ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমিরাতের ‘রেক ব্যাংক’ প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহী

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

আমিরাতের ‘রেক ব্যাংক’ প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহী

ফিরোজ মান্না ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘রেক ব্যাংক’ প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্স বৈধপথে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জন্য রেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ডাক বিভাগের ‘নগদ’ প্রকল্পের সহযোগিতা চেয়েছে। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের সদস্য শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মুয়াল্লা ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশটি থেকে অবৈধ পথে বেশি রেমিটেন্স আসছে। বাংলাদেশ সরকারও বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলার মধ্যেই রেক ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। বৈধপথে রেমিটেন্স না আসার কারণে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বৈঠকে শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আরব আমিরাতের রেক ব্যাংকের সঙ্গে ডাকঘর, নগদ এবং ডাক টাকার মাধ্যমে আরব আমিরাতে কর্মরতদের রেমিটেন্স-তাদের প্রাপকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তার এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক কর্মী কাজ করেন। শুধু তাই না-মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ওইসব দেশ থেকে যদি বৈধ পথে বেশিরভাগ কর্মীরা টাকা পাঠান তাহলে সরকার লাভবান হবে। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অকৃত্রিম এক বন্ধু উল্লেখ করে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শ্রম বাজার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় এবং গতিশীল নেতৃত্বে টেলিযোগাযোগ খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হিসেবে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রতিবছর প্রচুর দক্ষ জনসম্পদ তৈরি হচ্ছে। এই খাতে আরব আমিরাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগে দু’দেশই উপকৃত হবে। প্রযুক্তির লেটেস্ট ভার্সন ফাইভ জি বাংলাদেশ ২০২১ সালে চালু হবে। ফাইভজিসহ টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন শাখায় বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত লাভজনক একটি দেশ। সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে ফাইভ জিসহ টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন শাখায় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রবাসীদের টাকা দেশে তাদের প্রাপকের হাতে পৌঁছানোর জন্য ডাক বিভাগকে সহযোগী হিসাবে পাওয়ার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ডাক বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের এক কোটির বেশি মানুষ চাকরি নিয়ে গেছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকা। বৈধ চ্যানেলের পাশাপাশি অবৈধ চ্যানেলের (হু-ি) মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ টাকা দেশে আসছে। হু-ির মাধ্যমে যাতে প্রবাসীরা দেশে টাকা না পাঠান সেজন্য নতুন অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। আর এ জন্য নতুন বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে হু-ির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা ও পরিমাণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য এই ছয় দেশ থেকেই দুই-তৃতীয়াংশ রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় দেশে আসে। ঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বের সব দেশ মিলিয়ে যে পরিমাণ বাংলাদেশী থাকেন, তার সংখ্যা এক কোটির বেশি বলে ধরা হয়। যাদের বলা হয় বাংলাদেশের বাইরে আরেকটি বাংলাদেশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবাসী আয়ের অবদান ধরা হয় ১০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক উপায় বা অবৈধপথ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশি ঘটছে এবং দেশগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং ও হু-ির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এর একটি কারণ হতে পারে দেশে দেশে দ্রুত অর্থ পাঠানোর সুবিধা ও কম খরচ। এছাড়া রয়েছে বিনিময় হারের পার্থক্য। অর্থাৎ বিদেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ও হু-ির মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠালে দেশে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয়, তার চেয়ে কম পাওয়া যায় বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠালে। সেজন্য অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেল এড়িয়ে অবৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠান। বর্তমানে বৈধ চ্যানেলকে শিথিল করা হয়েছে। কর্মীরা যাতে বৈধ চ্যানেলে টাকা সহজে পাঠাতে পারেন তার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রবাসীদের স্বজনরাও যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানো টাকা হাতে পান সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হয়েছে বৈধপথে টাকা পাঠানোর জন্য। এ কারণেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেক ব্যাংক এগিয়ে এসেছে।
×