ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ই-গবর্ন্যান্সে পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে সেরা পঞ্চাশে দেখতে চাই

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২১ অক্টোবর ২০১৯

 ই-গবর্ন্যান্সে পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে সেরা পঞ্চাশে দেখতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জাতিসংঘের ই-গবর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকবে। ১০ বছরে ডিজিটাল সেবার বিস্তৃতি ও উন্নতি ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে। দেশের তরুণ সমাজ তথ্যপ্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে। রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে ই-গবর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান রিপোর্ট প্রকাশ ও এটুআইয়ের তিনটি নাগরিক সেবা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হু কাং-ইল প্রমুখ। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জাতিসংঘের আইসিটি ইন্ডিকেটর ডিজিটাল গবর্নেন্স ইনডেক্সের সেরা ৫০ দেশের মধ্যে আসতে চাই আমরা। কয়েক বছরে আমরা (ডিজিটাল গবর্নেন্স ইনডেক্সে) ৪০-৫০ ধাপ এগিয়েছি। আগামী ৫ বছরে আমরা কেন আরও ৫০ ধাপ এগিয়ে যেতে পারব না। ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের আওতায় সরকার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এর ফলে এখন সব শহরেই রয়েছে ফোরজি সেবা। দেশের ‘আইটি সিস্টেম’ ২০২১ সালের মধ্যে ৩শ’ টি পৌরসভায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। তখন ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসে আমরা অনেক সেবা যোগ করতে পারব। ‘২১ সালের মধ্যে নাগরিক সেবাগুলো মোবাইল ফোনে আঙ্গুলের ছোঁয়ায় অথবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিস পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ নাগরিককে সেবা দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ১০ বছর পরে ই-গবর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে আইসিটি বিভাগ। সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বের ‘আধুনিক আইটি সিস্টেম রয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ বলেন, ১০ বছর আগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন অনেকেই বুঝতে পারেনি যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ কী? তবে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ১১২টি সেবা ডিজিটাইজড হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সরকারের আরও সেবা রয়েছে সেগুলো দ্রুত অটোমেশন করতে হবে। তাহলে যথাযথভাবে সার্ভিসগুলো মনিটর সম্ভব হবে। সভাপতির বক্তৃতায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সেবাগুলো সম্পর্কে ই-গবর্ন্যান্স ব্যবস্থায় এগিয়ে যেতে হলে দরকার সময় এবং অর্থের ব্যয় কমিয়ে আনা। তার জন্যই এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর উদ্যোগে আমরা চালু করেছি একশপ, একপে এবং একসেবা। সরকারের সব সেবা একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে চাই। পর্যায়ক্রমে সরকারের ৩ হাজার সেবাকে আমরা একসঙ্গে নিয়ে আসব। আগামী ২ বছরের মধ্যে ৪০ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করবে আইসিটি বিভাগ। অনুষ্ঠানে আইসিটির ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ’ প্রকল্পের আওতায় এক শ’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে ল্যাপটপ দেয়ার ঘোষণা করা হয়। স্কুল পর্যায়ে শিশু কিশোরদের প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করতে ২০২১ সালের মধ্যে ৬৪টি শেখ কামাল আইটি ইউকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করবে আইসিটি বিভাগ। ‘ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম’ পাইলট প্রকল্পের অধীন পরীক্ষামূলকভাবে অনুষ্ঠানে বলা হয়, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ও ৯টি পৌরসভা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ, টুঙ্গিপাড়া, পীরগঞ্জ, সিংড়া, তারাব ও রামগতিতে ‘ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতিতে নাগরিক সেবা’ প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘একসেবায়’ এখন পর্যন্ত ১৬২টি সরকারী সেবা রয়েছে। এই সেবা পেতে নাগরিকদের ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইটেও যেতে হবে না। এক জায়গা থেকেই এসব সেবা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে এতে আরও তিন হাজার সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ‘একপে’ এর মাধ্যমে সরকারী বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবার বিল ও অন্যান্য ফি এক জায়গা থেকেই দেয়া যাবে। আর ‘একশপ’ এর মাধ্যমে দেশের যেকোন জায়গা থেকে পণ্য উৎপাদক বা উদ্যোক্তারা ই-কমার্সে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে।’ পরে আইসিটি উপদেষ্টা ‘ই-গবর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান’ রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচনের পাশাপাশি পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম’, ‘একসেবা’, ‘একপে’ এবং ‘একশপ’ এরও উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতিসংঘের ই-গবর্ন্যান্স সার্ভে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-গবর্ন্যান্সে ডেভেলপমেন্ট সূচকে ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে বংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। এই সূচকে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে ডেনমার্ক ও সর্বনিম্ন অবস্থানে সোমালিয়া। দুই বছর পর পর এই জরিপ চালায় জাতিসংঘ।
×