয়ারি এরকমভাবে শৃঙ্খলা থাকে তাহলে আমাদের নিশ্চিত বিজয় হবে। তিনি বলেন, পূজার দিন নির্বাচন দিয়ে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে তারা হাস্যকর ও অসম্মানজনক মন্তব্যও করছেন। পূজার দিনে নির্বাচন কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। এ বিষয়ে আপীল বিভাগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। সাজেদুল হক রুবেল উত্তরের সিপিবির মেয়র প্রার্থী ডাঃ রুবেল শুক্রবার তেজগাঁও রেলগেট খালপাড়া, ফার্মগেট তেজকুনিপাড়ায় গণসংযোগ করে বিকেল ৩টায় নাবিস্কোয় পথসভা করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ শ্রমজীবী, মেহনতী, মধ্যবিত্ত ও বস্তিবাসীদের স্বার্থে আগের সিটি মেয়ররা কোন কাজ করেননি। সিটি কর্পোরেশন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও নগরবাসীর তা কাজে আসেনি। তিনি বলেন, এই দুর্নীতির কবল থেকে সিটি কর্পোরেশনকে মুক্ত করতে হলে লুটেরা বা ব্যবসায়ী নেতা দিয়ে তা হবে না। এ জন্য দরকার সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব। তিনি দুর্নীতিমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ে তুলতে ও মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বার্থে কাস্তে মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করার দাবি জানান।
×