ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে চালকদের প্রশিক্ষণ চাই

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে চালকদের প্রশিক্ষণ চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে বিনিয়োগের সব থেকে আকর্ষণীয় স্থান দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের কর্মক্ষম জনশক্তি, এটাই বিশ্বকে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বিশেষভাবে আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের সবচেয়ে একটা আকর্ষণীয় জায়গা। তবে কেবল কৃষির ওপর নির্ভরশীল না থেকে কর্মসংস্থান এবং রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক শিল্পায়নের পথে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন, রেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে। ভবিষ্যতে ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালকদের প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, রেলে যারা কাজ করেন তাদের আরও দক্ষ করা উচিত এবং সেই সঙ্গে আমাদের রেল চালকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জানি না কেন শীত মৌসুম এলেই কেবল আমাদের দেশেই নয়, গোটাবিশ্বেই রেল দুর্ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)’র গবর্নর বোর্ডের ৩৪তম সভায় সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতো সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এ ধরনের একটা দুর্ঘটনা (রেল) ঘটে গেল। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, রেলমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। রেল যোগাযোগটা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং তার সরকার এর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা রেলের বহরে নতুন নতুন ট্রেন যোগ করে রেলকে সম্প্রসারিত করে দিচ্ছি। কারণ মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে রেল সবচেয়ে নিরাপদ যান। কৃষির ওপর নির্ভরশীল না থেকে ব্যাপক শিল্পায়নের পথে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর, কিন্তু এককভাবে এই কৃষিনির্ভর না থেকে কৃষির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিল্পের উন্নয়ন করা অপরিহার্য। আর সেই উন্নয়ন করতে পারলে আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, রফতানি বৃদ্ধি পাবে, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরে বলেন, শিল্প উন্নয়ন করতে পারলেই আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি রফতানি বৃদ্ধি পাবে, দেশের মানুষের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে। দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে দেশকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ করা, এই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে বেপজা যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। সেখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী আসছে। বিনিয়োগ হচ্ছে এবং বিনিয়োগের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। শেখ হাসিনা আরও বলেন, সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা বেপজার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কারণ আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমাদের খাদ্য উৎপাদন যেন কোনমতে হ্রাস না পায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেটাও আমাদের লক্ষ্য। আর খাদ্য চাহিদা পৃথিবীতে কখনও কমবে না, এটা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শিল্পাঞ্চলগুলো বিশেষভাবে করে দিচ্ছি। যাতে করে এই সমস্ত জায়গায় শুধু শিল্প হবে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার দিকটাও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ রক্ষা করে শিল্পায়নের মাধ্যমে আমাদের দেশকে সমৃদ্ধশালী করব। সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করব। সেই লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতিমালা নিয়েছি এবং জাতির পিতা যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, সেই নির্দেশনায় গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থানটা আজকে আন্তর্জাতিক বিশে^ এমন একটা পর্যায়ে এসেছে, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়; এই নীতিমালার ওপর আজকে সত্যি সকলের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যেহেতু জনসংখ্যার অধিকাংশ কর্মক্ষম যুবক শ্রেণী আছে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারি। সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপও নিয়েছি। একেবারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিশেষায়িত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমাদের জনগোষ্ঠীকে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো উপযুক্ত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই ধরনের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, এই যে আমাদের কর্মক্ষম জনশক্তি, এটাই বিশ^কে আকর্ষণ করছে আরও বিশেষভাবে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে। বিনিয়োগের সবচেয়ে একটা আকর্ষণীয় জায়গা এখন বাংলাদেশ। কাজেই আমাদের এই দিকটা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমরা একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছি এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা আরও মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি আমরা সেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধাও দিয়ে দিচ্ছি। বিশেষ করে বেপজায় যারা বিনিয়োগ করে তারা একটু বিশেষ সুবিধাও পেয়ে থাকে এবং এখানে শ্রমিকরাও যথেষ্ট ভাল বেতন পায়, সুযোগ সুবিধা পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত হবে, যেটা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য। আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গবর্নর বোর্ডের সভায় বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম বীরপ্রতীক বেপজার বিভিন্ন কর্মকা- ও সাফল্যের দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮টি ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং রফতানিতে বৈচিত্র্য আনয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সাফল্যম-িত ৮টি ইপিজেডের অধিকাংশের যাত্রা শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। তিনি শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছেন এক যুগান্তকারী ইতিহাস। তিনি বিগত ১০ বছরে বেপজার সাফল্য তুলে ধরে আরও বলেন, জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান দ্বিগুণ করার যে লক্ষ্যমাত্রা রূপকল্প-২০২১-এ স্থির করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য বেপজা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোট উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭৯টি। বিগত ১০ বছরে বর্তমানে সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির ফলে ইপিজেডে উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯৬টি বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭৫-এ উন্নীত হয়েছে। এছাড়া আরও ১০৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সভায় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বেপজা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×