ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক ফুটপাথ দখল করে কাউকে বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না ॥ মেয়র আতিক

‘ক্লিন ঢাকা’ গড়তে আজ থেকে উত্তর সিটির চিরুনি অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  ‘ক্লিন ঢাকা’ গড়তে আজ থেকে উত্তর সিটির চিরুনি অভিযান শুরু

মশিউর রহমান খান ॥ ‘ক্লিন ঢাকা’ স্লোগানে আজ থেকে চিরুনি অভিযানে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ডিএনসিসি। অভিযানে পুনরুদ্ধার করা হবে অবৈধ দখলে থাকা সব রাস্তা ও ফুটপাথ। বাদ পড়বে না চা দোকান, টং ঘর, সীমানার বাইরে ভবনের অতিরিক্ত অংশ, এমনকি যে কোন অস্থায়ী স্থাপনা। সরকার বা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শুরু করে ফুটপাথে গড়ে ওঠা স্থায়ী স্থাপনা চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করা হবে। সুশীল নাগরিক, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই ফুটপাথ ও রাস্তার অবৈধ দখল বন্ধের দায়িত্ব দেয়া হবে। সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে কাউকে কোন বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে ফুটপাথ ও রাস্তা সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করে স্মার্ট ঢাকা গড়ার অংশ হিসেবে ‘ক্লিন ঢাকা’ স্লোগানে এ অভিযান পরিচালিত হবে। ঢাকা উত্তরের কোন রাস্তা ও ফুটপাথ এমনকি কার পাকিং স্থানেও কোন অবৈধ দোকান থাকতে দেয়া হবে না। রাস্তা-ফুটপাথের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোন রাজনৈতিক পরিচয় বা ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। ফলে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। পুলিশ র‌্যাব, এপিবিএন আনসারসহ বেশ কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ‘ক্লিন ঢাকা’ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। প্রাথমিক পর্যায়ে ২ প্লাটুন পুলিশ ও দুজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মাঠে নামবে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত মোঃ আব্দুল হামিদ প্রথম দিনে এ অভিযান শুরু করবেন। পর্যায়ক্রমে সকল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযান পরিচালনার পর দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় পুলিশ দায়িত্ব দেয়া হবে। পুলিশই পরবর্তীতে দখলধারীদের হাত থেকে ফুটপাথ রক্ষা করবে। এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযান পরিচালনার পর পরবর্তী দিন আগের উচ্ছেদ করা সকল স্থাপনা দখলমুক্ত রয়েছে কিনা তা নিয়মিত পরিদর্শন করেই পরবর্তী উচ্ছেদ কাজ শুরু করবে সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পরিদর্শনকালে পূর্বের স্থানে যে কোন প্রকার দখলধারী পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গেই জরিমানা ও শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে জেল বা দ- প্রদান করে আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ডিএনসিসির সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকেই এ অভিযানে নামছে সংস্থাটি। অভিযানে সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের নানা সংস্থার বেহাত হওয়া দখলকৃত জমিও উদ্ধার করবে সংস্থাটি। একেকটি অঞ্চল ধরে পরিচালিত করা হবে অভিযান। একটি অঞ্চলের অভিযান শেষ করার আরেকটি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ দখলমুক্ত করা, জরিমানা আদায় থেকে শুরু করে উচ্ছেদে বাধা দিলে শাস্তি হিসেবে সঙ্গে সঙ্গেই দ- প্রদান করবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই প্রথমবারের মতো কঠোরভাবে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে নামছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, যে এলাকার ফুটপাথে অভিযান পরিচালনা করবে সে এলাকায় আগে থেকেই সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বাস্তব অবস্থা পরিদর্শন করবেন। প্রথমিকভাবে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে রাজধানীর উত্তরাকে বেছে নেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, উত্তরা এলাকার বেশিরভাগ ফুটপাথই অবৈধ দখলে রয়েছে। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ফুটপাথ দখলমুক্ত করলেও কোনক্রমেই তা ধরে রাখতে পারছে না আবার তা দখল হয়ে পড়ছে। এর বাইরে শুধু ফুটপাথে চলার পথ বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামছেন। ফলে রাস্তায় যানবাহন তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এদিকে উত্তরায় চালু হওয়া সার্কুলার বাস চালু করার পর ফুটপাথ দখলে থাকায় ও নাগরিকগণ ছোট রাস্তা হওয়ায় সেখানে বাধার সৃষ্টি হয় তাই বাস চলাচলও কষ্টকর হয়ে পরে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে ফুটপাথকে নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতেই এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। অভিযান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ডিএনসিসি সম্প্রতি ৬ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি করেছে। এ কমিটি তাদের সার্বিক কর্মকা- পরিচালনা ও মনিটরিং করবে। কমিটিতে পুলিশের সদস্য, স্থানীয় কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট জোনের সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, অভিযানের পর যে সব স্থান পুনরায় দখল হবে সে সব স্থানে পুনরায় অভিযান চালানো হবে। একটানা এসব স্থান নজরদারিতে রাখা হবে। অভিযানের জন্য বিশেষভাবে ফুটপাথের ওপর থাকা স্থায়ী কোন স্থাপনা কোনভাবেই থাকতে দেয়া হবে না। এমনকি কোন দোকান, ভবন বা যে কোন প্রকার স্থাপনা যদি অভৈধভাবে ফুটপাথে তাদের সিঁড়ি বা ঢাল নির্মাণ করে তা ভেঙ্গে ফেলা হবে একইসঙ্গে তাদের জরিমানা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে অভিযান চলাকালে অবৈধ দখলদারি ব্যক্তিকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে জানা গেছে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, এবার বিচ্ছিন্নভাবে সারা বছরের ন্যায় ফুটপাথে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে না। একেকটি এলাকা থেকে শতভাগ অবৈধ দখলে থাকা উচ্ছেদ করার পর স্থানীয় নাগরিকগণ যাতে এসব স্থান দখলমুক্ত রাখতে পারেন সেজন্য এলাকবাসীকেও সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নেবে সংস্থাটি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নারী কাউন্সিলর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও দলের পদধারী লোকদের অভিযান পরিচালনার পর যাতে কোন ক্রমেই এসব স্থানে দখল করতে কোন প্রকার স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ না করতে পারে বা অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে বাধা প্রদানের জন্য কাজ করতে তাদের দায়িত্ব প্রদান ও বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করবে বলে জানা গেছে। ক্লিন ঢাকা গঠনে ও তা বহাল রাখতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। ক্লিন ঢাকা বাস্তবায়নে উচ্ছেদের কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্ধারণে সম্প্রতি ডিএনসিসির নগর ভবনে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন খান (ফারুক), ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকেঅভিযানের পূর্বে সড়ক ও ফুটপাথ থেকে অবৈধ দখল অপসারণ, উচ্ছেদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের কৌশল নির্ধারণ, উচ্ছেদ-পরবর্তী স্থানসমূহ অবৈধ দখলমুক্ত রাখা কার্যক্রম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চায়। সড়ক ও ফুটপাথ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ডিএমপি সব ধরনের সহযোগিতা করবে। মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ঢাকা উত্তর সিটিকে একটি ক্লিন সিটিকে রূপান্তর করতে চাই। যেখানে কোন ফুটপাথ অবৈধ দখলে থাকবে না। নাগরিকরা রাস্তায় নির্বিঘেœ চলার পথে কোন প্রকার বাধার সৃষ্টি হবে না। রাস্তায় বা ফুটপাথে কোন অবৈধ স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা থাকবে না। মূলত ঢাকা হবে আধুনিক সচল ও ট্রাফিক জ্যামমুক্ত একটি নিরাপদ শহর। এ লক্ষ্যেই আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে ডেঙ্গু মশা নিধনে চলমান থাকা চিরুনি অভিযানের ন্যায় এই প্রথমবারের মতো ফুটপাথ ও রাস্তায় থাকা সকল অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করতে ‘ক্লিন ঢাকা’ স্লোগানে বিশেষ চিরুনি অভিযানে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘ক্লিন ঢাকা’ স্লোগানে বিশেষ এ অভিযানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা হবে অবৈধ দখলে থাকা সব রাস্তা, ফুটপাথ। এখন থেকে সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে কোন প্রকার বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না। নাগরিকদের কাছেই ফিরিয়ে দেয়া হবে ফুটপাথ তথা চলার পথ। অভিযানে বাদ পড়বে না চা দোকান, টং ঘর, ফুটপাথে সীমানার বাইরে ভবনের অতিরিক্ত অংশ এমনকি যে কোন প্রকার অস্থায়ী স্থাপনা।
×