ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আজ ‘গণশপথ’

বুয়েট ॥ মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের ইতি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

বুয়েট ॥ মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের ইতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির অধিকাংশই পূরণ হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা। অধিকাংশ দাবি পূরণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্দোলনে বিভক্তি ও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর আন্দোলন বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় মঙ্গলবার দিনভর নাটকীয়তার পর সন্ধ্যায় নিজেদের অবস্থান জানান শিক্ষার্থীরা। তবে ক্লাস বন্ধের পক্ষেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মত নেই বলে বলেছেন শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। একটি অংশ অচলাবস্থ্ াজিইয়ে রাখতে তৎপর। নতুন করে দেয়া পাঁচ দফা বাস্তবায়ন করায় ভর্তি পরীক্ষার জন্য আন্দোলন ১৩ ও ১৪ অক্টোবর শিথিল রাখা হয়েছিল। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সোমবার পরীক্ষার পরই সন্ধ্যায় নতুন আন্দোলনের বিষয়ে তাদের অবস্থান জানাবেন। কিন্তু অধিকাংশ দাবি পূরণ হওয়ায় সোমবারই আন্দোলন থেকে সরে আসার পক্ষে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা জানিয়ে দেন, এখন আর আন্দোলন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তবে একটি গ্রুপ আন্দোলন বন্ধ করতে রাজি নয়। দেখা দেয় বিভক্তি। এমন অবস্থায় সোমবার রাতে তারা কোন ঘোষণা দিতে পারেননি। তবে বলা হয় মঙ্গলবার সকালে বুয়েট শহীদ মিনারে পরবর্তী অবস্থান জানানো হবে। মঙ্গলবার সকালে বুয়েটের দিকে সবার নজর থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাড়া সমাবেশ করার মতো কোন আয়োজন দেখা যায়নি। সকালে ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হলেও তারা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি মতবিরোধের কারণে। এরপর দুপুর পর্যন্ত কোন অবস্থান জানাতে না পারলেও প্রকাশ হতে থাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আন্দোলন না করার পক্ষে অবস্থানের কথা। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সন্ধ্যায় আন্দোলনের বিষয়ে অবস্থান জানানো হবে। দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজনকে তার সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এখন আসলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মনে করেন আর আন্দোলনের মানে হয় না। যারা সাধারণ শিক্ষার্থী তারা যে দাবি করেছেন তার অধিকাংশই পূরণ হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। পড়ালেখারও ক্ষতি হচ্ছে সবার। তাই কয়েক দফা আলোচনায় এমন অবস্থান তুলেছেন অনেকে। কিন্তু সিনিয়রদের অনেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান। এ নিয়ে বিভক্তি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে এ শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলন যারা করেছেন তারা অনেকেই এখন বলছেন, বুয়েট ইস্যু নিয়ে অনেকে রাজনীতি করছেন। আমরা কাউকে রাজনীতি না করতে অনুরোধ করলেও কাজ হচ্ছে না। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে একটি পক্ষ উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার করছেন। এমন অবস্থায় তাই অনেকেই একটি আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচী স্থগিত করার কথা বলেছেন। তবে বোঝা যাচ্ছে না কি হয়। ১৯ অক্টোবর থেকে কয়েক ব্যাচের শিক্ষার্থীর টার্ম পরীক্ষা শুরু হবে। এ কারণে বুয়েটে এখন ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় প্রশাসনের তৎপরতায় সদিচ্ছা দেখে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের ইতি টানার কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা খুনীদের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বুয়েট শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। তারা বলেন, বুধবার (আজ) বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ‘গণশপথে’ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন তারা। আর এর মধ্য দিয়েই তাদের মাঠের আন্দোলনের ‘আপাতত’ ইতি টানা হবে। শিক্ষার্থীরা বলেন, দশ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। দাবিগুলোর মধ্যে তিনটি দাবি ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। আমরা দেখেছি অনেককে গ্রেফতার, রিমান্ড মঞ্জুর ও জবানবন্দী নিয়েছে। এ কারণে আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৎপর ছিলেন বলেই এত দ্রুত এই বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে আমরা বিশ^াস করি। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থা তার স্বাভাবিক গতিতে বিচার কাজ এগিয়ে নিবে বলে আমাদের বিশ^াস। তারা আরও বলেন, দশটির মধ্যে পাঁচটি দাবি ছিল বুয়েট প্রশাসনের কাছে। দাবি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে আমরা বুয়েট প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ করেছি। জড়িতদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। নোটিস এসেছে জড়িতদের তদন্তের ভিত্তিতে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তের ভিত্তিতে নতুন করে যদি কোন অপরাধীর নাম ওঠে আসে তাদেরও আজীবন বহিষ্কার করা হবে। আবরারের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করা হবে বলেও আমাদের নোটিসের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। বুয়েটে সাংগঠনিকভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি হলে হলে রাজনৈতিক কক্ষগুলো সিলগালা করা হয়েছে। সাধারণ ছাত্র ও প্রাধ্যক্ষের উদ্যোগে অবৈধ ছাত্রদের উৎখাত করা হয়েছে। বিআইআইএস একাউন্টে নির্যাতিতদের অভিযোগ জানাতে একটি প্ল্যাটফর্ম সংযুক্ত করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ মনিটরিং করার জন্য প্রশাসনিক পদ সৃষ্টি করার দাবি জানিয়ে এসেছি। তারা একই সঙ্গে বলেন, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আমরা লক্ষ করেছি যে, আমাদের ভাইয়ের লাশকে কেন্দ্র করে আড়ালে অন্তরালে অনেক স্বার্থান্বেষী সংগঠন নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব মহলের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানায়, এসকল স্বার্থান্বেষীদের এজেন্ডা দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। রাজপথে আমাদের অবস্থানকে দীর্ঘায়িত করে কোন অপশক্তিকে এই আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কোন সুযোগ দিতে চাই না। পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি ইউজিসির আহ্বান ॥ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বলেছে, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কোন কোন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীগণ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটছে। এহেন কর্মকা- শিক্ষার্থীদের জীবনকে একদিকে যেমন অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে ক্যাম্পাস অশান্ত করে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশের পাশাপাশি দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ অপ্রত্যাশিত অবস্থার দ্রুত অবসানকল্পে বিশ^বিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনকে অধিকতর সচেতনতার সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ইউজিসি আহ্বান জানাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে শ্রেণীকক্ষ হতে শুরু করে প্রতিটি হল ও ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণে ইউজিসি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়সমূহকে আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া কমিশন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট/হাউস টিউটর সার্বক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সজাগ থাকার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি/ডিএসডব্লিউ-কে নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন এ বিষয়ে সহায়তা প্রদান করবে। প্রতিটি হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি র‌্যাগিং ও মাদকবিরোধী প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে বলা হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন প্রয়োজনে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে।
×