ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইভিএমে ইচ্ছে মতো ভোট কারচুপি করা যায় : ফখরুল

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ইভিএমে ইচ্ছে মতো ভোট কারচুপি করা যায়  : ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইভিএমে ইচ্ছে মতো ভোট কারচুপি করা যায় অভিযোগ করে অবিলম্বে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে গুম হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ১০টি পরিবারের সন্তানদের হাতে হাতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। ফখরুল বলেন, আমরা ইভিএমের বিরোধিতা করছি এ কারণে যে, এ পদ্ধতিতে কখনোই মানুষের রায় প্রতিফলন হবে না। তাই আমরা এখনো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এ পদ্ধতিতে করার বিরোধিতা করছি। তিনি বলেন, সোমবার চট্টগ্রামে উপনির্বাচন হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতেই দেয়া হয়নি। তার আগেই বোমা মেরে লাঠিসোটা দিয়ে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও জিজ্ঞাসা করলে বলবে যে, আপনারা পারেননি। পারবো কোত্থেকে? গুন্ডামি আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যারা করে তাদের সঙ্গে ভদ্রলোকেরা সাধারণ পারবে কিভাবে? ফখরুল বলেন, যারা ভোটার তারা তো মারামারি করে না। তারা তাদের অধিকারটা প্রয়োগ করতে চায়, সেটা প্রয়োগ করতে দেয়া হয় না। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এমন একটা সমাজ তৈরি করছে, এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি করছে, যে সমাজ এবং রাষ্ট্র এদেশের মানুষের ভবিষ্যতকে তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সেজন্য বলি যে, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। তারপরও বলি, হতাশ হবেন না, ছেড়ে দেবেন না। যত কষ্ট আসুক, যত যন্ত্রণা আসুক, যত অত্যাচার-লাঞ্ছনা আসুক এদেশের মানুষ বার বার উঠে দাঁড়িয়েছে। সব জায়গায় প্রতিরোধ হচ্ছে, প্রতিরোধ হবে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত কর্মকর্তাদের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, কার কি ব্যাকগ্রাউন্ড আমরা জানি। যাদের কোন মোরালিটি নেই তাদেরকেই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। আর সেই মানুষগুলোই সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভোটে ইভিএম এনেছে, যে ইভিএমকে ইচ্ছে মতো ম্যানিপুলেটেড করা যায়। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের ছোট ছোট সন্তানদের দিকে তাকিয়ে আবেগপ্রবণ কণ্ঠে ফখরুল বলেন, আজকে শিশুরা এখানে আছে। ওরা প্রতিমুহুর্তে ভাবে যে, তার বাবা ফিরে আসবে। মায়েরা ভাবেন যে, এই বোধহয় ছেলে দরজা নক করলো। স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকেন- কখন তার প্রিয় মানুষটা পাশে আসবে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে এখন একটা অসহনীয় দম বন্ধ করা পরিবেশ বিরাজ করছে। এ সমাজ কিভাবে এই ধরনের একটা পরিস্থিতি সহ্য করছে এটাও একটা চিন্তার ব্যাপার। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের স্বপ্নগুলোকে ছারখার করে দিয়েছে, তছনছ করে দিয়েছে। এজন্য তাদের দাম্বিকতার শেষ নেই। তাদের কথা শুনবেন, তারা যে বক্তব্য রাখে, তারা যে কথা বলে, তার মধ্যে তাদের যে দাম্বিকতা প্রকাশ পায়। এ জন্য কখনও তাদের অনুতাপ হয় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে উঠে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেই দেশের গুমুট পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, যারা আমাদের সরকারে আছেন তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন। তারা যখন বক্তব্য রাখেন মনে হয় যেন কিছুই হয়নি দেশে, চমৎকার পরিবেশ আছে, দেশের মানুষ খুব ভালো আছে। অথচ প্রতিদিন পত্রিকায় দেখবেন একটা হত্যার মহোৎসব চলছে। আজকে একটা মারাত্মক খবর দেখলাম মহাসড়কে মানুষের শরীরের অংশ ছিটিয়ে ছিটিয়ে আছে। তিন-চার বছরের শিশুকে পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে। এই যে হত্যা, শ্লীলতাহানি, এ যেন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। মানুষ এখন আর কথা বলে না, কথা বলার সুযোগ নেই। এটাই চেয়েছিলো সরকার ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেশে পুরো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সমাজটাকে নষ্ট করে দিয়েছে, আমাদের সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট করে দিয়েছে। এমন একটা সমাজ তারা তৈরি করেছে যে সমাজে সন্তানদের মানুষের মতো বেড়ে উঠার সুযোগ নেই। আজ তারা যেটা করছে সেটা হচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তিনি বলেন, সরকারের প্রতিহিংসায় কারাবন্দী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতার পরও সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না, জামিনযোগ্য মামলায় তাঁকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। ফখরুল বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমরা সরকারের আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি। আওয়ামী লীগ যারা স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বে সংগ্রাম করেছিলো, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছিলো তারাই স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে দানবে পরিণত হয়েছে। একবার তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলো। ২০০৮ সালের পরে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে, নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সংবিধান সংশোধন করেছে। এই দেশ সৃষ্টির যে চেতনা ছিলো, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিলো তাকে ধবংস করে দিয়েছে, গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে দিয়েছে। তারা তাদের শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করবার জন্য রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করছে। এমন একটা প্রতিষ্ঠান নেই যে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে তারা বংশবদ করে ফেলেনি। এর মধ্যে যারা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন, রাজপথে নেমে এসেছিলেন তারা আজকে অনেকে আমাদের মাঝে নেই। গোটা জাতিকে একটা নির্যাতনের কারখানায় নিক্ষেপ করেছে সরকার। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, শফিউল বারী বাবু, মামুন হাসান, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, হেল্প সেলের নেতা নাসির উদ্দিন শাওন প্রমুখ।
×