ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উপকূল গড়ে তোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

টেকসই উপকূল গড়ে তোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য টেকসই উপকূল গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট উন্নতির কারণে ঘূর্ণিঝড়ে জীবনহানি কমেছে। কিন্তু ঝড় পরবর্তী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উপকূলের সম্পদ ও প্রকৃতি রক্ষায় এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। উপকূলে বসবাসরত লোকদের পাকা বাড়িঘর নির্মাণে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হলে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হবে না। নিজের বাড়িই নিরাপদ থাকবে। বাড়ির ঘর চাপা পড়ে মৃত্যুর আশঙ্কা কমে যাবে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভয়াল ১২ নবেম্বর, টেকসই উপকূলভাবনা’ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এই আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান বলেন, টেসকই উপকূল নির্মাণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূল টেকসই হলে সবার নিরাপত্তা প্রদানের কাজ সহজ হবে। ত্রাণভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিবর্তে সরকার দুর্যোগ সহনীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য জাপানের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প নেয়া হয়েছে উপকূলীয় এলাকায়। তিনি বলেন, দেশের উপকূল সম্পদশালী। একে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। ঝড়ে জানমাল বাঁচাতে হবে। উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার বাঁধ আরও উঁচু এবং মজবুত করতে হবে। উপকূলে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন তিন কোটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণের। এছাড়াও উপকূলে ৯ জেলার মানুষের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। বাড়িঘর নির্মাণের সহজভিত্তিতে ঋণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলে ৫ হাজারের বেশি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখের বেশি লোকজনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। যারা স্বেচ্ছায় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায়নি তাদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিজের পাকাবাড়িঘর থাকলে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হবে না। এজন্য সরকার চায় একটি টেকসই উপকূল তৈরি করতে। শুধু ঘূর্ণিঝড় নয় জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে উপকূলে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সারাদেশে, ৩৮ লাখ তালগাছ রোপণ করেছে। মোট ১ কোটি তালগাছ রোপণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার বি. জে. অব সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। সেনাবাহিনীও এটি মোকাবেলায় বেশ দক্ষতা অর্জন করেছে। সেনাবাহিনীর সিলেবাসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর আলাদা কোর্স পড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের উপকূল যেসব দ্বীপ রয়েছে তা বিশ্বের যে কোন দ্বীপের চেয়ে অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁধার। এই উপকূলকে রক্ষা করতে না পারলে আগামী ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে উপকূলের অনেক কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না। স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক নিখিল রঞ্জন রায় বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সচেতনতা বেড়েছে মানুষের মধ্যে। উপকূলকে রক্ষা করতে হলে বেড়ি বাঁধে প্লান্টেশন করতে হবে। তিনি বলেন, ঝড়ে আগাম প্রস্তুতির কারণে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু ঝড়ের পরে যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা মোকাবেলার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড ভারনারেবিলিটির স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মাহবুবা নাসরিন বলেন, এ দেশে মানুষের দুর্যোগের সঙ্গে বসবাসের বিষয়টি নতুন নয়। সুদূর অতীতকাল থেকে এটি তারা সয়ে আসছে। আইনী আকবরীতে এটি উল্লেখ রয়েছে। ৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। কারণ তখন ঝড়ে প্রস্তুতির অভাব ছিল। লোকজন সব সময় নিজের জ্ঞান দিয়ে এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে না।
×