ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে গৃহবধূ রীনা খুন দু’বন্ধুসহ ভাগ্নে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৯ নভেম্বর ২০১৯

গাজীপুরে গৃহবধূ রীনা খুন  দু’বন্ধুসহ ভাগ্নে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের খালা রীনা আক্তারকে স্বপরিবারে হত্যা করে টাকা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে নিয়ে ফ্ল্যাট, পিস্তল ও মোটর সাইকেল কিনে তার ভাগ্নেসহ তিনবন্ধু বড় সন্ত্রাসী হতে চেয়েছিল। তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে র‌্যাব-১’র সদস্যরা। ওই তিনবন্ধুকে গৃহবধূ রীনাকে খুন ও তার স্বামীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ভোলা জেলা সদর থানার ধনিয়া বঙ্গেরচর (নদী ভাঙ্গা) এলাকার মৃত আঃ হামিদ বেপারীর ছেলে মোঃ হোসেন বেপারী ওরফে আপন (১৯), ঢাকা জেলার সাভার থানার ঝাউচর এলাকার মোঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোঃ রায়সুল ইসলাম রিফাত (১৯) ও মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার নারায়নপুর এলাকার মোঃ জহির রায়হানের ছেলে মোঃ ইমন রায়হান (১৮)। র‌্যাব-১’র ওই কোম্পানী কমান্ডার জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পশ্চিম বিলাশপুরের শহীদ নিয়ামত সড়ক এলাকার নিজ বাসায় গত ৩ নবেম্বর (রবিবার) গৃহবধূ রীনা আক্তারকে (৪৫) গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা এবং তার স্বামী মোঃ সিদ্দিক বেপারীকে (৫০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায় নিহতের ভাগ্নে ও তার দু’বন্ধু। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় রিফাতকে (১৯) ঢাকার আশুলিয়া এলাকা হতে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১’র সদস্যরা। পরে রিফাতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোররাতে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর বাজার এলাকায় রায়হানের নানার বাড়ি হতে রায়হান (১৮) ও নিহতের ভাগ্নে হোসেনকে (১৯) আটক করা। আটককৃতরা র‌্যাব’র কাছে ওই খুনের ঘটনা স্বীকার করে পুরো ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। পুলিশ এবং আহতের ভাই গফুর বেপারীসহ স্বজনরা জানান, ভোলা জেলা সদর থানার ধনিয়া বঙ্গেরচর এলাকার হামিদ বেপারীর ছেলে সিদ্দিক বেপারী একই জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর এলাকার তাছির আহমেদের মেয়ে রীনা আক্তারকে বিয়ে করেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পশ্চিম বিলাশপুরের শহীদ নিয়ামত সড়ক এলাকার নিজস্ব নির্মাণাধীণ ৫ তলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন সিদ্দিক বেপারী। সিদ্দিক-রীনা দস্পতির ৩ ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলে মানিক ও সোহেল সৌদী প্রবাসী। ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী দেলোয়ার তার স্ত্রীকে নিয়ে একই ফ্ল্যাটে থাকেন। সিদ্দিক বেপারীর বড় ভাই হামিদ বেপারী বিয়ে করেন রীনা আক্তারের পালিত বোন কুহিনুরকে। হামিদ বেপারী স্বপরিবারে ঢাকার আশুলিয়া থানার চারাবাগ মুন্সীপাড়া এলাকায় বাস করেন। র‌্যাব-১’র ওই কোম্পানী কমান্ডার গ্রেফতারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গ্রেফতারকৃতরা একেঅপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং মাদকাসক্ত। বখাটে এ তিন বন্ধুর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন জাগে একদিন তারা বড় সন্ত্রাসী হয়ে প্রচুর টাকা আয় করবে, সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ তাদের নাম শোনা মাত্র ভয় পাবে। এজন্য তাদের অনেক টাকা প্রয়োজন। তাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য হোসেন তার খালা রীনা আক্তারের গাজীপুরের বাসায় ডাকাতির প্রস্তাব দেয়। তারা ফ্ল্যাট, পিস্তল ও মোটর সাইকেল কিনে বড় সন্ত্রাসী হবে রীনা আক্তারকে স্বপরিবারে হত্যা করে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২ নবেম্বর (শনিবার) দুপুরে হামিদ বেপারীর ছেলে হোসেন বেপারী ওরফে আপন (১৯) তার দু’বন্ধু মোঃ রায়সুল ইসলাম রিফাত (১৯) ও মোঃ ইমন রায়হান (১৮)কে নিয়ে গাজীপুরে খালা রীনার বাসায় বেড়াতে আসে। বাসায় পৌঁছে খাবার খেয়ে তিন বন্ধু ছাদে বসে পরিকল্পনা করে। তাদের প্লানিং ছিল ভোর রাতে হোসেনের চাচা সিদ্দিক বেপারী যখন ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবেন তখন প্রথমে খালা রীনাকে হত্যা করবে, তারপর খালু সিদ্দিক বেপারী মসজিদ থেকে বাসায় ফিরলে তাকে হত্যা করবে, এরপর খালাতো ভাই দেলোয়ারকে হত্যা করবে তারা। সবশেষে খালাতো ভাবীকে (দেলোয়ারের স্ত্রী) তিনজন মিলে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে তাকেও হত্যা করে বাসায় রক্ষিত নগদ টাকা ও স্বর্ণলংকার নিয়ে পালিয়ে যাবে ওই তিন বন্ধু। পরে ডাকাতির টাকা দিয়ে তারা তিন বন্ধু ফ্লাট বাসা, পিস্তল এবং মোটর সাইকেল ক্রয় করে তাদের সন্ত্রাসী জীবন পরিচালনা করবে। এদিকে পরিকল্পনা মতো রবিবার ভোরে সিদ্দিক বেপারী নামাজের উদ্দেশ্য বের হলে তার স্ত্রী রীনাকে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে বিছানায় শুইয়ে রাখে হোসেন ও তার বন্ধুরা। পরে মসজিদ থেকে ফিরে আসলে গৃহকর্তা সিদ্দিককেও রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে গলা কেটে জবাই করার চেষ্টা করে তারা। এসময় সিদ্দিককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। আহত সিদ্দিক মৃত্যুর ভান ধরে ফ্লোরে শুয়ে থাকলে ঘাতকরা বাসার আলমারি ভেঙ্গে নগদ ৩ লাখ টাকা ও বিপুল পরিমানের স্বর্ণলংকার নিয়ে নেয়। পরে তারা দেলোয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার শয়ন কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলে গুরুতর আহত সিদ্দিক বেপারী চিৎকার দেয়। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে রক্তাক্ত জামা পড়াবস্থায় হোসেন ও তার সঙ্গীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী হতাহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রীনা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত সিদ্দিককে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকার নিয়ে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওই হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এদিকে, এ ঘটনার ৪ দিন পর র‌্যাব-১’র পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে।
×