ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাবি উপাচার্যের ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ করলো আন্দোলনকারীরা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

জাবি উপাচার্যের ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ করলো আন্দোলনকারীরা

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ‘আর্থিক দুর্নীতি এবং অতীত দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার’ সংবলিত তথ্য পুস্তক আকারে প্রকাশ করেছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত পুস্তকটি প্রকাশ করা হয়। এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, “এটি একটি অসম্পূর্ণ প্রকাশ। সময় স্বল্পতার কারণে আমার এই উপাচার্যের সকল দুর্নীতি বইটিতে যুক্ত করতে পারিনি। পরবর্তী সংস্করণে আমরা এই উপাচার্যের আরো অনেক দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে।” ২২৪ পৃষ্ঠার পুস্তকটিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, অপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যানের সংকট, উপাচার্যের দুর্নীতির পূর্বাপর, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বৃত্তান্ত, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনসহ উপাচার্যের নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, আমাদের আন্দোলনের বর্তমান এক দফা কর্মসূচি হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত উপাচার্যের অপসারণ। জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ, সে ব্যাপারে উপাচার্যের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তা, ছাত্রলীগের একাধিক নেতার স্বীকারোক্তি, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে দুর্নীতি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করার কলঙ্ক যেই ব্যক্তির, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কোনো অধিকার নেই তার। এসময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক জামাল উদ্দীন রুনু বলেন, “বর্তমান উপাচার্যের প্রশাসনিক অযোগ্যতার কারণেই উনি পেটুয়া বাহিনী দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে চাচ্ছেন। আমরা এই উপাচার্যের অপসারণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতিবাজদের যে চক্র তৈরি হয়েছে তা আমরা চাইনা। পুস্তকটিতে ৭ দফা দাবিসহ দুর্নীতিবিরোধী ইশতেহার তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- (১) বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সমস্ত প্রশাসনিক, একাডেমিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক হিসাব জনপরিসরে প্রাকাশ করতে হবে। (২) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, সংশোধন এবং যে কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নে সকল অংশীজনের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। (৩) বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অচলাবস্থা সৃষ্টি না হলে উপাচার্য তার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন না। (৪) উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা হবে না। (৫) ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। (৬) পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে। (৭) সমস্ত বাণিজ্যিক কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এদিকে দুর্নীতির তদন্তে যাতে দীর্ঘসূত্রিতানা হয় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। যত দ্রুত সম্ভব তদন্তের ফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্ক মুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. খবির উদ্দিন, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরি জয়, ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান প্রমুখ।
×