ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খোকার অবস্থা আশঙ্কাজনক

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২ নভেম্বর ২০১৯

খোকার অবস্থা আশঙ্কাজনক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্লোশেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার অবস্থা আশঙ্কা জনক। ম্যানহাটনের স্লোশেন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে এবং যে কোন সময় খারাপ খবর আশার আশঙ্কা রয়েছে বলে শনিবার বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় খোকার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা খোকার সব চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন। খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন শনিবার নিউইয়র্ক থেকে জানিয়েছেন, সাদেক হোসেন খোকার পুরো ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। অক্সিজেন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। কথা বলতে পারছেন না। লোকজন এলে কাউকে কখনো কখনো তিনি চিনতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে। কয়েক দিন থেকে তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। ইশরাক বলেন, আমরা বড় হতাশা আর বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আব্বু-আম্মু দুজনেরই পাসপোর্ট নেই। কি করব, তাও বুঝে উঠতে পারছি না। তবে আব্বু বলেছেন, সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করা যাবে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অথবা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি প্রতিটি পদক্ষেপ নেবে। ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, বাবা এখনও বেঁচে আছেন। দশদিন যাবৎ হসপিটালে ভর্তি আছেন। ওনার অবস্থা খুবই গুরুতর। বেশ মুমূর্ষূ অবস্থায় আছেন। চিকিৎসক বলেছেন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে যে খবর ছড়ানো হয়েছে সেটা আসলেই গুজব। সে রকম কিছু এখনও হয়নি। এটা হলে-তো লুকানোর কিছু নেই। ইশরাক হোসেন বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। দুই বার কেবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন। সুতরাং লুকানো-চাপানোর কিছু নেই। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। যদি সে রকম কোনো পরিস্থিতি হয় সেটা অবশ্যই জাতীয়ভাবে নিউজ হবে। তবে এখন আমি যেটা বলতে পারি তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। ওনাকে বিভিন্ন রকম ওষুধ দিয়ে কমফোর্টেবল রাখা হয়েছে। তবে ওনার ক্যান্সারের যে ট্রিটমেন্ট চলছিল সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট দেওয়ার মতো আর পরিস্থিতি নেই। এখান থেকে ফিরে আসাটা আল্লাহর ওপর নির্ভর করছে। হাসপাতালে খোকার পাশে আছেন তার স্ত্রী ইসমত হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক, ছেলে ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন। এদিকে সাদেক হোসেন খোকার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই তাঁর রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে আইসিইউতে যাওয়ার আগে কথা বলেছেন। সাদেক হোসেন খোকা দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন। বর্তমানে বাবা সাদেক হোসেন খোকার পাশে অবস্থান করা বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রতিদিনই দলের নেতাদের কাছে খোকার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থান জানাচ্ছেন। শনিবার তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবাকে অক্সিজেন দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতি হওয়ায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে খোজখবর নিচ্ছেন। বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আইসিইউতে যাওয়ার আগে সাদেক হোসেন খোকা দেশে আসার জন্য কান্নাকাটি করেছেন। তবে তাঁর জটিল রোগের চিকিৎসা দেশে সম্বব নয় ভেবে আত্মীয়স্বজনরা খোকাকে দেশে আনতে রাজি হয়নি। আবার কেউ কেউ বলছে, সাদেক হোসেন খোকার পাসপোর্টের মেয়াদ নেই, তাই ইচ্ছে করলেই তাঁকে দেশে আনা সম্বব নয়। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক যান সাদেক হোসেন খোকা। তারপর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় অবস্থান করে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। কয়েক সপ্তাহ আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে স্লোশেন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি করা হয় খোকাকে। ২৮ অক্টোবর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। এখনও তিনি আইসিইউতেই আছেন। জানা যায় বেশ কিছুদিন আগেই খোকার মুখে ঘা হয়ে যায়। তিনি খাবার খেতে পারছিলেন না বিধায় হাসপাতালে ভর্তির পর ২৭ অক্টোবর তার ফুসফুসে একটি ছোট অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাকে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ভিজিট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, ছয় মাস পর পর যাওয়া-আসা করে আমেরিকার ভিসা বৈধ রাখার নিয়ম। ২০১৭ সালে খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারা নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন জানান, নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কনস্যুলেট থেকে তাদের কোনো সদুত্তর দেওয়া হয়নি। এদিকে সাদেক হোসেন খোকা গুরুতর অসুস্থ্য শুনে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন খোকার এক সময়েরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘তুমি ফিরে এসো খোকা, আমি অপেক্ষায় থাকবো’। তিনি তার স্ট্যাটাসে আরও বলেন, ‘প্রিয় খোকা, আমি জানতে পারলাম তোমার শরীর খুব খারাপ। তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জানার পর থেকে আমার মানসিক অবস্থা যে কতটা খারাপ এই কথাটুকু কার সঙ্গে শেয়ার করবো সেই মানুষটা পর্যন্ত আমার নেই। তুমি আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। অনেক স্মৃতি আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ভাসছে।
×