ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় ঢাকার উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

জলবায়ু আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় ঢাকার উদ্বেগ

কাওসার রহমান, মাদ্রিদ (স্পেন) থেকে ॥ মাদ্রিদে চলমান জলবায়ু আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় বাংলাদেশ হতাশা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে এবারের আলোচনার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কোন প্রকার বিলম্ব ছাড়াই ইস্যু ৩টির দ্রুত নিষ্পত্তির জোর দাবি জানিয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৭টায় সম্মেলনের প্রেস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মোঃ সাহাব উদ্দিন এ দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনে গত ৮ দিন ধরে আলোচনায় এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আমরা হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। আমাদের হাতে আর মাত্র দু’দিন সময় আছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে কোন সমঝোতা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’ মন্ত্রী বলেন, অভিযোজন, প্রশমন ও অর্থায়নের বেশির ভাগ এজেন্ডাতেই কোন অগ্রগতি নেই। যদিও বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাগুলোতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসতে চাইছেন। আমরা তিনটি ইস্যুতে কোন প্রকার বিলম্ব ছাড়াই সমাধান চাই। এর প্রথমটি হচ্ছে কার্বন হ্রাস সংক্রান্ত আর্টিকেল, প্যারিস চুক্তির অন্যতম এই ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোন সমঝোতা হয়নি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে লস এ্যান্ড ডেমেজ। অভিযোজনের বাইরে লস এ্যান্ড ডেমেজের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পৃথক আর্থিক ম্যাকানিজম প্রতিষ্ঠার প্রধান বিষয়ই এই আলোচনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি জরুরী ইস্যু। এই ইস্যুটিও এখন পর্যন্ত অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘খুব স্বল্প সময়ে ২৫তম জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের জন্য চিলির প্রেসিডেন্সি এবং স্পেন সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবারের জলবায়ু সম্মেলনকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরব উপস্থিতিই এর প্রমাণ করে।’ তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব হুমকি মোকাবেলায় ব্যর্থতার কারণে পৃথিবীতে মারাত্মক সব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন। ফলে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ব্যাপক কমিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা এখনও শুনেই যাচ্ছি। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে কোন ভুল করা যাবে না। আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ বসবাসের জন্য আমাদের রয়েছে একটিই মাত্র পৃথিবী। কোন জাতি কিংবা কেউই এর থেকে রেহাই পাব না। এই অবস্থা চলতে থাকে আজ হোক কাল হোক আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ নিয়েই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এই কাজটি করছে পরিকল্পিতভাবেই। কারণ এর কোন বিকল্প নেই। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ ৮ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এটা অর্জন করতে হচ্ছে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য।’ বাংলাদেশের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী আরও বলেন, গত এক দশক ধরেই অভিযোজন ও প্রশামন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ তার বাজেট থেকে প্রতি বছর ১০০ কোটি মার্কিন ডলার করে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে আসছে। খুব অল্প কিছু দেশের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে ৬০ লাখ সৌর বিদ্যুত প্যানেল স্থাপন করেছে। ৪০ লাখ উন্নত রান্নার চুলা বিতরণ করা হয়েছে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্য। আমরা জ্বালানি, পরিবহন ও শিল্প খাত থেকে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্য এনডিসি অনুমোদন করেছি। আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে আমরা আমাদের কার্বন নির্গমন কমাতে চাই। এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলো ইউএনএফসিসি কনভেনশনের আওতায় অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। ২০১৪ সালের জলবায়ু সম্মেলনে তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা পূরণে বদ্ধপরিকর। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমাদের কার্বন নির্গমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় কার্বন নির্গমণের বেশি হবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ ও সক্ষমতা নিয়ে জলাবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক প্রভাব মোকাবেলা করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাছে একটি বিষয় এখনও পরিষ্কার নয় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে যা করছে তা কী যথেষ্ঠ?’ মন্ত্রী দুটি সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘দুটি বিষয় এখন আমাদের সামনে বড় হয়ে উঠেছে। একটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে যারা দায়াবদ্ধ তারা কী বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার মতো কার্বন নির্গমন হ্রাস করছে? দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, যে সকল দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তারা কী পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পর্যাপ্ত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পাচ্ছে? বৈশ্বিকভাবে আমরা এখনও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে জরুরী অবস্থা অনুধাবন ও প্রতিশ্রতি থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। যা আমাদের মতো দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।’ এ সময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আমারা গ্লোবাল কমিশন অন এ্যাডাপটেশনের আওতায় বাংলাদেশে আঞ্চলিক ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাডাপটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। আমাদের জাতীয় সংসদ জলবায়ু পরিবর্তনের আসন্ন সঙ্কটকে বিবেচনা করে ‘পার্লামেন্টারি ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো অবস্থা বিবেচনা করে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা করার জন্য বিশ্ববাসীকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আমাদের জাতীয় সংসদ এই বিবৃতি অনুমোদন করেছে। মানব জাতির টিকে থাকার জন্যই আমরা এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
×