ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে আখের উৎপাদন কমে গেছে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরিশালে আখের উৎপাদন কমে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ আখ কিংবা ইক্ষু আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় অর্থকারি ফসল। বলা হয় চিনি উৎপাদনের মূল ফসল। আখের রসে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন বিদ্যমান। পরিপক্ক আখে শতকরা ৮০ ভাগ পানি, ৮-১৬ ভাগ সুক্রোজ, ০.৫-২ ভাগ রিডিউসিং সুগার এবং ০.৫-১ নন সুগার থাকে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে আখ উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব ও আখ চাষে প্রচুর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আখ চাষীরা চরম অর্থ সংকটে পরেছেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ না পেয়ে সম্ভাবনাময় আখ চাষ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বরিশালের আখ চাষীরা। নানাপ্রতিকূলতার মাঝেও দীর্ঘদিন থেকে আখ চাষ করে আসছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কেশবকাঠী, মশাং, চকমান, হারতাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অর্ধশতাধিক চাষী। পূর্বে আখ চাষ করে এসব এলাকার চাষীরা স্বাবলম্বী হলেও বর্তমানে আখের চারা ও কৃষানের মূল্য বৃদ্ধি এবং সার-কীটনাশকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষীরা মহাবিপাকে পরেছেন। এ ব্যাপারে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বরিশালের একমাত্র বৃক্ষ প্রেমী ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে যখন বিজ্ঞানীরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন পরিবর্তন সহিষ্ণু ফসল, সেখানে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন সহিষ্ণু ফসল হচ্ছে আখ। আখের রস যেমন পুষ্টিকর, আখের চাষও তেমনি লাভজনক। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হচ্ছে এলাকাভিত্তিক আখের জাত নির্বাচন করে তার ভালো বীজের সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এটা করতে পারলেই আখ চাষ সম্প্রসারণ করা অনেক সহজ হবে। কারণ আখ সম্প্রসারণের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ভালো বীজের অভাব। তিনি আরও বলেন, আখ চাষের উপকরণ, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি জ্ঞান এবং উৎপাদিত কাঁচামালের বাজার সবই আমাদের দেশেই যথেষ্ট ভালো রয়েছে। তাই দেশের যেকোন এলাকায় আখ চাষে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। আর এটা করতে পারলেই দেশের চিনি ও গুড় এর জোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনেও যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, আখ চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সহজেই সম্ভব। শুধু এ বিষয়ে আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের তৎপরতা দরকার। কারণ আখ চাষ নিয়ে কথা বলার জন্য সাধারণত কেউ থাকেনা। তাই আখ চাষ করে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় তা অনেকেরই অজানা। আখ এমন একটি ফসল যার রোপণকাল থেকে পরিপক্কতা পর্যন্ত ১০ থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ সময়ে বিভিন্ন পরিচর্যার ওপর আখের সঠিক বৃদ্ধি ও গড় উৎপাদন নির্ভর করে। আখের পরিচর্যা শ্রমিক নির্ভরশীল বিধায় আখ চাষের মাধ্যমে কৃষি শ্রমিকদের সারাবছর কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। এক হেক্টর আখের জমি লাগানো থেকে পরিপক্ক করে কাটা পর্যন্ত প্রায় ৬০০ শ্রমিক দিবসের প্রয়োজন হয়। অন্য কোন ফসল আবাদের জন্য এতো শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ফলে দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা যেখানে কৃষি শ্রমিকদের কাজ ধান চাষের উপর নির্ভরশীল, আগস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তারা (কৃষি শ্রমিকরা) কাজের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করে, সেখানে আখ চাষের মাধ্যমে বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। তেমনি উৎপাদিত আখ, গুড় উৎপাদনে ব্যবহার করে চিনিকলের ওপর চাঁপ কমানোর মাধ্যমে গুড় শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে দেশের চিনি ও গুড়ের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখা সম্ভব। এতে গুড় শিল্পে মানুষের কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে চিনি আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বাঁচানোও সম্ভব হবে। বরিশালের প্রান্তিক চাষীদের একমাত্র কৃষক বন্ধু উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, আখ ফসলের কোন অংশই ফেলনা নয়। আখ ক্ষেত পরিচর্যাকালীন যেসব শুকনো পাতা ও মরাগাছ মাঠ থেকে অপসারণ করা হয় তা বিক্রি করে আখ চাষিরা কিছু নগদ অর্থ উপার্জন করতে পারে। কারণ বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। আখ চাষের মাধ্যমে প্রয়োজনের সময় এসব জ্বালানির জোগান পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও আখ কাটার সময় আখের যে তাজা পাতা পাওয়া যায় গবাদিপশুর জন্য তা সবচেয়ে উপযোগী খাবার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আখের পাতা খাওয়ানোর ফলে গবাদি পশুর দুধের পরিমাণ বেড়ে যায়।
×