ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও হিযবুত তাহ্রীরের রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

তিন জঙ্গী সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২০ নভেম্বর ২০১৯

তিন জঙ্গী সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে

শংকর কুমার দে ॥ দেশে নিষিদ্ধ আট জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে তিনটি জঙ্গী সংগঠনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। যেই তিনটি জঙ্গী সংগঠনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রয়েছে সেই সব জঙ্গী সংগঠনগুলো হচ্ছে ‘নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও হিযবুত তাহরির।’ এর মধ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোর অনলাইন ফোরামে সক্রিয় আছে প্রায় ৩শ’ জঙ্গী সদস্য। উগ্র ধর্মান্ধদের সংগ্রহ করে জিহাদ করতে চায় তারা। এ জন্য কর্মী সংগ্রহের উদ্দেশে অনলাইন ফোরামে সক্রিয় এসব জঙ্গী সদস্য। এই জঙ্গী সংগঠনগুলো ইসলামিক স্টেটস (আইএস) ও আল কায়েদা পন্থী বলে পরিচিত। এই ধরনের তথ্য পেয়েছে জঙ্গী সংগঠনগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণকারী তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে নিষিদ্ধ ঘোষিত এই জঙ্গী সংগঠনগুলো তৎপরতা কৌশলগত কারণে দৃশ্যমান নয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করে তারা ‘জিহাদে’ নামতে চায়। আর এ কাজে তারা ব্যবহার করছে মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। অনলাইন ফোরামে সক্রিয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে ধীরলয়ে এগুচ্ছে তারা। অনলাইনে বহুল প্রচলিত, জনপ্রিয় ও বিতর্কিত ইস্যুর আলোচনা উস্কে দিয়ে তারা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করার জন্য মাঠের আছে জঙ্গী সংগঠনগুলো। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর বিশেষ নজরে আছে। ভারতে বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে জঙ্গীবাদের তৎপরতার কারণে বাংলাদেশও ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ জন্য আলকায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট বা একিউআইএস বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আনসার আল ইসলাম নববর্ষ উদযাপন, শব-ই-বরাত পালন, মিলাদ বা মৃত্যুর পর প্রচলিত কিছু আচার অনুষ্ঠান নিয়ে অনলাইন ফোরামে প্রশ্ন তুলে উগ্র ধর্মান্ধতা ছড়াচ্ছে তারা। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান ও হাদিস সম্পর্কে নিজেদের ভাষ্যও এসব আলোচনায় যুক্ত করে বিভ্রান্ত করছে। এতে বুঝে না বুঝে অনেকে অংশ নিয়ে তাদের প্রচারিত মিথ্যা মতবাদকে সত্য বলে ধরে নিচ্ছে। ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুনের আগে তাদের তৎপরতা সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল অন্ধকারে। ২০১৪ সালে আল -কায়েদা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে তাদের উপস্থিতির কথা ঘোষণা করে। আল-কায়েদা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের অংশ হিসেবে তখন থেকে কাজ শুরু করে আনসার আল ইসলাম। ওই বছরই দু’টি হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জঙ্গী সংগঠন আল্লার দল নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সংখ্যা সাত। এ নিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সংখ্যা দাঁড়াল আট। আল্লার দল ছাড়াও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলো হচ্ছে, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি), জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আইএসপন্থী জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবি, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি, শাহাদত ই-আল হিকমা, হিযবুত তাহ্রীর ও আনসার আল ইসলাম। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা আছে এমন তিনটি সংগঠনের কার্যক্রম চলছে। এগুলো হলো জেএমবির নতুন ও পুরনো অংশ, আনসার আল ইসলাম ও হিযবুত তাহ্রীর। এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে আনসার আল ইসলাম। এই জঙ্গী সংগঠনটির প্রধান হিসেবে পরিচিত মেজর (অব) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া এখনও পলাতক। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর নব্য জেএমবির জঙ্গী সংগঠনটি কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। জঙ্গী সংগঠনটির প্রথম শ্রেণীর নেতারা গ্রেফতার ও নিহত হয়েছে। পলাতক যারা আছে তারা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে পারছে না। মূলত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে আইএস সমর্থিত জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবি হামলা চালানোর পর মাঠ থেকে সরে আসে আনসার আল ইসলাম। কেন সরে এল তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, সংগঠনটির নিজস্ব নথি থেকে। ২০১৬ সালের ২৪ মে কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তানভীর তনয়কে কুপিয়ে হত্যার পর মাঠে তাদের আর কার্যক্রম ছিল না। নথিতে আনসার আল ইসলাম কিভাবে এগোবে সেই আলোচনা করেছে। হিযবুত তাহ্রীর মাঝে মধ্যেই ঝটিকার মতো হ্যান্ডবিল, পোস্টার বিলি করে নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
×