ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজহংস’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাত্রীদের আস্থা ফেরাতে হবে

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাত্রীদের আস্থা ফেরাতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাত্রীদের আস্থা ও বিশ্বাস ফেরাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে যাত্রীসেবার মান বাড়িয়ে ও ভৌগোলিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে বিমানের যাত্রী বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এত কষ্ট করে, এত অর্থ দিয়ে নতুন প্লেন কিনে দিয়েছি। এর রক্ষণাবেক্ষণ আপনাদের আন্তরিকতার সঙ্গে দেখতে হবে। একইসঙ্গে যাত্রীসেবা- এই যাত্রী সেবার মান; যাত্রীদের আস্থা-বিশ্বাস সেটাও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। আশাকরি, বিমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে নতুন যুক্ত হওয়া বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আরও একটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ (৭৮৭-৮) ‘রাজহংস’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আকাশপথে চলাচলের সময় যেসব রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করতে হবে। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারী অফিসাররা যে যেখানেই যান, বাংলাদেশ বিমানেই যেতে হবে। এভাবেই বিমান হবে বিশ্বমানের। বিমানের রুট বাড়াতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেক বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারব। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পূর্ব-পশ্চিমের একটা সেতুবন্ধন হিসেবে আমরা কাজ করতে পারি। আমরা সেভাবেই দেশটাকে গড়ে তুলতে পারি। তিনি বলেন, এবারের হজ ফ্লাইট নির্ঝঞ্ঝাট হয়েছে। একইভাবে অন্য জায়গায় যারা যাবেন আমাদের যাত্রীরা তারাও যেন ভালভাবে যাতায়াত করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোয়িং হচ্ছে আমেরিকান প্লেন। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আছে। বোয়িং যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে না যায়, এটা তো তাদেরই (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) মান-সম্মানের ব্যাপার। আশাকরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আমরা ভবিষ্যতে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারব, ড্রিমলাইনার নিয়েই আমরা যেতে পারব। লন্ডনে বিমানের আরও দুটো স্লট নেয়ার চেষ্টা করছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিমানের নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় আমি বিরোধী দলে ছিলাম। খুব বেশি করার ক্ষমতা আমার ছিল না। বিদেশ যাওয়ার সময় বাংলাদেশ বিমান ব্যবহার করতাম। তখন দেখতাম বিমানগুলো ছিল ঝরঝরা। ছাদ ফুটো ছিল, পানি পড়ত। টিস্যু গুঁজে পানি পড়া থামাতে হতো। এখন সেই অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, আগে ঢাকায় একধরনের ঝরঝরে বাস চলতো। আমরা এই বাসগুলোকে বলতাম মুড়ির টিন। তখন বিমানের অবস্থাও ছিল এই মুড়ির টিনের মতো। এখন আর বিমানের আগের অবস্থা নেই। এখন বিমানে উঠলে গর্বে বুক ভরে যায়। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে প্রথমে পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। বিমানের উন্নয়নে তখন খুব বেশি কিছু করতে পারিনি। কারণ টাকা-পয়সার ব্যাপার ছিল। এখন আমাদের যে রিজার্ভ রয়েছে, সেখান থেকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই আরও দুটি উন্নতমানের বিমান কিনতে পারব। আমাদের সেই পরিকল্পনা রয়েছে। বিমানের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিনবছর সময় পেয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গুছিয়ে আনতে শুরু করেছিলেন। আজকে বিমানের যে লোগো সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনসহ অন্য চিত্র শিল্পীদের নিয়ে কমিটি করে দিয়েছিলেন। সেখানেই লোগো চূড়ান্ত করা হয়। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই, এত অল্প সময়ের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কীভাবে এত অগ্রগতি অর্জন করলেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সুখবর জানিয়ে বলেন, আমরা দুটো কার্গো বিমান কিনব এবং কার্গো ভিলেজ করে দেব। কারণ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। রফতানি বাড়ানোর জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেব। বাংলাদেশকে আরও উন্নত দেশ করতে আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ সব বিমানবন্দর আরও উন্নত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, এত কষ্ট করে যে বিমান কিনে দিয়েছি, সেটার যাতে যতœ হয়, নষ্ট না হয়- তা সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দশটি ড্রিমলাইনার বিমান রয়েছে। প্রতিটি ড্রিমলাইনারের নাম আমি দিয়েছি, যাতে বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে সবাই পরিচিত হতে পারেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও তাদের মূল্যস্ফীতি বেশি হয়। কিন্তু আমরা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি অনেক কমে ধরে রাখতে পেরেছি। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগসহ আমাদের অনেক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তারপরও আমরা দেশে চমৎকার একটা পরিবেশ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। সরকার প্রধান আরও বলেন, আমরা তিনটা ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান এনেছি। অত্যাধুনিক ৭৮৭-৮ বিমান এনেছি চারটা। ড্যাশ বোম্বার্ডিয়ার আসছে আরও তিনটা। আমরা খবর পেয়েছি বোয়িং আরও দুটি বিমান বিক্রি করবে। এখন পর্যন্ত কেউ অর্ডার দেয়নি। সুযোগটা আমরা নেব। আমাদের রিজার্ভ মানি যথেষ্ট ভাল অবস্থায় আছে। আমার মনে হয় কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ আমাদের আছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এদেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। ভাষণের পর প্রধানমন্ত্রী ফিতা ও কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান রাজহংসের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী অত্যাধুনিক বিমান রাজহংসের ভেতরে যান, ককপিটসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। বিমানের পাইলট ও ক্রুদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমানের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) মোহাম্মদ ইনামুল বারী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, বিমান সচিব মহিবুল হক, বিমানের এমডি মোকাব্বের হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আল রবার্ট মিলার, সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, অত্যাধুনিক এ উড়োজাহাজটির যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল চারটিতে। ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাঙালী সংস্কৃতিকে ধারণ করে রাখা ১০টি বিমানের নাম- পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্খী, আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস। প্রতিটি উড়োজাহাজের নামই দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০টি প্লেনের মধ্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
×