ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দুই সিটির ৫০ কাউন্সিলর নজরদারিতে

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

ঢাকার দুই সিটির ৫০ কাউন্সিলর নজরদারিতে

শংকর কুমার দে ॥ গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উত্তর এবং দক্ষিণের অর্ধশতাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। যে কোন সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন আরও কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই এখন আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। হত্যাকা-, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মদ, জুয়া, নারী কেলেঙ্কারি, ভূমি দস্যুতা, জুলুম, অত্যাচারসহ নানা ধরনের গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। সিঙ্গাপুরে পলাতক আছে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। গ্রেফতার হয়েছে আরেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। পাগলা মিজান ও মমিনুল হক সাঈদ এই দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করা হতে পারে। এছাড়াও অর্ধশতাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির অভিযান শুরুর পর অন্যতম হোতা হিসেবে খ্যাত কমিশনার মমিনুল হক সাঈদ সিঙ্গাপুর থেকে এখনও দেশে ফেরেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন মোহাম্মদপুরের আলোচিত কাউন্সিলর পাগলা মিজান। এছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আলোচিত কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। যে কোন সময় তারা গ্রেফতার হতে পারেন। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর-৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার আলাউদ্দিনের চেরাগ বাতির বদৌলতে তার এই ধনাঢ্য হওয়ার পেছনে রয়েছে নানা ধরনের অপরাধী কর্মকা-। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিরপুরের অন্তত অর্ধ ডজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলোচিত হত্যা মামলার আসামি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন আলোচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন যারা শূন্য থেকে আজ হাজার কোটি টাকার মালিক। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যের চেয়ে তাদের ক্ষমতার দাপট অনেক বেশি। বিভিন্ন দল থেকে এসব ভুঁইফোড় নেতারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ঢাকার দুই সিটিতে অন্তত অর্ধ শতাধিক এমন ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। জমি দখল, ফ্ল্যাট দখল, মার্কেট দখল এমনকি ফুটপাথ দখল করে বাণিজ্যের সরাসরি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব ওয়ার্ড কাউন্সিল ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগের পাল্লা ভারি। আমাদের হাতে কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলের তালিকা এসেছে। তাদের গতিবিধির ওপর সর্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। যে কোন সময় এসব ওয়ার্ড কাউন্সিল আইনের আওতায় চলে আসবে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, যেসব ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ আছে তাদের অনেকেই সিটি কর্পোরেশনের সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না। আইন অনুযায়ী যারা একাধারে তিনটি থেকে আটটি সভায় অনুপস্থিত থাকছেন তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে বরখাস্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একাধারে তিন সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, জুয়া ও দখলবাজসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সরকারের অনুমতি ছাড়াই অনেকে বিদেশেও গেছেন বলে অভিযোগ আছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত বৈঠকটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলে শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করেন। এই শুদ্ধি অভিযানটি দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সেই বৈঠকে শেখ হাসিনা সাংগঠনিক স্থবিরতার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের ভর্ৎসনা করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে মনস্টার হিসেবে অভিহিত করে তাদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন। এরপর আসে যুবলীগ প্রসঙ্গ। শেখ হাসিনা বলেন, এরা তো শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জুয়ার আসর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে যুবলীগের নেতা ইসলাম হোসেন সম্রাট, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, জিকে শামীম, লোকমান হোসেনের মতো বাঘা বাঘা লোক গ্রেফতার হন। এ সময়ই পালিয়ে যান ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রেফতার হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। এরপরই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আমলনামা তৈরির কাজ শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা অনুযায়ী অন্তত অর্ধ শতাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে, এদের অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন, অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×