ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রস্তুতি চলছে নবান্ন উৎসবের

ফসলকেন্দ্রিক প্রধান উৎসব, শিকড়ের কাছে ফেরা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

ফসলকেন্দ্রিক প্রধান  উৎসব, শিকড়ের  কাছে ফেরা

মোরসালিন মিজান ॥ নবান্ন উৎসবের সময়টা চলে এসেছে। প্রতি বছরের মতোই আগামী ১ অগ্রহায়ণ উদ্যাপিত হবে নবান্ন উৎসব। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবার ফসলকেন্দ্রিক সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রধান উৎসবে মাতবে বাঙালী। হ্যাঁ, অনেক কিছুই বদলে গেছে এখন। আগের মতো আচার পালন করা হয় না। তবে নতুন ধানে পিঠাপুলির আয়োজনসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা একেবারে হারিয়ে যায়নি। গ্রামে গেলে ঠিকই চোখে পড়ে। রাজধানী শহরেও উৎসবটি উদ্যাপন করা হয়। নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে নাগরিক আয়োজন। সে লক্ষ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন চালের রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবই নবান্ন উৎসব নামে পরিচিত। কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন সেগুলোর অন্যতম। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব শুরু হয়। হাজার-হাজার বছর আগে কৃষি প্রথা যখন চালু হয়েছিল, অনুমান করা হয়, তখন থেকেই নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ঘরে ফসল তোলার আনন্দে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো। ফসল কাটার আগে কৃষকরা বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে ঘরের চালে বেঁধে রাখতেন। বাকি ধান থেকে চাল করে সে চালে পায়েস করা হতো। এ ছাড়াও নবান্ন উৎসবের দিন গৃহস্থ বাড়িতে নানা পদ রান্না হতো। শাক ভর্তা ভাজিসহ ২০ থেকে ৪০ পদের তরকারি রান্না করা হতো কোন কোন বাড়িতে। তবে বর্তমানের ছবিটার একটু আলাদা। এখন প্রায় সারাবছরই কোন না কোন ধান হয়। সনাতন মাড়াই প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। যন্ত্রযুগে প্রবেশ করেছে গ্রাম। কৃষি ছাড়াও আয়ের অনেক উৎস সৃষ্টি হয়েছে। চাকরির সুযোগ বেড়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা। অল্পে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই ধানের জমির দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হয় না। আর ঢাকায় তো সারাবছরই অন্যের সংস্কৃতি। শিকড়হীন বেঁচে থাকা। গ্রামীণ জীবন সংগ্রাম স্বপ্ন সম্পর্কে শহুরেরা তেমন কিছু জানেন না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় নবান্ন উৎসব অন্য এক তাৎপর্য নিয়ে সামনে আসছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরই মাঝে দেশের নানা প্রান্তে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা নতুন ধান গোলায় তুলছেন অনেকদিন ধরেই। অন্য অঞ্চল থেকেও ধান কাটার খবর আসছে। অবশ্য ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে কোন কোন এলাকার ধানের ক্ষতি হয়েছে। এরপরও যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা-ই ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। পাশাপাশি প্রাকৃতজনের জীবন ও লোক চেতনায় উদ্ভাসিত হবে নগর। আগামী শনিবার চারুকলার বকুলতলায় আয়োজন করা হবে নবান্ন উৎসবের। অসাম্প্রদায়িক উৎসবে যোগ দেবে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ। নিজের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবে নতুন প্রজন্ম। খুব সকালে নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আয়োজকরা জানান, সঙ্গীত নৃত্য আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে বাংলার লোকজীবন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হবে। বাংলার ঢাক-ঢোল বাজবে। হবে লোকসঙ্গীত। লোক নৃত্য। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পিঠাপুলির মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হবে আগতদের। থাকবে মুড়ি মুড়কি বাতাসাও। প্রথম পর্ব শেষে নবান্ন শোভাযাত্রা বের করা হবে। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। টিএসসি রবীন্দ্র সরোবরসহ অন্য অংশেও থাকবে নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এ উৎসবের আরেকটি বর্ণিল ছবি দেখা যায় পাহাড়ী জনপদে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও চলছে জোর প্রস্তুতি। এবারও ঝুম চাষের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরবেন আদিবাসী শিল্পীরা। সব মিলিয়ে দারুণ এক জাগরণের আশা। গ্রামীণ ঐতিহ্য আর নিজস্ব কৃষ্টির এ উৎসব সফল হোক। জয় হোক আবহমান বাংলার।
×