ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেস্ক (জিএইচআই) বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানের চেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। তবে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে। তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। এরপর রয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। মঙ্গলবার এই সূচক প্রকাশিত হয়। ২০১৪ সালে মোট ৭৭ দেশের মধ্যে এই তুলনামূলক সূচকে ভারতের অবস্থান ছিল ৫৫তম। -খবর ইন্ডিয়া টুডের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশ দুটি ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে সফল হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও নেপাল শিশুপুষ্টিতেও অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে যা অন্যদেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে বলে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেস্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ক্ষুধা ও অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত থাকলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গত বাংলাদেশের অবস্থান গত কয়েক বছর ধরে আটকে আছে একই বৃত্তে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট চলতি বছরের ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ প্রকাশ করেছে, তাতে ১১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৬ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৮৬, ৮৮ ও ৯০ নম্বরে। জিএইচআই তৈরি হয়েছে চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে। অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের স্কোর হিসাব করা হয়েছে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে। এই সূচকে সবচেয়ে ভাল স্কোর হল শূন্য। স্কোর বাড়লে বুঝতে হবে, ক্ষুধার রাজ্যে সেই দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর স্কোর কমা মানে, সেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে। মোট স্কোর গতবারের ২৬ দশমিক এক থেকে কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮। তারপরও বাংলাদেশ বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে কারণ অন্যদের উন্নতি ঘটছে আরও দ্রুত গতিতে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শিশুর প্রতিদিনের গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১৮০০ কিলোক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ক্ষুধা সূচক বলছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ অপুষ্টির শিকার; পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১৪ দশমিক ৪ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম; ওই বয়সী শিশুদের ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ শিশুর ওজন বয়সের অনুপাতে কম ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সূচকে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। ১৭ দশমিক এক স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান সূচকের ৬৬ নম্বরে। আর সাত দেশের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানের অবস্থান সূচকের ১০৮ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে এগিয়ে থাকা অর্থনীতি ভারতের এই সূচকে পিছিয়ে থাকার মূল কারণ বিপুল জনসংখ্যা। খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত রাখলেও জনসংখ্যার ব্যাপক বিস্তারের তুলনায় তার গতি ধীর। ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২০ দশমিক ৮ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম, যা প্রতিবেদনের ১১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ১১৭ দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৬৬, বাংলাদেশ ৮৮, পাকিস্তানের অবস্থান ৯৪ ও ভারতের অবস্থান এখন ১০২। দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তান ভারতের চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকায় ভারতের অনেক বিশ্লেষক চমকে উঠেছেন। সূচকে ক্ষুধামুক্ত বিশ্বের তালিকায় মোট ৪৫ দেশের অবস্থান একেবারেই নাজুক। এ তালিকাতেও ভারতের অবস্থান নগণ্য। জানা গেছে, ভারতের ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী মাত্র নয় দশমিক ৬ শতাংশ শিশু প্রয়োজনীয় খাবার পায়। ২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, ভারতের ৯০ শতাংশ পরিবার সুপেয় পানি পান করলেও ৩৯ শতাংশের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই। ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতকে খোলা জায়গায় মলত্যাগ মুক্ত দেশ বা (ওডিএফ) হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেস্কের এই প্রতিবেদনের সঙ্গে মোদির ঘোষণার গরমিল দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বহু জায়গায় এখনও মানুষ খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কর্ম সারছে। মোদি ২০১৪ সালে ক্লিন ইন্ডিয়া বা স্বচ্ছ ভারত কর্মসূচী শুরু করেন। কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ছিল, খোলা জায়গায় মলত্যাগ রোধ ও সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা করা। মোদির এসব প্রকল্প প্রকৃতপক্ষে পুরোপুরি কাজে আসেনি। দেশটিতে অনেক নতুন ল্যাট্রিন তৈরি হলেও এখনও খোলা মাঠে মলত্যাগের ঘটনা ঘটছে। আর এর ক্ষতিকর প্রভাব মানুষ ও শিশুদের ওপর পড়ছে। শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধি ও তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে ভারতের গ্রামীণ ও শহুরে মানুষের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে কি না-তা স্পষ্ট করা হয়নি। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ ও নেপালের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।
×