ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জে গ্রেফতার হওয়া আসামীর মৃত্যু, থানায় নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হবিগঞ্জে গ্রেফতার হওয়া আসামীর মৃত্যু, থানায় নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ হবিগঞ্জে ফারুক মিয়া (৪৫) নামে চেক জালিয়াতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীর মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধ্রুমজ্বাল। পরিবারের সদস্যদের দাবী গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে নির্যাতনের কারনেই এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে পুলিশ বলছে, গ্রেফতারের পর আতঙ্কিত ফারুক হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে সদর মডেল থানার এসআই জুয়েল সরকারের নের্তৃত্বে একদল পুলিশ হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার বাসিন্দা ও চেক জালিয়াতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী ওই ফারুককে গ্রেফতারের জন্য গতকাল রবিবার মধ্য রাতে তার বাসা ঘেরাও করে। এসময় ফারুক সীমানা প্রাচীর টপকিয়ে পালানোর সময় তাকে গ্রেফতার করতে সচেস্ট হয় পুলিশ। ফারুককে নিয়ে আসা হয় থানায়। সোমবার ভোর রাত ৪ টার দিকে ফারুক থানা হাজতখানায় বুকে ব্যাথা অনুভব করলে পুলিশ দ্রুত তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এদিকে ফারুকের মৃত্যুর পরপরই তার ছোট ভাই শাহ আলম সহ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ তুলেন, থানা হাজতে এসআই জুয়েল ও তার সহযোগিদের নির্যাতনে ফারুকের মৃত্যু হয়েছে। তারা এও জানান, ফারুকের গায়ে নাকি আঘাতের একাধিক চিন্থ রয়েছে। কিন্তু সদর থানার ওসি মাসুক মিয়া ও অভিযুক্ত এস আই জুয়েলের বক্তব্য, গ্রেফতারের পর ভয়েই সম্ভবত ফারুক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মূলত হার্ট এ্যাটাকেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে কর্তব্যরত ডাক্তার মিথুন রায় মিডিয়া কর্মীদের জানান, অসুস্থ অবস্থায় ফারুককে তাদের কাছে নিয়ে আসে পুলিশ। তারপরই ফারুকের মৃত্যু হয়। কিন্তু ফারুকের গায়ে কোন আঘাতের চিন্থ আদৌ আছে কিনা তা এড়িয়ে যান তিনি সহ একাধিক ডাক্তার। তারা বলছেন, এ বিষয় নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না,তবে ছুরত হাল ও ময়না তদন্তের রির্পোটেই অনেকটা বেরিয়ে আসবে এই মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আঘাতের কোন চিন্থ আছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। ভয়ে হার্ট এ্যাটাক হওয়ায় ফারুকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নের্তৃত্বে ফারুকের মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। যদিও তিনি এই রিপোর্টটে কি কোন আঘাতের চিন্থ ফারুকের দেহে আছে কিনা তা নিয়ে মুখ খুলতে চান নি। তিনি তা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটই বলতে পারবে বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। তবে মৃত ফারুকের হাত সহ একাধিক স্থানে কয়েকটি স্পটের আলামত লক্ষ্য করা গেলেও এসব কি তাৎক্ষনিক কোন আঘাতের চিন্থ কিনা তা এখন পর্যন্ত স্পস্ট নয়। এদিকে সোমবার সকালে ফারুক হত্যার অভিযোগ এনে সদর আধুনিক হাসপাতাল এবং সদর মডেল থানার প্রধান ফটকের কাছে বিক্ষোভ করে সংশ্লিস্ট আত্মীয়-সজ্বন বহু লোক। অন্যদিকে এই মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম-পিপিএম বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম, পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান ও সদর থানার ওসি মোঃ মাসুক মিয়া সহ অন্যান্য পুলিশ কর্তারা। এসময় পুলিশ সুপার ফারুকের মৃতদেহ সরেজমিন খতিয়ে দেখেন এবং শোক হতবিহব্বল ও ক্ষুব্ধ ফারুকের সিনকটজনদেও সান্তনা প্রদান সহ ফাুরুকের মৃত্যু শুধুই হার্ট এ্যাটাক নাকি অভিযোগ অনুযায়ী নির্যাতনের মতো কোন ঘটনা ঘটেছে তা ক্ষতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে এমন আশ্বাস প্রদানের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। সূত্র মতে, পারুকের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়েরের চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে সাংবাদিক সহ উপস্থিত শত শত জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন, নির্যাতনের মতো কোন ঘটনা বেরিয়ে আসলে পুলিশ কাউকেই ছাড় দেবে না। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×