ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলীয় কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই

বর্জ্যবিদ্যুত উৎপাদনে যাচ্ছে কুষ্টিয়া পৌরসভা

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

বর্জ্যবিদ্যুত উৎপাদনে যাচ্ছে কুষ্টিয়া পৌরসভা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্জ্যরে মালিকানা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় দেশের বড় নগরগুলোতে বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনে অনিশ্চয়তার মধ্যে কুষ্টিয়া পৌরসভা পথ দেখাল। ছোট আকারের হলেও বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে পৌরসভাটি। বুধবার ঢাকায় একটি অস্ট্রেলীয় কোম্পানির সঙ্গে বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনে সমঝোতা স্মারক সই করেছে তারা। সরকার দীর্ঘ সময় ধরে নগর বর্জ্যর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিচ্ছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনে নিজেদের মালিকানা ছাড়তে চাইছে না। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হস্তেক্ষেপ করলেও কোন সুরাহা হয়নি। ফলে দেশের বড় তিন নগর কর্পোরেশনের বর্জ্যর সঠিক ব্যবস্থাপনা দুরূহ রয়ে গেছে। তিন সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে বিদ্যুত বিভাগ সহযোগিতা না করার অভিযোগ তুলেছে বারবার। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বলছে, বিনামূল্যে কেন তারা বর্জ্য সরবরাহ করবে। যুক্তি হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্জ্য থেকে বিদ্যুতের উৎপাদনে যে খরচ পড়ে তার থেকে বিক্রয় মূল্য অনেক কম। সাধারণত নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখতেই উন্নত দেশগুলো ভর্তুকি দিয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে যদি বর্জ্য কেনার জন্য আবার অর্থ পরিশোধ করতে হয় তাহলে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়বে। পিডিবির পক্ষে এই লোকসান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা কঠিন হবে। বড় নগরের পিতাদের মধ্যে এমন দেন দরবারের মধ্যে কুষ্টিয়া পৌরসভা বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। বুধবার টেকসই নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ¯্র্েরডার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে কুষ্টিয়া পৌরসভা। পৌরসভার তরফ থেকে বলা হচ্ছে ছোট পৌরসভা হওয়াতে এখানে বর্জ্যরে উৎপাদন কম। এই বর্জ্য দিয়ে তারা প্রতিদিন ১০০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে এটি দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুত কেন্দ্র হতে পারে। বলা হচ্ছে ছোট আকারের হলেও এটিকে সরকার প্রাধান্য দিয়ে আসছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদন পরিবেশের জন্য ভাল। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে। এতে জীবাণুর বিস্তার ঘটে না। ফলে নগর হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যসম্মত। কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলি এবং ¯্রডোর সচিব নিয়াজ রহমান স্ব-প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সই করেন। এখানে কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে অষ্ট্রেলীয় ওয়স্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। কেন্দ্রটি নির্মাণে সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয় হবে। গড় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হবে ইউনিট প্রতি ১০ টাকার মতো। এমওইউ সই অনুষ্ঠানে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস ছাড়াও ¯্রডোর চেয়ারম্যান মোঃ হেলাল উদ্দিন ছাড়াও বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম ইতালিয়ান কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স এসআরএলের সঙ্গে ২০১৩ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চুক্তি হয়। ঢাকার বর্জ্য দিয়ে দৈনিক ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করার কথা ছিল কোম্পানিটির। পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি করে ১০০ মেগাওয়াট করার পরিকল্পনাও ছিল। তবে পরে ওই কোম্পানিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করাতে আর প্রক্রিয়া আগায়নি। এরপরই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকার দুই নগর অফিসের হিসাব বলছে দেড় কোটির বেশি মানুষের এই ঢাকাতেই প্রতিদিন অন্তত আট হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হয়। এর সঙ্গে রাজধানীর হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে আরও এক হাজার ৫০০ টন বর্জ্য যোগ হয়। ঢাকার পরেই একই এলাকায় বেশিসংখ্যক মানুষের বাস চট্টগ্রামে। বন্দরনগরীতে এক সঙ্গে বসবাস করছেন ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ। এখানে প্রতিদিন উৎপাদিত হয় দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টন বর্জ্য। কেবল এই দুই মহানগরীতে প্রায় ১২ হাজার টন বর্জ্যর মধ্যে বেশিরভাই রান্নার উচ্ছিষ্ট পচনশীল; যা মিথেন উৎপাদন করতে সক্ষম। হিসাব বলছে, এই বর্জ্যরে পরিমাণ মোট বর্জ্যরে ৬০ শতাংশ। প্রতি এক মেগাওয়াট বিদ্যুত প্ল্যান্ট চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় ৪০ টন বর্জ্য। এই হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বর্জ্য দিয়ে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। এর বাইরে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরের বর্জ্য দিয়ে স্থানীয়ভাবে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হতে পারে। বর্জ্য ফেলার জন্য যেসব ল্যান্ডিং স্টেশন রয়েছে সেখানেই বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। ফলে নতুন করে জমিরও দরকার নেই। কিন্তু সম্ভাবনা থাকার পরও ঢাকা ও চট্টগ্রাম বর্জ্য বিদ্যুত উৎপাদনে এগিয়ে আসছে না।
×