ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্র সংগঠনগুলো পেশী শক্তিভিত্তিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে ॥ জিএম কাদের

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

ছাত্র সংগঠনগুলো পেশী শক্তিভিত্তিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে ॥ জিএম কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এরশাদ আমলে গঠনের পর ব্যাপক সমালোচিত জাতীয় ছাত্র সমাজকে ‘লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে দেখতে না চাওয়ার কথা সম্মেলনে বলেছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় ছাত্র সমাজকে আমরা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না। তোমরা লেখাপড়া করবে। ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে উঠবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো পেশী শক্তিভিত্তিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বুধবার ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের শেষে সাংবাদিকরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গা মন্তব্যের বিষয়ে কাদেরকে প্রশ্ন করেন। তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার কটূক্তির সমালোচনায় যখন খোদ দলটির নেতারাই, তখন তখন এ প্রশ্নে নিরুত্তর রইলেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। যদিও মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা এ বিষয়ে সংসদের ভেতরে বাইরে রাঙার সমালোচনা করেছেন। বুধবার সংসদে দেয়া বক্তব্যে জাপা মহাসচিব নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে নিয়ে কোন ভুল বলে থাকলে নিঃশর্ত ক্ষমতা চাইছি। প্রধানমন্ত্রীকে দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী বলিনি। যদি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কোন ভুল বলে থাকি তাহলে করজোড়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভালোবাসেন। তাই তিনি আমাকে মন্ত্রী করেছিলেন। হয়ত নিজের দল ক্ষমতায় আসলে আমি মন্ত্রী হতে পারতাম না। তাই বক্তব্যের বিষয়ে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছি। নূর হোসেনকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সংসদে ক্ষমা চান আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী। ছাত্র সমাজের সম্মেলনে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে সংগঠনটির কয়েকজন নেতাও রাঙ্গার বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়ারম্যান কাদেরকে অনুরোধ করেন। তবে বক্তৃতায়ও তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি কাদের। রাঙ্গার যে বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে, গত ১০ নবেম্বর সেই বক্তব্য দলের চেয়ারম্যান কাদেরের সামনেই দিয়েছিলেন তিনি। দলের ওই অনুষ্ঠানে রাঙ্গা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ বলেছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে হটানোর আন্দোলনে ১৯৮৭ সালের ১০ নবেম্বর প্রাণ দিয়েছিলেন নূর হোসেন। তার ওই বক্তব্যে নিন্দার ঝড় উঠে রাজনৈতিক মহলে। মহাজোটে জাতীয় পার্টির জোট শরিক আওয়ামী লীগের নেতারা সমালোচনায় মুখর হন। জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে দাঁড়িয়ে রাঙ্গার সমালোচনা করে বলেন, মহাসচিবের ওই বক্তব্যের দায় জাতীয় পার্টি নেবে না। বুধবার ছাত্রসমাজের সম্মেলন শেষে রাঙ্গাকে এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা ভেতরের (জাতীয় সংসদের) কথা, আমি বাইরে কোনো কথা বলব না। এর আগে সমালোচনার মুখে রাঙ্গা ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন, প্রত্যাহার করে নেন তার দেয়া বক্তব্য। বক্তব্যে জিএম কাদের বলেন, অনেক ছাত্র সংগঠনের নেতারা দেশ ও জনগণের স্বার্থ ভুলে নিজেদের ও নেতাদের স্বার্থে এমন কাজ করছে, যা কখনও দেশবিরোধী। তারা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরশাদের ভাই কাদের জানান, এবার নিজেই জাতীয় ছাত্র সমাজের দেখভাল করতে শুরু করবেন তিনি। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে জাতীয় পার্টির ছাত্র রাজনীতি আবার জাগিয়ে তুলে তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজকে একটি সেবামূলক সংগঠনে পরিণত করবেন। সম্মেলনে রাঙ্গা বলেন, হল দখল, দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি ও টেন্ডারবাজির ইতিহাস জাতীয় ছাত্র সমাজের নাই। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে চেয়ারম্যানকে বলে এই ছাত্র সংগঠনকেও বহিষ্কার করা হবে। জাতীয় ছাত্র সমাজের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে মার্চে।
×