ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আহতরা বললেন, মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখেছি

বিকট শব্দে মনে হয়েছিল যেন বোমা বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

বিকট শব্দে মনে হয়েছিল যেন বোমা বিস্ফোরণ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় কুমিল্লা মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় ১৩ জনকে। এদের মধ্যে বর্তমানে ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। আহতরা ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা জানান, গভীর রাতে বিকট শব্দে মনে হয়েছিল যেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। খুব কাছে থেকে আমরা অনেকের করুণ মৃত্যু দেখেছি, শুনেছি গগনবিদারী কান্নার আওয়াজ। চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের আহত যাত্রী সিএনজি চালক কাউছার (২৮) জানান, রাত তখন আনুমানিক পৌনে ৩টা। যাত্রীদের অনেকেই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ বিকট শব্দে সকল যাত্রীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। মনে হয়েছিল যেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পুরো ট্রেন তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ভেতর থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। চোখের সামনে তখন অনেকের মৃত্যু দেখি। এর পর স্থানীয়রা উদ্ধার করে কসবা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পরে জখম গুরুতর হওয়ায় আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আহত কাউছার হবীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার উত্তর শ্যামলী গ্রামের আবদুল জলিলের পুত্র। তিনি আরও জানান, শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে তিনি (কাউছার) ও তার মামাত ভাই আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন, তার মামাত ভাই ইয়াসিন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। সে বাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে মারা গিয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে মা, স্ত্রী, কন্যা, ভাগ্নে বউসহ পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে একই ট্রেনে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৮)। তিনি জানান, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখিছি, কারও পা নেই, কারও মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে। স্থানীয়রা টেনে আমাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে, তবে পরিবারের অপর ৪ সদস্য কোথায় আছে, বেঁচে আছে কিনা তাও তিনি জানেন না। কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম আহতদের দেখতে হাসপাতালে আসলে তিনি পরিবারের ৪ সদস্য বেঁচে আছে কি না, কিংবা কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন। কুমিল্লা জজকোর্টে একটি মামলার হাজিরা দিতে আসছিলেন মৌলভীবাজারের আবদুস ছোবহান, তার শ্যালক সফিক ও ভাই আবদুস ছালাম। দুটি ট্রেনের সংঘর্ষের সময় অন্য যাত্রীদের সহায়তায় তিনি ও তার সঙ্গে অপর ২ জন বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, তাদের পাশের একটি বগি সংঘর্ষের সময় উপরে উঠে যাওয়ায় অনেকের কান্নার শব্দ শুনতে পান, কিন্তু তারা বের হতে পারছিল না. ভোর রাত হওয়ায় তখন স্টেশনে তেমন লোকজন ছিল না, সময়মতো উদ্ধার না হওয়ায় অনেকেই মারা যান। এদিকে দুর্ঘটনার পর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ৩ জন ছাড়াও অপর ১০ জনকে আনা হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরা হচ্ছেন সুনামগঞ্জের রেজাউল করিম, চাঁদপুরের হাসান, রোজিনা আক্তার, জুবায়ের, রোজিনা বেগম, হবিগঞ্জের মুক্তা, সুমন, নাছিমা, ফিরোজা ও শ্রীমঙ্গলের সেনেল। কুমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সফিউল জানান, ১৩ জনকে আহত অবস্থায় এ হাসপাতালে আনা হয়, এদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, ৩ জনকে বর্তমানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও চাঁদপুরের ফারহানা আক্তার (১০) নামের এক শিশুকে জরুরী বিভাগে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের দুপুরে দেখতে এসে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এ হাসপাতালে যে ৩ জন ভর্তি রয়েছে তাদের চিকিৎসার খরচ জেলা পুলিশ থেকে বহন করা হবে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে একই হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর। এ সময় আহতদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়।
×