ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নজিবুল্লাহর ব্যাটিং ঝড়ে হেরে গেল জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নজিবুল্লাহর ব্যাটিং ঝড়ে হেরে গেল জিম্বাবুইয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টি২০তে ব্যাটিং ঝড় দেখতে চাওয়া হয়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার সেই ঝড় তুললেন নজিবুল্লাহ জাদরান। তাতে ল-ভ- হয়ে গেল জিম্বাবুইয়ে। ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার পর শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংস উপহার দেন নজিবুল্লাহ। তার এই ব্যাটিং ঝড়ে উড়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। ২৮ রানে হারে। ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে আফগানিস্তান শুভ সূচনা করে। জিম্বাবুইয়ে টানা দুই ম্যাচে হারে। নজিবুল্লাহর অসাধারণ ইনিংসের সঙ্গে মোহাম্মদ নবীর (৩৮) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯৭ রান করে আফগানিস্তান। ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজও ৪৩ রান করেন। জিম্বাবুইয়ের সামনে জিততে ১৯৮ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় আফগানরা। এত বড় টার্গেট সামনে পড়াতেই আসলে জিম্বাবুইয়ের হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৯ রান করে জিম্বাবুইয়ে। রেগিস চাকাবভা ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। দলের ২৫ রানেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (৩) রান আউট হওয়ার পর ৫ রান যোগ হতেই ব্রেন্ডন টেইলরও (২৭) সাজঘরে ফিরেন। ফরিদ আহমেদের গতির সামনে তো শন উইলিয়ামসও টিকতে পারেননি। ক্রেইগ আরভিন (১০) আসলেন আর গেলেন। ৪৪ রানেই ৪ উইকেট খতম। এরপর টিনোটেন্ডা মুতোম্বদজি ও রায়ান বার্ল মিলে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ২০ রানের বেশি করতে পারেননি মুতোম্বদজি। দলের ৮১ রানের সময় রশীদ খানের ঘূর্ণিতে কাত হন। কিছুক্ষণের মধ্যে বার্লকেও (২৫) সাজঘরে পাঠান রশীদ। ১০০ রান হতে ৪ রান বাকি থাকতেই ৬ উইকেট শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ের। চাকাবভা ও মাদজিভা শেষ পর্যন্ত দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। দুইজন মিলে সুন্দর ব্যাটিং করতে থাকেন। ১৭তম ওভারে গিয়ে করিম জানাতের ওভারে দুই ছক্কা, এক চারও হাঁকান চাকাবভা। ৯৬ রান থেকে চাকাবভা ও মাদজিভা দলকে ১৪১ রানেও নিয়ে যান। এমন সময় মাদজিভাকে (১৫) আউট করে দেন গুলবাদিন নাইব। ৪৫ রানের পর আর এই জুটি এগিয়ে যেতে পারেনি। চাকাভা শেষ পর্যন্ত ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। কাইল জার্ভিস অপরাজিত ১৫ রান করেন। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুইয়ে। ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে নেমে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। আরেকপাশ আগলে রাখার চেষ্টা করে যান হযরতুল্লাহ জাজাই। দুইজন মিলে দলকে ষষ্ঠ ওভারেই ৫০ রানে নিয়ে যান। এই ওভারেই আবার আউট হয়ে যান জাজাই (১৩)। আফগানিস্তানের ৫৭ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পরও জিম্বাবুইয়ে শিবিরে স্বস্তি আসেনি। জাজাই আউট হলেও গুরবাজ যে ব্যাটিংয়ে থাকেন। তাকে শন উইলিয়ামস এলবিডব্লিউ করে স্বস্তি ফেরান। আর ৩ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই গুরবাজ (৪৩) রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন গুরবাজ, ২৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কাতেই ৪৩ রান করে ফেলেছিলেন। তার আউটের পর যেন জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। জিম্বাবুইয়ে স্পিনাররা আফগান ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন। ফলও দ্রুতই মিলে। নজিব তারাকাইকে (১৪) আউট করে দেন উইলিয়ামসন। আসগর আফগানও (১৪) খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। এইনস্লে এনডিলোভুর স্পিন ঘূর্ণিতে ক্যাচ আউট হয়ে যান। ৯০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে আফগানিস্তান। নজিবুল্লাহ জাদরান ব্যাটিংয়ে নেমেই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। যে লোভুর স্পিনে আউট হন আসগর, তার বোলিংয়েই ছক্কা-চার হাঁকান জাদরান। ১৪তম ওভারে গিয়ে ১০০ রানও স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। নজিবুল্লাহর চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন যেন মোহাম্মদ নবী। ১৭তম ওভারে পেসার চাতারা বোলিং করতে আসেন। তৃতীয় বল থেকে টানা চারটি ছক্কা হাঁকান নবী। পরের ওভারে বোলিং করতে আসেন পেসার মাদজিভা। প্রথম তিন বলেই নজিবুল্øাহ ছক্কা হাঁকান। দুইজন মিলে টানা সাত বলে সাত ছক্কা হাঁকান। ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২২ বলেই হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন নজিবুল্লাহ। নজিবুল্লাহ ও নবী মিলে এমনই ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন, ১৫ ওভারে যেখানে আফগানিস্তান ১০৯ রানে ছিল, পরের তিন ওভারেই ১৭৪ রানে চলে যায়। স্পিনাররা যে ভিত গড়ে দেন, পেসাররা বোলিং করতে এসেই হতাশায় ডুবিয়ে দেন। শেষ ৫ ওভারেই ৮৮ রান যোগ হয়ে যায়। ১৪তম ওভারে গিয়ে ১০০ রান হয়। সেখান থেকে শেষ ৬ ওভারে ৯৬ রান হয়। ৯০ রানেই ৪ উইকেট পড়ার পর নজিবুল্লাহ ও নবী মিলে এমন ব্যাটিংই প্রদর্শন করেন, টি২০’র আমেজ কি তা বুঝিয়ে দেন। দুইজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ১০৭ রানের জুটি গড়েন। নজিবুল্লাহ শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৬৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে নবীর ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৪ ছক্কায় ৩৮ রান। তবে নজিবুল্লাহ-নবীর ব্যাটিং দেখে আফগানিস্তান যে অনায়াসেই ২০০ রান করবে তা বোঝা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। ১৯৮ রানের টার্গেট জিম্বাবুইয়ের সামনে পড়ে। অনেক বড় টার্গেটই দাঁড় হয়। এই টার্গেট অতিক্রম করতে না পেরে হারে জিম্বাবুইয়ে। নজিবুল্লাহর ব্যাটিং ঝড়ে উড়ে যায় জিম্বাবুইয়ে।
×