ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিপইয়ার্ড করার জন্য ৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাবনা

মংলার দিগরাজ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন নানা সঙ্কটে

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

মংলার দিগরাজ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন নানা সঙ্কটে

আহসান হাবিব হাসান, মংলা থেকে ॥ নানা সঙ্কটে মুখ থুবড়ে পড়েছে মংলার দিগরাজে অবস্থিত মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতি অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় সরকারী এই প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে আছে। এ প্রতিষ্ঠানের বরফ কল, ফিস মিল ও ফিস নেট ফ্যাক্টরি শেষ কবে নাগাদ চালু হয়েছিল তাও কেউ জানেন না। বছরের পর বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ মরিচা পড়ে নষ্টসহ লাখ লাখ টাকা মূল্যের মেশিনারিজ লোপাট হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ তিনটি পুকুরের পানি বিক্রি, ফলদ, কৃষি বহিরাগতদের জমি লিজ ও ঘর ভাড়া দিয়ে এখন কাগজে-কলমে আর নামেই শুধু টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে মংলার দিগরাজ এলাকায় ৩০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। তৎকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের পেছনে সরকারী কোষাগারের প্রায় ২০ কোটি ব্যয় হয়। স্থাপিত হওয়ার পর এটি বেশ খ্যাতি অর্জন করে। তখন এ প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ চুক্তিভিত্তিক জনবলের সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। অর এ প্রকল্প থেকে বরফ, ফিস মিল, নেট জাল, কীটনাশক উৎপাদন ও বিদেশে হিমায়িত মৎস্য রফতানি করে লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি খুব অল্প সময়েই পরিচিতি নেয়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিণত হয়েছে ভগ্নদশা প্রতিষ্ঠানে। এ প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, এ্যাকাউন্ট্যান্টসহ ৩৯টি পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। আর বাকি পদসমূহ বছরের পর বছর শূন্য রয়েছে। একমাত্র বরফ কলটি দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, ফিস মিল ফ্যাক্টরি ও ফিস নেট ফ্যাক্টরি বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চাকা সর্বশেষ কবে নাগাদ ঘুরেছে তা জানেন না অধিকাংশ কর্মচারীর। ৭০ দশকে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ৬টি নৌযান এখনও কাগজে কলমে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানান, কয়েক দশক আগেই ওই নৌযানসমূহের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে। কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ২০ কক্ষ বিশিষ্ট ৫ তলা ভবন একটি, আধাপাকা ১৫-১৬ কক্ষ বিশিষ্ট ৭টি ভবন রয়েছে। লোকবল কম থাকায় আবাসিক ভবন গুলো ব্যবহৃত না হওয়ায় জরাজীর্ণ কুটিরে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ ফ্যাক্টরি যন্ত্রাংশ মরীচিকা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বন্ধ কলকারখানার লাখ লাখ টাকার মেশিনারিজ লোপাট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ হাজতবাসও খেটেছেন বলে জানা গেছে। তবে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে কর্পোরেশনের ৫ তলা ভবনের ২০টি কক্ষ বিদ্যুত-পানিসহ মাসিক ৩ হাজার টাকা এবং আধাপাকা টিনশেডের ১৭টি কক্ষ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি পুকুর থেকে পানি বিক্রি, ঘর ভাড়া ও নারিকেল-সুপারি ফলফলাদি এবং জমি ইজারার আয়ের ওপর নির্ভর করে চলছে। এ ছাড়া প্রকল্পের ৩টি পুকুরের পানি ওয়াটার প্লান্টের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ টাকা ঘর ভাড়া আর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার পানি বিক্রি, ফলদ গাছের ইজারায় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা আয় হয়। এ ছাড়া ৩টি পুকুরে শৌখিন মাছ শিকারিদের বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জনপ্রতি ১২শ’ টাকা ধরে টোকেন দেয়া হয়। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গড় আয় ৩৩ লাখ টাকা আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৬ লাখ টাকা। তবে কর্পোরেশনের ম্যানেজার নাইম অহমেদ রিয়াদ জানান, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি এখানে বদলি হয়ে আসেন। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি লাভে রয়েছে দাবি করে তিনি জানান, পুকুরের পানি বিক্রি, ঘর ভাড়া আর ফলদ বাগানের ইজারা দিয়ে এখন আগের তুলনায় বেশ ভাল আয় হচ্ছে। গড়ে বছরে প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হলেও কর্পোরেশনের ভবন, রাস্তা সংস্কার ও পুকুরে মাছ অবমুক্ত, কর্মচারীদের বেতনসহ সকল খরচ মিটিয়ে গত অর্থবছরে ৪৬ লাখ টাকা মুনফা রয়েছে। অনিয়ম অব্যবস্থপনার বিষয় তিনি বলেন এ সব আগে হয়েছে, তিনি আসার পর সংশোধনীসহ নজরদারি বাড়িয়েছেন। প্রকল্পের অভ্যন্তরে নিয়ম ভঙ্গ করে থাকা বহিরাগতদের উচ্ছেদ করতে করার চেষ্টা করছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি শিপইয়ার্ড করার জন্য গত দুমাস আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে ৭৩ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
×