ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ন্যায়বিচার চাই ॥ বিচারকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

ন্যায়বিচার চাই ॥ বিচারকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মেধা-মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি আশা করি দেশ, জনগণ এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকগণ আপনারা আপনাদের মেধা-মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। আমি চাই না যে, আমার মতো স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বছরের পর বছর কেউ অপেক্ষা করুক। সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, আইনের আশ্রয় পায়- যেটা আমাদের পবিত্র সংবিধানে আছে।’ শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ন্যায়বিচার’ শীর্ষক দিনব্যাপী জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব অনুযায়ী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ জোরদারে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মোঃ গোলাম সারোয়ার, সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার মোঃ আলী আকবর এবং মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র দায়রা জজ হোসনে আরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ এবং সারাদেশের নিম্ন আদালতের বিচারকগণ সম্মেলনে যোগ দেন। জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ-নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে অবশ্যই যথাযথ সমন্বয় ও সুসম্পর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমি সব সময়ে বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের জন্য অনিবার্য। এই বিভাগগুলো তাদের নিজেদের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। ন্যায়বিচার, শান্তি এবং সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই বিভাগগুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় জরুরী। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস বেড়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ, যেমন জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক বাধা ছিল। সেই বাধা অতিক্রম করে এই রায় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে এবং এরকম বহু ঘটনা। সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদ ছাড়াও কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন যে, একটা ছাত্রীকে (নুসরাত) কীভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সেই বিচারের রায়সহ অনেকগুলো রায় খুব দ্রুত দেয়ার ফলে আমি বলব বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনটি অঙ্গ চলবে তাদের নিজস্ব আইন দ্বারা, নীতি দ্বারা। আবার তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে, যা দেশকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেটা মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া এবং উন্নয়নের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমরা এমন একটি অবস্থান আশাকরি যেখানে রাষ্ট্রের এই তিনটি বিভাগ একে অপরের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না। এতে ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখা ও সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিঘœ ঘটবে না। আর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ তৈরি করেছেন এবং এটি পরিবর্তনের কর্তৃত্ব কেবল তারই। তিনি (রাষ্ট্রপতি) ‘রুলস অব বিজনেস’ও তৈরি করেছেন। সংবিধানের ৫১(১) এবং ৫৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কার্যক্রম নিয়ে আদালতে কোন প্রশ্ন উঠতে পারবে না। তবে কখনও কখনও রাষ্ট্রপতির জুরিসডিকশনের অধীন ইস্যুতে অর্ডার দিতে দেখছি। একের কাজে আরেক জন যদি হস্তক্ষেপ করে তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনা বা ন্যায় বিচার বা শান্তি বা উন্নয়ন করা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লংঘন করে, মার্শাল ল জারি করে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, আবার সেই অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করেছিল তারা ভোট কারচুপির মাধ্যমে, একটা পার্লামেন্ট বসিয়ে। এটা একবার না, বারবার হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বিচার বিভাগ উচ্চ আদালত সেই অবৈধ ক্ষমতাকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। সেজন্য আমি আপনাদের (বিচারপতি) প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এজন্য যে এই সাহসী ভূমিকা আপনারা রেখেছিলেন। বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। মহাকাশ আমরা জয় করেছি। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগীয় ই-জুডিসিয়ারি কার্যক্রম যাতে চালু হয় সেই পদক্ষেপ আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি। সেটা হলে মামলার জট আরও কমাতে সুবিধা হবে। বিচারকদের মামলার রায় ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলায় লেখার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মামলার রায় লেখা হয় শুধু ইংরেজী ভাষায়, তাতে অনেক সময় আমাদের সাধারণ মানুষ যারা হয়তো ইংরেজী ভাল বোঝেও না, তারা কিন্তু ধোঁকায় পড়ে যায়। তারা সঠিক জানতে পারে না যে রায়টা কী হলো। সেই জন্য ইংরেজীতে লেখা হোক, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় থাকা উচিত। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবটা খুবই ভাল লেগেছে। এটা কিন্তু একদম নতুন একটা প্রস্তাব। এখানে আইনমন্ত্রী আছেন। আমি মনে করি, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ করে একটা প্রস্তাব নিয়ে আসলে আমরা এটা খুব দ্রুত যাতে হয়, সেই ব্যবস্থাটা করে দেব। পৃথিবীর সব দেশে আছে। আমাদের দেশে কেন থাকবে না? আসলে এই ধারণাটা আমাদের কখনও চিন্তায় আসেনি বা কেউ বলেনওনি। আমি তো আর আইনে পড়িনি। আমি নিরেট বাংলার ছাত্রী, একেবারে সাদামাটা বাংলার ছাত্রী। তবে আমি মনে করি যে, এটা অত্যন্ত উত্তম একটা প্রস্তাব, এটা হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যাই হোক, প্রস্তাবটা আমার খুবই ভাল লেগেছে। আমাদের অনেকগুলো আইন বিষয়ক কলেজ আছে। কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এরইমধ্যে আমরা বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। এরকম অনেক করেছি। কিন্তু এটা কিন্তু একটা নতুন প্রস্তাব। বিচারকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময় চিন্তিতই থাকি যে, আপনারা যারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী বা অপরাধীদের বিচার করেন, রায় দেন। তাদের নিরাপত্তা দেখার ভাল ব্যবস্থা করা, আপনাদের যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা এটা অবশ্যই সরকারের কর্তব্য। কাজেই এর জন্য যা করণীয়, সেটা অবশ্যই আমরা করব। দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব নাগরিক যাতে আইনের আশ্রয় লাভের সুবিধা পায়- সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই এবং সেটা আমরা করব। আমরা সবসময় একটা জিনিস বিশ্বাস করি, যেহেতু আমাদের সংবিধানে বলা আছে আইনের আশ্রয় লাভে সবার সমান অধিকার। আমরা তাতে বিশ্বাস করি। সবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারী সম্পত্তি রক্ষা, ইভটিজিং প্রতিরোধ, পাবলিক পরীক্ষায় অসদুপায় বন্ধ, যানবাহন সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবিরোধী অপরাধ প্রতিরোধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত মোবাইল কোর্ট অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক বিচার পাওয়ার ফলে বিচারিক কার্যক্রমের প্রতি তাদের আস্থা বেড়েছে। তিনি জানান, ২০০৯-২০১৮ পর্যন্ত সময়ে ১০ বছরে ৪ লাখ ১১ হাজার ৭৭৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ১০ লাখ ১০ হাজার ৩৩৪টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং ২৯২ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৩২ হাজার ৮৮০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত লঘু প্রকৃতির অপরাধ প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ফলে বিচার বিভাগের ওপর চাপ হ্রাস পায় এবং মানুষ স্বস্তিবোধ করে। মোবাইল কোর্টকে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করা সম্ভব হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং জনস্বার্থ বিশেষভাবে রক্ষিত হবে। এ সময় বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি, আলাদা বেতন কাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিচার বিভাগের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং অবকাঠামোগত সঙ্কট নিরসনে ৬৪টি জেলায় আধুনিক বহুতল চীফ জুডিসিয়াল আদালত ভবন নির্মাণের উদ্যোগ; ২৮টি জেলায় আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ জেলা জজ আদালত ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ; সম্প্রতি সরকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকদের জন্য ১২৮টি গাড়ি ক্রয়ের অনুমোদন; বিচারকদের আবাসন ও গাড়ি সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদির কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিচারকদের জন্য গাড়ি ঋণ নগদায়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলা ব্যবস্থাপনায় আরও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ই-জুডিসিয়ারি কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সব আদালতকে আইসিটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ই-জুডিসিয়ারি চালু করা গেলে মামলা জট কমবে। জনসাধারণকে জাতীয় হেল্প লাইন ১৬৪৩০ নম্বরে টোল ফ্রি কলের মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ দেয়ার কথাও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার না পাওয়ার বেদনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছিলাম, আমার বাবা-মার হত্যার বিচারের জন্য মামলা করতে। আমি মামলা করতে পারিনি। কারণ মামলা করার কোন অধিকার আমার ছিল না। কারণ খুনীদের বিচার না করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্রপতি প্রার্থীও করা হয়েছিল কোন খুনীকে।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে এই খুনীদের ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদের সদস্য করে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে পর্যন্ত বসানো হয়েছিল। এমনিভাবে খুনীদের মদদ দিতে দেখেছি। আমি যখন সেই সময় সুপ্রীমকোর্টে গিয়েছি বা কোন অনুষ্ঠানে গেছি, আমার খালি এটাই মনে হয়েছে যে, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কারণ আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, কেউ বিচার পেতাম না, বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল না। আমি চাই না যে, আমার মতো স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বছরের পর বছর কেউ অপেক্ষা করুক। সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, আইনের আশ্রয় পায়- যেটা আমাদের পবিত্র সংবিধানে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে বিচারকদের এজলাসে বসার জায়গা ছিল না। আমরা এ্যানেক্স ভবন তৈরি করে দিয়েছি। আরও বেশি বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নারী বিচারক নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে আগে নারী বিচারক ছিলেন না। আমাদের সময়ে হাইকোর্টে প্রথম নারী বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, একটি দেশের উন্নয়নে নারী-পুরুষ সকলের ভূমিকা থাকা দরকার।
×