ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়ে ও মাকে জবাই করে হত্যা

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

মেয়ে ও মাকে জবাই করে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৩ অক্টোবর ॥ অনাগত ছেলে সন্তান নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনছিলেন পিতা আলামিন। চার বছরের শিশু মেয়ের পর ছেলে আসছে পৃথিবীতে। এ কারণে খুশি আর আনন্দে পুরো পরিবার ছিল আত্মহারা। স্ত্রীর যত্ন নিচ্ছিলেন ভালভাবে। নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পৃথিবীতে সন্তানের আলো দেখার দিনও নির্ধারণ করেছিলেন ডাক্তার। আনন্দে আত্মহারা বাবা তার ছেলের জন্য বেশ কিছু খেলনাও কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু সব স্বপ্ন যেন নিমিষেই বিষাদে পরিণত হলো। স্বপ্নেও ভাবেননি তার জীবনে এমন কিছু অপেক্ষা করছে। মুহূর্তেই সব কিছু তছনছ হয়ে গেল। দুর্বৃত্তরা তার সাড়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লাকী আক্তার ও চার বছরের শিশু মেয়ে হোমাইরা আক্তার আলিফাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে। দুর্বৃত্তরা অনাগত পেটের সন্তানকেও পৈশাচিকভাবে কুপিয়েছে। শনিবার রাত ১২টার দিকে টাঙ্গাইল পৌর শহরের ভাল্লুককান্দী এলাকায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। রাতেই পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যার পর দুর্বৃত্তরা বাড়িতে রাখা বিকাশের ৮ লাখ টাকাও নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বামী আলামিন। এদিকে রবিবার দুপুরে নিহত লাকী আক্তারের পিতা হাসমত বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহতের স্বামী আলামিন জানান, তিনি বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের ব্যবসা করেন। ভাল্লুককান্দি এয়ারপোর্ট রোডে আসাদ মার্কেটে তার দোকান। দোকান থেকে তার বাসায় যেতে হেঁটে প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগে। বাসার এক শ’ গজের মধ্যে কোন বাড়ি নেই। শুধু আলামিনের একটিই বাড়ি। বাড়িতে শুধু আলামিনের স্ত্রী ও মেয়ে আলিফা থাকত। একটি টিনের ঘর ও ছোট্ট একটি রান্নাঘর। বাড়ির সামনে ডোবা। ছোট্ট একটি রাস্তা দিয়ে ওই বাড়িতে যেতে হয়। রাস্তাটি অন্ধকার থাকার কারণে প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করে আলামিন তার স্ত্রীকে মোবাইলে কল দিয়ে বলত, তারপর স্ত্রী লাইট নিয়ে এগিয়ে আসত। প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার রাত ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে আলামিন তার স্ত্রীকে ফোন দেয়। কিন্তু ১০/১২ বার ফোন দিলেও স্ত্রী ফোন ধরেনি। হয়ত ব্যস্ত রয়েছে এমন চিন্তায় সে বাড়িতে চলে আসে। দেখে বাড়ির মুল গেট খোলা। ঢুকেই উঠানে দেখে তার স্ত্রী ও কন্যার বীভৎস লাশ পড়ে রয়েছে। দেখেই সে চিৎকার করে। পরে আশপাশের লোক এসে ভিড় করে। রবিবার সকালে আলামিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা দেয়া। এলাকার শত শত উৎসুক মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করছে। পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহ করছে। বাড়ির উঠানে যেখানে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ রয়েছে। পুলিশ চারদিক ঘিরে রেখেছে। কিছু দূরেই নিহত লাকীর মামা ফেরদৌস হিরার বাড়ি। ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আলামিন বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার করে উঠছেন। অনাগত সন্তানসহ যারা তার স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে বার বার ফাঁসির দাবি জানান। নিহতের চাচা শ^শুর রওশন আলী বলেন, তার ভাতিজা আলামিন প্রায় ১০/১২ বছর ধরে ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের ব্যবসা করেন। প্রায় দুই বছর আগে এখনে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তার স্ত্রী খুবই ভাল ছিল। কি কারণে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটল। তিনি এই হত্যাকারীদের দ্রুত খুঁজে বের করার দাবি জানান। নিহত লাকীর মামা ফেরদৌস হিরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পরিচিত লোকজনই এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। বাড়িতে টাকা রয়েছে যারা জানত তারাই এই কাজ করেছে। আমার ভাগ্নি অত্যন্ত ভাল ছিল। আলামিনের সঙ্গে আমিই বিয়ে দিয়েছিলাম। পেটের সন্তানসহ তিনজনকে এভাবে হত্যার শিকার হতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন জানান, রাতে কে বা কারা তাদের বাড়িতে ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। পরে রবিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকারীদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে। আমরা পারিবারিক পূর্বশত্রুতা, ব্যবসায়িক সমস্যা অথবা অন্য কোন কারণে এই হত্যাকা- ঘটেছে কিনা সব কিছু মাথায় নিয়েই তদন্ত করছি। এদিকে হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে রবিবার সকালে পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম (ডিএসবি), অতিক্তি পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান (সদর সার্কেল), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন (পিবিআই), র‌্যাবের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
×