ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নানা চড়াই-উতরাই শেষে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

নানা চড়াই-উতরাই শেষে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা, অংশগ্রহণকারীদের মাঝে আনন্দঘন পরিবেশে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, প্রকৌশলীরা উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকতে হবে দূরদর্শী চিন্তার প্রতিফলন। আগামী ২০৫০ সালে এবং ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা দেশের অবস্থান কোন স্তরে পৌঁছাবে তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বিকেলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৪৮ বছর এর মধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার যে লক্ষ্য ছিল তা আজও পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু নানা চড়াই উৎরাইয়ের পর দেশের গণতন্ত্র আজ প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের এই লালদীঘি মাঠে লক্ষ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালীর মুক্তির সনদ এই ৬ দফা। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান এম এ হান্নান ওইদিন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ ঘটনা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করা হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক, মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ উন্নয়নের রূপরেখা প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১সহ শতবছর মেয়াদী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা নিয়েছেন। এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে হবে। আত্মমর্যাদা সমুন্নত রেখে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। তিনি বলেন, আজকের নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করবে বলে আমি আশা করি। তাদের চিন্তা ও লব্ধ জ্ঞানকে তারা এ লক্ষ্যে কাজে লাগাবে। চুয়েট থেকে উত্তীর্ণ প্রকৌশলীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশে রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ এবং উর্বর কৃষি ভূমি ও সম্ভাবনার প্রাকৃতিক সম্পদ। জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। এক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের সততা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আজ সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান চুয়েটের ৫০ বছর পূর্তিতে এ সমাবর্তন ছিল উৎসবমুখর ও বর্ণাঢ্য। আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, রেলপথ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। সভাপতিত্ব করবেন চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম। সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রায় ১০ হাজার লোক উপস্থিত থাকবেন। রয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্মৃতিচারণ, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানসহ নানা আয়োজন। মঞ্চে থাকছে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জেমস ও নগর বাউলের কনসার্ট।
×