ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্কের স্থল ও বিমান অভিযান

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১১ অক্টোবর ২০১৯

তুরস্কের স্থল ও বিমান অভিযান

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল কুর্দী মিলিশিয়াদের প্রভাব মুক্ত করতে ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ শুরু করেছে তুরস্ক। তুরস্ক বলেছে, কুর্দীরা সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। তাদের না সরালে সিরিয়া হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই অভিযানের জন্য তুরস্ককে সবুজ সঙ্কেত দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসছে আরব লীগ। বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্স। বৃহস্পতিবার সিরিয়ার ৩০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে কুর্দীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তুর্কী যুদ্ধবিমান। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য কুর্দীদের দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তুরস্কের অভিযান শুরু আগ মুহূর্তে দেশটি সৈন্যদের সরিয়ে নেয়। কুর্দীরা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এতদিন তাদের ব্যবহার করলেও বিপদের মুহূর্তে ফেলে চলে গেছে। সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কুর্দী ওয়াইপিজি গেরিলাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবুজ সঙ্কেত’ দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। বুধবার পিবিএসকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি সিরীয় সীমান্ত নিয়ে আঙ্কারার নিরাপত্তা উদ্বেগকে ‘ন্যায্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুর্দী অধ্যুষিত এলাকার মার্কিন সেনাদের বিপদের বাইরে রাখতেই তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওয়াশিংটনের এ সিদ্ধান্তের পরপরই তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সর্বাত্মক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান বুধবার বলেছেন, সিরিয়ার কুর্দী ওয়াইপিজি মিলিশিয়া এবং জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হুমকি দূর করে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর জন্য একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠন করাই অভিযানের লক্ষ্য। এরদোগান টুইটে বলেন, ‘আমরা চাই দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তজুড়ে সন্ত্রাসীদের করিডোর বন্ধ করে ওই এলাকায় শান্তি ফেরাতে। এতে সিরিয়ার আঞ্চলিক অখ-তা অটুট থাকার পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত হবে।’ কুর্দী নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের এলাকায় জঙ্গী বিমান হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। সীমান্ত শহর রাস আল আইনে কয়েকটি বিস্ফোরণেরও খবর পাওয়া গেছে। তুরস্ক সরকার সীমান্তে কুর্দী মিলিশিয়াদের হটিয়ে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়তে চায়। এই কুর্দী বাহিনীকে তুরস্ক সন্ত্রাসী বলেই গণ্য করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার পর সেখানে তুরস্কের এ অভিযান শুরু হয়। এরদোয়ানের ঘোষণার পর সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) যুক্তরাষ্ট্র এবং আইএসবিরোধী জোটকে ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ঠেকাতে একটি উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা গড়ার অনুরোধ জানিয়েছে। সিরীয় কুর্দী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাহিনী। তারা জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করতে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছে। কিন্তু তুরস্কের অভিযান শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র এ অভিযানে জড়িত হতে চায় না জানিয়ে সিরিয়া থেকে সেনা সরিয়ে নেয়। সিরীয় কুর্দী নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ সেনা প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্তকে পিঠে ছুরি মারার শামিল বলে নিন্দা করেছেন। তাছাড়া, দেশে-বিদেশেও যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তবে এসব সমালোচনার জবাবে ট্রাম্প উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় অভিযানের নামে তুরস্ক ‘সীমার বাইরে’ কিছু করলে তাদের অর্থনীতি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। বুধবার বিমান হামলা চালানোর পাশাপাশি তাদের সেনাবাহিনী ও তুর্কী সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীরা তেল আবায়াদ ও রাস আল-আইনের চারটি পয়েন্ট দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে। ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ অভিযানের প্রথম দিনে তুরস্কের বিমান ও কামান কুর্দীদের ১৮১টি স্থাপনায় আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে আঙ্কারা। হামলায় অন্তত পাঁচ বেসামরিকসহ আটজন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)। কুর্দী নেতৃত্বাধীন এসডিএফ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। তুরস্কের এ অভিযানে পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। পাঁচ ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও পোল্যান্ডের অনুরোধে বৃহস্পতিবার এ অভিযান নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনাও হবে। শনিবার কায়রোতে জরুরী বৈঠক ডেকেছে আরব লীগও। আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সফলতার পর এসডিএফের নিয়ন্ত্রণেই সিরিয়ার বিশাল অংশ রয়েছে।
×