ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নৌযান ধর্মঘটে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৮:২১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নৌযান ধর্মঘটে দুর্ভোগ

১১ দফা দাবিকে সামনে রেখে নৌপরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে শুধু সাধারণ মানুষ যে দুর্ভোগে পড়েছে তা নয়, পুরো ব্যবস্থাপনায়ও নেমে আসে অচলাবস্থা। নৌযান শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য যে ধর্মঘট আহ্বান করে তাতে দাবি তোলা হয়েছিল ১১ দফা না মানা পর্যন্ত কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। জনদুর্ভোগ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মপ্রবাহের অচলাবস্থা কিংবা আর্থিক ক্ষতিকে পাশ কাটিয়ে যে ধর্মঘট মানুষকে বিপন্নতায় তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সত্যিই আশঙ্কার বিষয়। নৌবন্দরসমূহে পণ্য খালাস বন্ধ থেকে বহির্নোঙরে জাহাজের স্থবিরতায় যে দুঃসহ চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ যে কত ব্যাপক তাও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় আসেনি। জানা গেছে ব্যবসায়ীদের একদিনেই সোয়া ৮ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া এমন তথ্যে দেশ ও দশের যে দুর্দশা তাকে কিভাবে সামাল দেয়া যাবে এখন সেটাই ভাববার বিষয়। তবে এক দিনের মাথায় এমন অনাকাক্সিক্ষত ধর্মঘটকে প্রত্যাহার করেছে নৌপরিবহন শ্রমিকরা। তবে তার আগে বাংলাদেশের প্রায় সব ক’টি নৌবন্দরের এমন দুরবস্থায় সংশ্লিষ্ট পরিবহন খাতটি যে মাত্রায় বেসামাল হয়ে পড়ে তা দুঃখজনক বৈকি। এতে বিভিন্ন অঞ্চলের নৌযাত্রীরা পড়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। কারণ অনেকেরই জানা ছিল না ধর্মঘটের ব্যাপারটি। শেষ অবধি প্রায় নৌযানই গন্তব্যে রওনা দিতে পারেনি। ফলে যাত্রীদের অপেক্ষার সময় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসহায় শিশু, নারী, অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষকে। ব্যবসায়ীদের অভিমত, শুধু বন্দরে পণ্য খালাসই নয়, আমদানি পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল কারখানায় নেয়া এবং বাজারজাত করতে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কারণে নৌ-শ্রমিকদের এমন ধর্মঘটের কারণে মালিক পক্ষও ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। অভ্যন্তরীণ রুটে নৌপরিবহনে যাত্রীদের ভোগান্তি ছাড়া ব্যবসায়িক লোকসান শুধু দেশীয় টাকায় নয়, বৈদেশিক মুদ্রায়ও গুনতে হবে। এমন ক্ষতিকে সামলাতে গিয়ে পণ্যের বাড়তি মূল্যের মাধ্যমে তা চাপানো হতে পারে সাধারণ ক্রেতাশ্রেণীর ওপর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হিসাবে সমুদ্র অভিমুখে যাত্রা করবে এমন ৫৭টি বৃহদাকারের জাহাজ অচলাবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। এ ছাড়াও ক্ষুদ্র জাহাজের সংখ্যাও কম নয়। সব মিলিয়ে ১১ দফা দাবিতে প্রায় ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটকে যে মাত্রায় আর্থিক ক্ষতিকে সামাল দিতে হবে তার দায় যে কার ওপর বর্তাবে সময়ই তার যথাযথ জবাব দেবে। শ্রমিকরা মূলত তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো, পেনশন সার্ভিস বুক চালু করা, ঘাটগুলোতে অহেতুক চাঁদাবাজির মতো সন্ত্রাসকে চিরতরে বন্ধ করা, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সমুদ্র আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করা, খাদ্য ভাতা বরাদ্দ দেয়া এবং কর্মস্থল ও দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করার দাবি নিয়ে ধর্মঘট শুরু করে। দাবিগুলো যৌক্তিক এবং শ্রমিকবান্ধব হলেও অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের ব্যাপক ক্ষতি কোনভাবেই কাম্য নয়। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই প্রদত্ত কর্মসূচীর সুরাহা করা যেত বলে বিশিষ্টজনদের অভিমত। তবে নৌ-শ্রমিক ফেডারেশন সংগঠনের সঙ্গে শ্রম অধিদফতরের আপোস রফার ১ দিনের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করে আগামী মার্চের মধ্যেই খাদ্য ভাতা কার্যকর করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য দাবিগুলোও বিবেচনায় এনে সুষ্ঠু সমাধানের নির্দেশনাও আসবে বলে জানানো হয়। ফলে শ্রমিকরা তাদের কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নৌযানসমূহের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করলে ২৪ ঘণ্টা অচলাবস্থার শেষ হয়।
×