ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি আলোক ফাঁদ

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি আলোক ফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ চলতি আমন মৌসুমে ধানক্ষেতের পাশে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ধানের ক্ষতিকর পোকা দমন পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলার গৌরনদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ধানক্ষেতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আলোক ফাঁদের আয়োজন করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দিন যতোই যাচ্ছে ফসলে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা বুঝে কিংবা না বুঝে আর দোকানদারদের খামখেয়ালীপনায় ফসলের জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করে আসছেন। এতে করে ফসল ফলনে যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই কৃষকদের জন্য পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিগুলো কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিয়মিতভাবে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আলোক ফাঁদ একটি পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি। সন্ধ্যার পর একটি বড় পাত্রে পানির উপর আলো জ্বালিয়ে পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি অনুযায়ী ওই ক্ষেতে কোন পোকার উপদ্রব বেশি সেই হিসেবে জমিতে পরিমাণ মতো বালাইনাশক প্রয়োগ করে ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। সঙ্গে রক্ষা পাবে পরিবেশের ভারসাম্যও। উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার গ্রামের কৃষক ও ইউপি সদস্য হাসান আল মামুনসহ অনেকেই বলেন, আগে আমরা আলোক ফাঁদ কি জানতাম না। সম্প্রতি সময়ে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব এই কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে আমরা নিজেরাই ধানের জমির ক্ষতিকারক পোকা চিহ্নিত করে কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারছি। এতে করে আমাদের খরচ কম হচ্ছে। অপরদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে। আমরা আলোক ফাঁদের মাধ্যমে খুবই উপকৃত হচ্ছি। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতের আইলে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে, কোথাও কাগজের উপড় আলো জ্বেলে কৃষকরা ধানে আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকা ধরছেন। কৃষকরা নিজেই জমিতে এই পোকাগুলোর উপস্থিতি দেখে ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণের আগেই কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা খুব সহজেই নিরূপন করতে পারছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা নিজেই তাদের আমন ক্ষেতে কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রয়োগ করতে পারছেন। এতে করে পোকার আক্রমনের আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন প্রান্তিক কৃষকরা। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহিলাড়া ইউনিয়নের কৃষি বান্ধব চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে এলাকার কৃষকরা বর্তমানে খুব কম ওষুধ ব্যবহার করছেন। এতে কৃষকদের খরচ অনেকটাই কমে আসছে এবং ধানের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবার আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা। প্রান্তিক চাষীদের কাছে কৃষক বন্ধু হিসেবে পরিচিত উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আলোক ফাঁদ এটি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধান ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন। আমন মৌসুমে কৃষকরা এই পদ্ধতিটি অব্যাহত রাখলে একদিকে যেমন তাদের ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে, তেমনি ধানের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, আধুনিক পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিগুলো কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমরা মাঠপর্যায়ে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। আলোক ফাঁদ তেমনি একটি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। কৃষকরা এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করলে তাদের কৃষিতে খরচ যেমন কম হবে, তেমনিভাবে ফলন বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। আর কৃষকরা এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই তাদের ফসলের ক্ষতিকারক পোকা চিহ্নিত করে আমাদের পরামর্শে বালাইনাশক ব্যবহার করে ফসল রক্ষা করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, গত ১৫ অক্টোবর রাতে উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের কৃষি বান্ধব চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর নিজস্ব অর্থায়নে তার ইউনিয়নের ছয়টি ব্লকের আমন ধান ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য একযোগে এই আলোক ফাঁদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×