ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ থেকে ট্রাক ধর্মঘট আহ্বান ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক নেতাদের মতবিনিময়

২৪ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২০ নভেম্বর ২০১৯

২৪ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে বাস চলাচল বন্ধের দ্বিতীয় দিনে আরও নতুন এলাকা যোগ হয়েছে। সোমবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ১১ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও অন্তত ১৩ জেলা। সব মিলিয়ে ২৪ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ। যদিও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক কোন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ের শ্রমিক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্তে জনভোগান্তির এই কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। এদিকে আগামীকাল ও ২২ নবেম্বর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভা থেকে বিভিন্ন সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন সংগঠকরা। আজ থেকে অনিদির্ষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ফলে সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে। এতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা অনেকের। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে তারা মতবিনিময় করেন। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মকবুল হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা অপু সাংবাদিকদের বলেন, রাতে ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কিছু নেতার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার মনিপুরী পাড়ার বাসায় মতবিনিময় করেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার সারাদেশ থেকে সংগঠনের নেতারা ঢাকায় আসবেন এবং মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের সময় নির্ধারণ হলে তা পরবর্তীতে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। এদিকে রাজধানীতে বাস চলাচল একেবারেই কমে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলার মতো ঢাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তেজগাঁও এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় বাস চালাচ্ছেন না। জেলাগুলো হলো- যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা। মঙ্গলবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে- রাজশাহী, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, বেনাপোল, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, নওগাঁ, ফরিদপুরে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। ফলে সড়কে নেমে দুর্ভোগে পড়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে আজ থেকে ট্রাক ধর্মঘটের ডাক সড়ক পরিবহন আইনের কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, লাইট লাইসেন্স দিয়ে ভারি গাড়ি চালানো যায় না। কিন্তু ভারি গাড়ি চালানোর জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) লাইসেন্সও দিচ্ছে না। লাইট লাইসেন্স দিয়ে ভারি গাড়ি চালাতে গেলেই জরিমানা করা হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা একজন শ্রমিক কীভাবে দেবে? তাই চালকরা গাড়ি চালাবেন না। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধের পর এবার সারাদেশে ট্রাক ধর্মঘটের ডাক এলো। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন আইন স্থগিত রাখাসহ নয় দফা দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ডাকা হয়। শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের শুরু থেকে তার বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। রবিবার থেকে আইনটি কার্যকর শুরুর পর সোমবার কোন চাপে পিছু হটবেন না বলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা দৃশ্যত চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও সোমবার সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ধর্মঘটের বিষয়টি তিনি অবগত। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার সঙ্কটের সমাধান না হয়ে বরং ধর্মঘটে যুক্ত হয় নতুন নতুন জেলা। মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ রুস্তম আলী খান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার বিধান ও দ- উল্লেখ করে একটি ‘যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞান ভিত্তিক’ সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে। ট্রাক ধর্মঘট শুরু হলে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়ে নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাখ্যান করছে কি না- এ প্রশ্নে রুস্তম বলেন, তারা পুরো আইন প্রত্যাখ্যান করছেন না। কিছু ধারার সংশোধন চান। আইনের সব ধারা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার আশ্বস্ত করলেও পরে সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণেই কর্মসূচী। বিআরটিসি বাসের চালকের লাইসেন্স নেই নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সরকারী সংস্থার কোন যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করার দৃশ্য চোখে পড়েনি। সাংবাদিকরা এমন অভিযোগ সামনে তুলে ধরায় বিআরটিসির বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন। মঙ্গলবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিসি) দোতলা বাস থামিয়ে কাগজ যাচাই করেন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে মানিক মিয়া এভিনিউতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। একে একে বেসরকারী বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় কয়েকজন পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানতে চান, বিআরটিসির বাস ধরা হয় না কেন? ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে অগ্নিসংযোগ সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে তেজগাঁও এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকা সংবাদ সম্মেলন শেষে শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হয়। তারা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা) চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিতে জুতোপিটা করে। তারপর ছবি মাটিতে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি আদালত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জানান, চালকদের অনেকেই নতুন আইন সম্পর্কে অবগত নন। নতুন আইনে বিভিন্ন অপরাধে সর্বোচ্চ জরিমানা কত তা কেউ জানেন না। দ্বিতীয় দিনের অভিযানে চালকদের লাইসেন্স না থাকা, গাড়ির ত্রুটি, চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, ভাড়ার তালিকা না থাকা, বাড়তি ভাড়া আদায়, আসন সংখ্যা বেশি, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ এরকম অভিযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। রাজধানীতে বাস চলাচল কম রাজধানীতে অন্যান্য দিনের তুলনায় বাস চলাচল কম ছিল। পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করেই বাস চলাচল একেবারেই কমে যায় রাস্তায়। এতে সকাল থেকেই দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় সকালে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী মানুষের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাস না পেয়ে অনেক মানুষকে অন্য পরিবহনে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ১৭ নবেম্বর থেকে নতুুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়েছে। এর কারণে আজকে অনেকটা অঘোষিতভাবেই বাস চলাচল কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ ও বাসমালিকরা। আর এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি শরীয়তপুরে নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর থেকে জানান, মঙ্গলবার আন্তঃজেলা পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি শরীয়তপুরে। জেলা পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাস্তায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসলাম উদ্দিন ফোর্স নিয়ে দুপুরে শরীয়তপুর আন্তজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে তাদের কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। এ সময় শরীয়তপুর আন্তঃজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজম মাদবরসহ অন্য শ্রমিক নেতারা উপন্থিত ছিলেন। এদিকে যাত্রীবাহী বাসও রাস্তায় চলাচল করেছে। তবে অধিকাংশ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাস্তায় অটোরিক্সা, ইজিবাইক, সিএনজি, বেবি-টেম্পো চালকদের রোজগার কিছুটা বেড়েছে। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। মাদারীপুরে পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান মাদারীপুরে সকাল থেকে সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট। পাশাপাশি শিবচরে অনুষ্ঠিত হয়েছে সড়ক আইন বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক সভা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ধর্মঘট শুরু হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন রুটের লোকাল বাস ও দূরপাল্লার সব ধরনের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবি, বিদ্যমান সড়ক আইনের কারণে শ্রমিকদের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি ও ধর্মঘট চলবে। সাতক্ষীরায় ধর্মঘট চলছে স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় দিনেরমতো ধর্মঘট পালন করছেন বাস শ্রমিকরা। সাতক্ষীরার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে মঙ্গলবার সকাল থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তবে যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকলেও দুই একটি বিআরটিসি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, ইঞ্জিনভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে তারা যাতায়াত করছেন। সাতক্ষীরা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জানান, নতুন আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কোন শ্রমিক বাস চালাতে চায় না। তিনি জানান, ২১ ও ২২ নবেম্বর শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশন মতবিনিময় করে সরকারের কাছে দাবি পেশ করবেন। ঝালকাঠির অভ্যন্তরীণ ১৪ রুটে বাস চলাচল বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝালকাঠি জানান, সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ঝালকাঠির অভ্যন্তরীণ ১৪ রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস ও মিনিবাস শ্রমিক সংগঠন। হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। ঝালকাঠি আন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে বাস মালিক ও শ্রমিকদের নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। তাই সরকার বাস মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করে আইনটি সংস্কার করবে, এমনটা প্রত্যাশা করছি। অন্যথায় বাস ধর্মঘট চলতে থাকবে। বরিশালে বাস চলাচল বন্ধ স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার আটটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে পরিবহন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে এই কর্মবিরতি শুরু করা হয়েছে। ফলে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। নথুল্লবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার যাত্রী সুমন বলেন, সোমবার ঢাকা থেকে বরিশালে এসেছি। এখন ঢাকা যাব স্টেশনে এসে দেখি বাস চলাচল করছে না। বাস শ্রমিকরা বলেন, কোন চালকরাই ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। বর্তমানে কার্যকর করা এ সড়ক আইন তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিপন্থী। এই আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। মাগুরায় বাস চলাচল বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, দ্বিতীয় দিনেরমতো মাগুরার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। নতুন সড়ক আইনের প্রতিবাদে চালক ও শ্রমিকরা মাগুরা-যশোর ভায়া আড়পাড়া সড়ক এবং মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যাত্রীরা ইজিবাইক ও মাহেন্দ্রতে করে যাতায়াত করছে। ফলে সময়ের পাশাপাশি যাত্রীদের সময় ও অর্থ বেশি খরচ হচ্ছে। শ্রমিক ও চালকরা বলেন, নতুন সড়ক আইন সংশোধন করা হোক। তবে দূরপাল্লার বাস ও ট্রক চলাচল করছে। নওগাঁয় সকল রুটের বাস বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁ অঞ্চলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে জেলায় তৃতীয় দিনেরমতো চলছে বাস ধর্মঘট। বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার ১১টি উপজেলার সকল রুটের মেইল ও লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী ও বগুড়া চলাচলের সকল বাসও বন্ধ। নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে চালকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তাদের একটাই দাবি পাস করা নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে এই ধর্মঘট চলবে। পিরোজপুরে বাস চলাচল বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর থেকে জানান, আইনের কিছু ধারা সংশোধনের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে সব রুটে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট। ফলে পিরোজপুরের সকল আন্তঃজেলা, পিরোজপুর-খুলনা এবং পিরোজপুর-বরিশাল রুটে সকাল থেকেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। এছাড়া বাস ধর্মঘটের বিষয়টি আগে থেকে জানতে না পারায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। অচল খুলনা, চরম ভোগন্তিতে যাত্রীরা স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, খুলনায় দ্বিতীয় দিনেরমতো রাজধানী ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অচল হয়ে পড়েছে খুলনার সড়ক পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা। খুলনা জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহোরে শ্রমিক নেতাদের সম্মত করাতে সক্ষম হলেও সাধারণ শ্রমিকরা তা মানছে না। শ্রমিকরা বলছেন, সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। শ্রমিকেরা খুলনা হতে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালসহ অন্যান্য পরিবহন কাউন্টার থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোন রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। জরুরী প্রয়োজন থাকায় অনেকেরই মাহেন্দ্রা, মিনি পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ ছোট গাড়িতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে। চলমান পরিবহন ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউসে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। বৈঠকে আলোচনা শেষে পরিবহন মালিক-শ্রমিক তোরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ), উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুপ আলী। এ ব্যাপারে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মোঃ নুরুল ইসলাম বেবী ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে বুধবার সকাল থেকে বাস চালানোর অনুরোধ জানান। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারমুখী আচরণ করছে। খুলনা থেকে বাস ছাড়লেও অন্যান্য জেলায় গেলে সেখানকার শ্রমিকরা বাস আটকে দেবে। সে কারণে সব জেলার কর্মবিরতিই প্রত্যাহার করানো প্রয়োজন। তারা বলেন, বুধবার ভোর থেকে খুলনায় বাস চলাচল শুরু হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফরিদপুরের কয়েকটি পথে বাস চলাচল বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর থেকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলায় বাস ধর্মঘটের কারণে কয়েকটি পথে ফরিদপুরের সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওইসব পথে ফরিদপুর থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। এর আগে গত রবি ও সোমবার ফরিদপুরের বাসগুলো ওই পথে গিয়ে শ্রমিকদের হামলার মুখে পড়ে। শ্রমিকরা চালক ও শ্রমিকদের নাজেহাল ও লাঞ্ছিত করেন। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই পথগুলোতে ফরিদপুরের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
×