ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মৃতিসৌধের মূল মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী অসমাপ্ত সবকিছুই করা হবে ॥ গণপূর্ত মন্ত্র

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

স্মৃতিসৌধের মূল মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী অসমাপ্ত সবকিছুই করা হবে ॥ গণপূর্ত মন্ত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী অসমাপ্ত সবকিছুই করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এছাড়া খালেদা জিয়ার প্রতিপক্ষ এখন স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সরকার নয় তাই তার মতো দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সরকার কোনভাবেই জামিনে সাহায্য করার প্রশ্নই উঠে না বলেছেন তিনি। শুক্রবার সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান বিজয় দিবস ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। একইসাথে ময়লা পরিস্কারের ন্যয় ঘুষ খেয়ে ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে অপরিচ্ছন্ন করা সমাজকেও পরিচ্ছন্ন করতে চান বলেছেন মন্ত্রী। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান ও মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাহাদাত হোসেনসহ মন্ত্রণালেেয়র ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভি এবং রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন। এরপর দুপুরে মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ উপলক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রস্তুতি কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন গণপূর্ত মন্ত্রী। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন সংক্রান্ত সরকার কোন প্রকার সহায়তা করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম এ সময় বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কারাদন্ড প্রাপ্ত হয়েছেন। তার দুর্নীতির দায় নিয়ে সরকার তাকে মুক্ত করে দেবে একথা ভাবা আহম্মকী ও আইনের পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। ফলে কোনভাবেই দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সরকার সাহায্য করার প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের বিবেচনায় রয়েছে। এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিপক্ষ স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। এক্ষেত্রে সরকারকে অভিযুক্ত করা একবারেই অযৌক্তিক। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এখন দেউলিয়া। এই বিএনপিকে দিয়ে দেশে কিছুই হবে না। পরিদর্শনকালীন মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রস্তুতি কাজের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পূর্তমন্ত্রী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ যাতে যথাযথ ভাব-গাম্ভীর্য এর মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন, সে জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করার জন্য আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি কাজ ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজও অতিশীঘ্রই সম্পন্ন হবে। বলা যায়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ গোটা জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এখন প্রস্তুত। পরিদর্শনকালীন মন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং প্রস্তুতি কাজের বিভিন্ন বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, প্রতিবছর মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়াধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে নতুন সাজ-সজ্জা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হয়। এরপর শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রী দুপরে মহান বিজয় দিবস ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষ্যে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়াধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রস্তুতিমূলক কাজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান ও মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাহাদাত হোসেন,রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড.সুলতান আহমেদ,জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ রাশিদুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালীন মন্ত্রী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রস্তুতি কাজের বিভিন্ন বিষয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন তিনি। মন্ত্রী এ সময় প্যারেড গ্রাউন্ড ও তার আশেপাশের সমস্ত জঙ্গল পরিষ্কার কাজ, প্যারেডে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা তৈরী, প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গফুট গ্যালারীর উপর প্যান্ডেল নির্মাণকাজ, ২০ সিটের ভিভিআইপি,২০০ সিটের সোফাসহ প্রায় ৩৫,০০০ আসন ব্যবস্থা তৈরী, পার্কিং ব্যবস্থাপনা ও দশকদের সংশৃংখল প্রবেশের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ, প্যারেড গ্রাউন্ড ও তার আশেপাশের সমস্ত জঙ্গল পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন কি না, প্যারেড গ্রাউন্ড-এ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পোল, লাইন স্থাপনসহ বাতির ব্যবস্থা অঅছে কি না ,গ্যালারী, প্যারাস্যুট জাম্পিং-এর স্থানসহ বিভিন্ন স্থানের ছোট-বড় ঘাস কাটা ও লেভেলিং ড্রেসিং ব্যবস্থা যাচাই করা,বিভিন্ন স্থাপনার মেরামত ও রংকরণ হয়েছে কি না, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাস্তা মেরামত কাজ, প্রায় ৩.৫০ কিলোমিটার গ্যালারীর সামনের বাগান তৈরী, বজ্রপাতে সুরক্ষিত থাকার জন্য বিভিন্ন লোকেশনে লাইটেনিং এ্যারেস্টার স্থাপন কাজ সঠিকভাবে হয়েছে কি না তা পরিদর্শন করেন। এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। মন্ত্রী এর আগে সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভি এবং রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল অন্যায়,অবিচার,বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ এখনও চলমান। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। কিন্তু অন্যান্য কিছু পরাধীনতা আছে, সেখান থেকে কিন্তু এখনও মুক্তি আসেনি। ময়লা পরিস্কারের ন্যয় ঘুষ খেয়ে ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে অপরিচ্ছন্ন করা সমাজকেও পরিচ্ছন্ন করতে চাইএ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান ও মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রসূল ভূঁইয়া, চিত্রনায়ক রিয়াজ, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান, বাংলাদেশ স্কাউটস্ এর সদস্যবৃন্দ ও সিটি কর্পোরেশেনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে পরিচ্ছন্নতার শপথ বাক্য পাঠ করান এবং পরিচ্ছন্নতার স্বপ্ন নিয়ে স্কাউটস্ সদস্যদের হাতে পরিচ্ছন্নতার টর্চ তুলে দেন গণপূর্ত মন্ত্রী। কী সেই পরাধীনতা, তা তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, সেই পরাধীনতা হলো অনৈতিকতার সঙ্গে যারা জড়িত, দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত, সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত,ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত, খারাপ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ কিন্তু চলমান। মন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। তারা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তারা নীতি-নৈতিকতাপূর্ণ বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তারা ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দূর করার বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তারা বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের লালন, চর্চা ধারণের বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। আজকে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে সেই পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ সূচিত হতে যাচ্ছে। যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আপনাদের সকলকে নিয়ে। আমি যদি ঘুষ খাই, দুর্নীতিতে জড়িত হই, সেটা হলো সমাজকে অপরিচ্ছন্ন করা। সেখানটাও আমরা পরিচ্ছন্ন করতে চাই’, যোগ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু দুর্নীতির বিরুদ্ধে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, আপনারা জানেন যে,এ দেশের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চালানো অত্যন্ত কঠিন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেখানে বিপদ-আপদ জারি আছে। সেই জায়গাতে মন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। সকল দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে তিনি লড়ে যাচ্ছেন। ভূমি দুস্য, ভবন দস্যু, বাজার দস্যু, চাঁদাবাজ সবকিছুর বিরুদ্ধে তিনি লড়ছেন। তার সাহস ও নৈতিক শক্তির জন্য তাকে আমরা সাধুবাদ জানাতে পারি। তিনি সকলকে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
×