ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে ক্যাসিনোর প্রথম সন্ধান পল্টনের ওমিট টাওয়ারে

প্রকাশিত: ১০:২১, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 রাজধানীতে ক্যাসিনোর প্রথম সন্ধান পল্টনের ওমিট টাওয়ারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে প্রথমবারের মতো ক্যাসিনোর সন্ধান পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি ভ্রাম্যমাণ টিম। পল্টন থানাধীন জামান ওমিট টাওয়ারের ১৩ ও ১৪ তলায় ক্যাসিনোতে প্রকাশ্যে রমরমা জুয়ার ধুম দেখে হতবাক হয়ে যান মাদকের এডভান্স টিমের প্রধান উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা ও পরিদর্শক কামরুল ইসলাম। তারা সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েন। এক পর্যায়ে অনেকটা হুমকির মুখে তিনি তার টিম নিয়ে সেখান থেকে ফিরে পল্টন থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেন। এজাহার লেখার পর থানা থেকে তাকে বলা হয় এ মামলা নেয়া যাবে না। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে চলে বাদানুবাদ। শেষ পর্যন্ত সাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি জিডি করেন। যার নং ১৪৬২। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সোর্সের মাধ্যমে ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এডভান্স টিম দীর্ঘদিন নজরদারি চালান ওই টাওয়ারে। বিস্তারিত তথ্য হাতে নিয়ে জ্যোতি মুকুল চাকমা ও কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালানো হয় গত বছরের ২১ মার্চ। সঙ্গে এপিবিএনসহ প্রায় ৮০ জন নিরাপত্তা রক্ষী। তারা সেখানে দেখতে পান দেশী-বিদেশী তরুণীদের উদ্দাম নৃত্যের পাশাপাশি, ক্যাসিনোর চোখ ধাঁধানো চরক আর দেশী মদ বিয়ারের গোগ্রাস। পশ্চিমা রীতির এমন কা-কীর্তি দেখে মুকুল জ্যোতি কথা বলতে চান ক্যাসিনোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তখন তাকে বলা হয়-উপরের মহলের সবাইকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এ ক্যাসিনো। এটা আর গোপন কিছু নয়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক জ্যোতি মুকুল চাকমা জনকণ্ঠকে বলেন, সেই রাতে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল। আমরা সেখানে দেখি নেপালী ১৬/১৭ তরুণ-তরুণী ক্যাসিনোর বোর্ড অপারেট করছেন। শ’ দেড়েক লোক সেখানে মদে বুঁদ হয়ে ক্যাসিনোতে ব্যস্ত। আমাদের দেখেও তাদের টনক নড়েনি। আমরা আমাদের অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদ বিয়ার জব্দ করি। এ সময় জুয়ার ৩৭ লাখ টাকাও সেখানে পাওয়া যায়। অবাক কা- আমাদের অভিযান সিসিটিভির মাধ্যমে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন যুবনেতা, যিনি এখন রিমান্ডে রয়েছেন। তার নির্দেশে সেখানে হাজির হয় তিন অস্ত্রধারী, যারা নিজেদের যুবলীগ নেতার বডিগার্ড পরিচয় দেন। তারা রীতিমতো আমাদের অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিতে থাকে। এরই মধ্যে একটি কল আসে আমার মোবাইলে। তারপর নিরুপায় হয়ে মুখ ফ্যাকাশে করে চলে আসতে বাধ্য হই। তবে টাকা জব্দ করতে না পারলেও মদ বিয়ারগুলো নিয়ে পল্টন থানায় গিয়ে মামলা করতে চাই। বিধিবাম এখানেও বাধা। পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি করার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত জিডি করেন পল্টন এলাকার মাদকের পরিদর্শক সাজেদুল ইসলাম। মুকুল জ্যোতি চাকমা জানান, ওই ঘটনার পর চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল। এখন বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ক্যাসিনো নিয়ে নানা কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে আমরাই মাদকের পক্ষ থেকেই প্রথম অনুসন্ধান চালাই।
×