ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাপা ফুডগ্রো এক্সপো উদ্বোধনকালে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক

সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৬ লাখ টন ধান কেনা হবে

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২২ নভেম্বর ২০১৯

সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৬ লাখ টন ধান কেনা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার ৬ লাখ টন ধান কিনবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী সপ্তম বাপা ফুডগ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৯’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ধান কেনার ক্ষেত্রে আমরা দরিদ্র কৃষককে বেছে নেব। তাদের মধ্যে লটারী হবে। ফলে রাজনৈতিক চাপ থাকবে না। সরকারের চাল কেনার ঘোষণায় হয়ত ধানের দাম ১০০/২০০ টাকা বেড়েছে। এটা কৃষকের জন্য সুখবর। দাম বাড়া বা কমা নিয়ে মন্ত্রণালয় সব সময় উভয় সঙ্কটে থাকে। কারণ দাম কমলেও সমালোচনার শিকার হতে হয়। আবার বাড়লেও সে দায় আমাদের ওপর চাপে। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংরক্ষণের জায়গা সঙ্কটের অভাবে গত বছর ইচ্ছা থাকার পরও কৃষকের কাছ থেকে বেশি ধান কেনা সম্ভব হয়নি। তবে এবার ৬ লাখ টন ধান আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা সময় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি ছিল। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে খাদ্য আমদানি করতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুর্যোগপ্রবণ দেশ হলেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি করেছে। প্রধান খাদ্য চালের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে আমাদের সমস্যা হলো উৎপাদন হলেও বিক্রি করতে না পারা। আজও উদ্বৃত্ত ধান নিয়ে বিপাকে পড়ছে কৃষক। মন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকার পরও কয়েক দিন ধরে চালের দাম বেড়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। গত এক সপ্তাহে মানসম্মত চালের দাম কেজিপ্রতি চার/পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় চাষের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। এছাড়া অন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জের নাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, গত বছর দেশে ৪ মিলিয়ন টন আলু উদ্বৃত্ত ছিল। পণ্যের সুলভ মূল্য পেতে উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজন করা জরুরী বলে মনে করেন তিনি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীকে উৎসাহী করতে সরকার কাজ করছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। মন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্যের রফতানি বর্তমানে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ এ্যাগ্রো প্রসেসরস এ্যাসোসিয়েশনকে (বাপা) ধন্যবাদ দেন তিনি। বিশেষ করে বাপার প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব) আমজাদ খান চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. রাজ্জাক। দেশে-বিদেশে আমজাদ খান চৌধুরীর শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএলের নানা পণ্যের বিকাশেও সন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিশ্বদীপ দে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ১৯৭১ সাল থেকে। আমাদের দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ডায়নামিক নেতৃত্বে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। তিনি বলেন, এ্যাগ্রো খাতে কয়েক বছরে বাংলাদেশ খুব ভাল করেছে। রফতানি আয় বেড়েছে। ভারত এ্যাগ্রো খাতের বড় একটি বাজার। বাংলাদেশ থেকে বিএসটিআই অনুমোদিত ২১ এ্যাগ্রো পণ্য ভারতে যায়। মেলায় ভারত থেকে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে জানিয়ে ভারতের এ্যাগ্রো খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, বাংলাদেশ এখন ১৪৪টি দেশে কৃষিপণ্য রফতানি করে। এ্যাগ্রো খাতে যেন কোন কালি না লাগে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রফতানি করা গুঁড়ো হলুদে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে, যা ব্যবহারে ক্যান্সারও হতে পারে। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা যাতে নিরাপদ খাদ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি, এ অঙ্গীকার হোক সবার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রবার্ট ডগলাস সিম্পসন বলেন, বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য ডায়নামিক ও শক্তিশালী খাত। এ দেশের বেসরকারী খাত খুব ভাল করছে। এ্যাগ্রোতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পণ্য তৈরি করতে হবে। মান নিশ্চিত করলে এ খাত আরও এগিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জিন মেরিন সুহ, সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন এসিআই এ্যাগ্রি বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারি, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এ্যাগ্রো প্রসেসরস এ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) প্রেসিডেন্ট আ ফ ম ফখরুল ইসলাম মুনশি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাপার জেনারেল সেক্রেটারি ইকতাদুল হক, মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী। আহসান খান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রাইভেট খাতগুলো হাতে হাত রেখে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ একদিন সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষিজাত পণ্যের রফতানি আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। আশা করি, আগামী দুই বছরে আমরা এই আয় ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হবো। আমরা ব্যবসায়ী হলেও সাধারণ মানুষের জন্য শতভাগ নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুত করতে সংকল্পবদ্ধ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এ্যাগ্রো প্রসেসরস এ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এ মেলার আয়োজন করে। মেলার সঙ্গে নবম এ্যাগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো-২০১৯ ও ষষ্ঠ রাইস এ্যান্ড গ্রেনটেক এক্সপো-২০১৯ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এ মেলায় বাংলাদেশ, ভারত ও চীনসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। প্রবেশ মূল্য ছাড়াই দর্শনার্থীরা মেলায় ঢুকতে পারবেন। আইসিসিবির চারটি হলে এ মেলা চলছে। আগামী শনিবার বাপার সপ্তম আসর শেষ হবে।
×