ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনোলজি বিষয়ে গবেষণায় স্থাপন হচ্ছে স্পেশালাইজড ল্যাব

প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দেশ গড়তে দক্ষ মানবসম্পদ চাই

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২০ নভেম্বর ২০১৯

প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দেশ গড়তে দক্ষ মানবসম্পদ চাই

ফিরোজ মান্না ॥ শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তি জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির দেশ গড়ে তুলতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দিয়েছে সরকার। এজন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেকনোলজি বিষয়ে গবেষণা করতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপনের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে বের হয়েই উপার্জন করতে পারেন। দক্ষ জনবল ছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রিং আইডি ও সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’কে অচিরেই আরও ডেভেলপ করা হবে। ফেসবুক, ওয়াটস এ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে দেশের মেধাবী তরুণরাই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ’২১ সালের ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আইসিপিসি আয়োজনের মাধ্যমে স্বাগতিক দেশ হিসেবে এগিয়ে আসতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে সারাদেশে ৮ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ৪৩ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ১৮ হাজার ১৩২ সরকারী সংস্থাকে অবিভক্ত নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসার কাজ চলছে বলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক জানান। তিনি বলেন, সারাদেশে সরকারী-বেসরকারীভাবে পর্যায়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ আগামী বছরের মাঝামাঝি শেষ হবে। নেটওয়ার্কিংয়ের বড় একটি অংশ স্থাপন করছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। বাকি অংশ করছে দু’টি বেসরকারী কোম্পানি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আড়াই হাজার ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। ’২০ সালের মধ্যে সব মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হবে । ‘বাংলাগবনেট ও ইনফো সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রযুক্তিসেবার বিস্তার করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের সুবিধা হাতে পেলে লোকে ঘরে বসেই সরকারের বেশিরভাগ অফিসের সেবা নিতে পারবেন। সরকার ’২০ সালের মধ্যে ৩ হাজার রকমের সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে। বর্তমানে সারাদেশের ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ১৬২ ধরনের সেবা লোকে নিতে পারছেন। গ্রাম শহরের বৈষম্য দূর করতে সরকার প্রকল্পটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, এসব ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে ই-গবর্নেন্স ব্যবস্থায় এগিয়ে যেতে হলে দরকার সময় এবং অর্থের ব্যয় হ্রাস। এর জন্যই এক্সেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) উদ্যোগে চালু করা হয়েছে একশপ, একপে এবং একসেবা। সরকার সব সেবা একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে চায়। ৩ হাজার সেবাকে পর্যায়ক্রমে একত্রিত করা হবে। আগামী ২ বছরের মধ্যে ৪০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করবে আইসিটি বিভাগ। স্কুল পর্যায়ে শিশু কিশোরদের প্রযুক্তিজ্ঞানে দক্ষ করতে ’২১ সালের মধ্যে ৬৪ জেলায় শেখ কামাল আইটি ইউকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ‘ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম’ পাইলট প্রকল্পের অধীন পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ও নয়টি পৌরসভা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ, টুঙ্গিপাড়া, পীরগঞ্জ, সিংড়া, তারাব ও রামগতিতে ‘ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতিতে নাগরিক সেবা’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘একসেবায়’ এখন পর্যন্ত ১৬২ সরকারী সেবা চালু রয়েছে। এই সেবা পেতে নাগরিকদের ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইটেও যেতে হবে না। এক জায়গা থেকেই এসব সেবা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে এতে আরও তিন হাজার সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ‘একপে’র মাধ্যমে সরকারী বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবার বিল ও অন্য ফি এক জায়গা থেকেই দেয়া যাবে। আর ‘একশপে’র মাধ্যমে দেশের যে কোন জায়গা থেকে পণ্য উৎপাদক বা উদ্যোক্তারা ই-কমার্সে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। কায়িক শ্রম দিয়ে মানুষ যতটা না উন্নতি করতে পারেন প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করে তার চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান অর্জনের জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাগবনেট ও ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রায় সব উপজেলা ফাইবার অপটিক ক্যাবলে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে দেশের ১৮ হাজার ১৩২ সরকারী সংস্থা অবিভক্ত নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। সচিবালয় উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছে, দেয়া হয়েছে ওয়াইফাই সুবিধাও। ৭০ হাজার তরুণ-তরুণীকে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
×